প্রশিক্ষণ নিন, চাকরির যোগ্য হোন

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর অনেক তরুণ চাকরি পান না। বেশির ভাগেরই চাকরি পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞানে অভিজ্ঞরাই চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে খানিকটা এগিয়ে থাকেন। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে তরুণদের চাকরির সম্ভাবনা বেশ ভালো। তাই তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে ‘ফাস্ট ট্রাক ফিউচার লিডার’ নামের একটি কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে চার হাজার তরুণ তিন মাস করে প্রশিক্ষণ পাবেন। এলআইসিটি নামের এই কর্মসূচিতে অর্থয়ান করছে বিশ্বব্যাংক। আর তা বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল। এরই মধ্যে চার হাজার তরুণকে ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এ বছরের মে মাসে প্রথম ব্যাচে ১৪৮ জন এই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ব্যাচে নিচ্ছেন ১২০ জন। এই প্রক্রিয়া চলবে। আপনিও এই প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে চাকরির বাজারে আরও যোগ্য করে তুলতে পারেন।
এই প্রশিক্ষণের সুবিধা
এই কর্মসূচির পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, পড়ালেখা শেষ করা তরুণদের চাকরি পাওয়া পর্যন্ত যে যোগ্যতা দরকার, তা শেখানো হয় এখানে। একটি নতুন ব্যাচ শুরু করার আগে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) ও সংশ্লিষ্ট আইটি বিভিন্ন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলা হয়। তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের চাহিদা পাওয়ার পর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে প্রশিক্ষণের পর চাকরি পাওয়া সহজ। তিনি জানান, প্রথম ধাপে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৮০ জনের আইসিটি সেক্টরে চাকরি হয়েছে। এ ছাড়া অন্যদের চাকরি নিশ্চিত করার জন্য তাঁরা আইটি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পৃক্ত করে চাকরি মেলার আয়োজন করছেন।
প্রথম ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন নাঈমা নাশিত। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেন গত বছর। এরপর এই প্রশিক্ষণ নেন। এখন দোহাটেক নিউ মিডিয়ায় মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ পদে চাকরি করছেন। তিনি বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণে দলগত কাজ করার শিক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি আইটির নানা বিষয়ে কার্যকর শিক্ষা পেয়েছি, যা চাকরি পেতে সহায়ক হয়েছে।’
প্রশিক্ষণের যোগ্যতা
প্রশিক্ষণটি তরুণনির্ভর। মেয়েদের অগ্রাধিকার রয়েছে। প্রশিক্ষণে আবেদনকারীর বয়স হতে হবে সর্বোচ্চ ৩৫ বছর। শিক্ষার্থী বা চাকরি করছেন এমন কেউ আবেদন করতে পারবেন না। দুইভাবে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এক. আইটি সার্ভিসেস (আইটিএস) সিএসই বা আইটি স্নাতক অথবা প্রোগ্রামিংয়ে অভিজ্ঞ বিজ্ঞানে স্নাতক। দুই. আইটি এনাবলড সার্ভিসেস (আইটিইএস) কম্পিউটারে পারদর্শী যেকোনো বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর।
প্রশিক্ষণের প্রক্রিয়া
প্রশিক্ষণ নিতে প্রথী৴রা এলআইসিটি প্রকল্পের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ( www.lict.gov.bd) গিয়ে আবেদন করতে পারেন। অনলাইনে আবেদনের ভিত্তিতে বাছাই করে লিখিত পরীক্ষায় ডাকা হয়। লিখিত পরীক্ষা হয় অনলাইনে। প্রার্থী তাঁর সুবিধা অনুযায়ী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও ফরিদপুরের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল কার্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারেন। এমসিকিউ পদ্ধতিতে লিখিত পরীক্ষা হবে ৬০ নম্বরের। এক ঘণ্টার এই পরীক্ষায় ৪০ নম্বর থাকবে কম্পিউটার, ইংরেজি, গণিত ও চিন্তামূলক মৌলিক জ্ঞানের ওপর এবং বাকি ২০ নম্বর থাকবে মৌলিক জ্ঞানর ওপর। লিখিত পরীক্ষায় প্রথী৴দের ৪০ নম্বরের দলভিত্তিক মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। বছরে তিনবার পত্রিকায় ও এলআইসিটির ওয়েবসাইটে এই প্রশিক্ষণের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। পরবর্তী প্রশিক্ষণের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে আগামী বছরের মার্চ মাসে।
প্রশিক্ষণ যেভাবে
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর তরুণদের নানা ধরনের আচরণগত জ্ঞানের অভাব থাকে। এ জন্য প্রথমে প্রশিক্ষণার্থীদের এক মাসের আবাসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে শরীরচর্চা, আচরণগত দক্ষতা, নিয়মশৃঙ্খলা, কম্পিউটাবিষয়ক নানা জ্ঞান, ইন্টারনেট ব্যবহার ইত্যাদি জ্ঞান দেওয়া হয়। এ সময় প্রশিক্ষণার্থীদের থাকা-খাওয়ার খরচ প্রকল্প থেকে বহন করা হয়। আবাসিক প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকায় অথবা বিভাগীয় শহরে দুই মাস বিশেষায়িত প্রযুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। যাঁদের যে সেক্টরের জন্য বাছাই করা হয়, তাঁদের সেই সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
যোগাযোগ
এলআইসিটি প্রকল্প, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, আগারগাঁও, ঢাকা। ওয়েবসাইট: www.lict.gov.bd
ফোন: ০১৭৯৫০৯০৪১৫ ও 0১৯৫৪৮৫৫৭৯৮