
বাড়িতেও কখনো কখনো ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। তাই বাড়িতে গরম পানি, আগুন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ধারালো জিনিস ব্যবহার ও সংরক্ষণে সতর্ক তো থাকতেই হবে, পাশাপাশি আকস্মিক দুর্ঘটনা ঘটে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার উপকরণ হাতের কাছে থাকা ভালো। ছোট একটি বাক্সে এসব গুছিয়ে রাখতে পারেন, যা পরিচিত ‘ফার্স্ট এইড বক্স’ নামে। বাক্সটি রাখতে হবে হাতের নাগালে। তবে শিশুদের নাগাল থেকে বাঁচাতে একটু উঁচু স্থান বেছে নিন।
ফার্স্ট এইড বক্সে যা থাকবে
*অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ (যেমন স্যাভলন, ডেটল, পোভিডন আয়োডিন দ্রবণ)।
*অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম।
*তুলা, গজ, কাঁচি।
*ব্যান্ডেজ (ছোট ব্যান্ডেজের স্ট্রিপ কিনতে পাওয়া যায়)।
*মাইক্রোপোর (সাদা রঙের পাতলা একটি জিনিস, যা স্কচটেপের মতো আটকানো যায়)।
*দুটি তিন কোণা বড় কাপড়।
*মাঝারি আকারের কাপড়।
*বেশ কয়েক প্যাকেট খাওয়ার স্যালাইন।
*প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ।
*পোড়া জায়গায় ÿলাগানোর মলম (যেমন সিলভার সালফাডায়াজিন ১% ক্রিম, যা শুধু বাহ্যিক ব্যবহার্য)।
*থার্মোমিটার।
*ক্রেপ ব্যান্ডেজ।
এ ছাড়া স্টেথোস্কোপ ও রক্তচাপ মাপার যন্ত্র রাখা যেতে পারে।
আরও যা কাজে লাগে
*পানি *বরফ *মাঝারি আকারের শক্ত কাঠ *চিনি বা গ্লুকোজ।
হঠাৎ কেটে গেলে
ছোট ও অগভীর স্থান থেকে রক্তপাত তেমন হয় না। রক্তপাত হলে ক্ষতস্থানটি চাপ দিয়ে ধরে রাখুন। আক্রান্ত স্থানটি এমনভাবে রাখুন, যেন তা হৃৎপিণ্ডের অবস্থান থেকে একটু উঁচুতে থাকে। বেশি নড়াচড়া করলে রক্তপাত বাড়তে পারে। রক্তপাত বন্ধ হলে পরিষ্কার তুলা বা গজের সাহায্যে অ্যান্টিসেপটিক দ্রবণ দিয়ে ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে নিন। এরপর ব্যান্ডেজ করে রাখুন। বেশি রক্তপাত হলে বা ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়লে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।
উত্তাপে দুর্ঘটনা
ত্বকে গরম পানি পড়লে, কোনো কিছুর ছ্যাঁকা বা গরম ভাপ লাগলে আক্রান্ত স্থানটি কলের পানির নিচে রাখুন অন্তত আধা ঘণ্টা। এরপর মলম বেশ পুরু করে লাগিয়ে রাখুন আক্রান্ত স্থানে। অনাক্রান্ত চামড়ায় এ মলম লাগাবেন না। এভাবে সারা দিনে দু-তিনবার মলম লাগিয়ে রাখুন। তবে গোসলের সময় মলমের স্তর ধুয়ে ফেলে সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে ভুলবেন না।
হঠাৎ আঘাত
হঠাৎ ব্যথা পেলে আক্রান্ত স্থান বরফ বা ঠান্ডা পানির বোতল দিয়ে চেপে ধরতে পারেন। তবে এগুলো সরাসরি প্রয়োগ করবেন না, পরিষ্কার কাপড়ে পেঁচিয়ে নিয়ে ব্যবহার করুন। এরপর প্যারাসিটামল ওষুধ সেবন করতে পারেন।
শারীরিক অসুস্থতায়
জ্বর এলে প্রথমেই জ্বর মেপে নিন। তাপমাত্রা কত পেলেন এবং তা কোন সময়ে মেপেছেন, এ তথ্যগুলো লিখে রাখাই সবচেয়ে ভালো; পরবর্তী সময়ে কাজে লাগতে পারে। হালকা গরম পানি দিয়ে শরীর-মাথা মুছে নিন। সম্ভব হলে হালকা গরম পানিতে গোসল করে নিন। এসবের পরও জ্বর না কমলে প্যারাসিটামল ওষুধ সেবন করুন।
দামদর
প্রাথমিক চিকিৎসার উপকরণ ওষুধের দোকানগুলোতে খুঁজলে পেয়ে যাবেন সহজেই। তুলা পাবেন ২০-১৬০ টাকার মধ্যে। প্রতিটি গজের মূল্য পড়বে ২০ টাকার মতো। ক্রেপ ব্যান্ডেজ পাবেন ২০-৬০ টাকায়। আকারভেদে মাইক্রোপোরের দাম ১০০ টাকার মধ্যে। অ্যান্টি সেপটিক দ্রবণ বা ক্রিমের দাম ২০-৬০ টাকা। পোড়া তেল মলমের দাম ৩৫-৪০ টাকা। থার্মোমিটার পাবেন ৩০-৫০ টাকায়।
লেখক: চিকিৎসক