প্রিন্স ফিলিপের স্টাইল
সদ্য প্রয়াত ডিউক অব এডিনবার্গ প্রিন্স ফিলিপের ব্যক্তিগত সাজ–পোশাক সবসময়ই রুচিশীলতার প্রকাশ দিয়েছে। তুলে ধরেছে আধুনিক ও পুরানো– দুটোরই আভিজাতিক মেলবন্ধন।
ফ্যাশন ও স্টাইলের সংজ্ঞা বহুবার নির্ধারণ করেছে বিশ্ব। আর এই সংজ্ঞার সঙ্গে হরহামেশাই উদাহরণ হিসেবে উঠে আসেন ব্রিটেনের রাজপরিবারের সদস্যরা। সদ্য প্রয়াত ডিউক অব এডিনবার্গ প্রিন্স ফিলিপও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। আভিজাত্য ও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাঁর ফ্যাশন স্টাইলে উপযুক্ততার ব্যাপারটি সব সময় ছিল লক্ষ করার মতো। অর্থাৎ স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনায় মানানসই পোশাক বেছে নিতেন রাজকুমার। এই রাজকুমারের ফ্যাশন ও স্টাইল নিয়েই এ লেখা।
কর্মক্ষেত্রের পোশাকেও চৌকস
১৯৪৭ সালেই রানি এলিজাবেথের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন প্রিন্স ফিলিপ। তখন তিনি মাল্টায় রয়েল নেভির কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তাই হানিমুনের অনেকাংশেই তাঁকে দেখা যায় ইউনিফর্মে। উপযুক্ত পোশাক বেছে নেওয়ার দারুণ রুচি ছিল প্রিন্স ফিলিপের। সেই সঙ্গে চৌকস চেহারা আর আভিজাত্যের ছাপ মিলিয়ে নেভি ব্লু ইউনিফর্মেও নজর কেড়েছিলেন তিনি।
চেক শার্টে মেট
রানি এলিজাবেথের সম্মানে অন্টারিওর রিড্যোও হলে ১৯৫১ সালে আয়োজিত হয়েছিল এক ঐতিহ্যবাহী লোকজ উৎসব। রানির সঙ্গে সেখানে রাজকুমার ফিলিপ উপস্থিত হয়েছিলেন উৎসবের থিমের সঙ্গে মানানসই পোশাক পরেই। তাঁর পরনে ছিল চেক শার্ট, ব্যাগি ডেনিম প্যান্ট আর গলায় বেঁধেছিলেন আমেরিকান কাউবয়দের মতো রঙিন রুমাল বা নেকার চিফ।
স্যুট–টাইয়ে ফিটফাট
স্যুট-টাই প্রিন্স ফিলিপের নিত্যদিনের পোশাকের মধ্যে ছিল বেশ উল্লেখযোগ্য। রাজপ্রাসাদের অনুমোদিত ডিজাইনারদের মধ্য থেকে অনেকেই তাঁর জন্য স্যুট বানাতেন। তবে ফিটিংয়ের কাজে বেশির ভাগ সময়ই দায়িত্ব পেতেন তাঁর দীর্ঘদিনের টেইলর জন কেন্ট। ডাবল ব্রেস্টেড কাটের স্যুট অনেকটা সময়জুড়েই প্রিন্সের স্টাইলের তালিকার শুরুর দিকে ছিল। ছবির মতো পাউডার গ্রে রঙের পাশাপাশি তিনি প্রায়ই বেছে নিতেন ম্যারিয়ান ব্লু, পেরিউইংকেল বা নারকেল-সাদারঙা স্যুট। ক্লাব টাই ছিল তাঁর ব্যবহৃত অনুষঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম। চুলের সাজের ক্ষেত্রেও রুচি ও আভিজাত্যের ছাপ ছিল সুস্পষ্ট। ছবিতে যেমন দেখা যায়, পোশাকের রং ও স্নিগ্ধ আবেশের সঙ্গে মানিয়ে রাজকুমারের চুল ঠিক করা হয়েছে।
লন্ডন বিমানবন্দর, ১৯৫১
প্রিন্স ফিলিপের সদ্য বিমান থেকে নামা বেশভূষায়ও ছিল ছিমছাম রুচি আর আভিজাত্যের উপস্থিতি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে নাইরোবি থেকে ফিরে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন লন্ডন বিমানবন্দরে (বর্তমানে হিথরো বিমানবন্দর)। ট্যুইড নামের একধরনের পশমি কাপড়ের টু-পিস স্যুট পরেছেন রাজকুমার। সঙ্গে রয়েছে কলেজিয়েট স্ট্রাইপ আঁকা টাই।
সাদা–কালোয় অভিনব
দীর্ঘকায় ছিলেন বলেই হয়তো প্রিন্স ফিলিপকে দারুণ মানিয়ে যেত হাই-ওয়েস্টেড ট্রাউজার। ১৯৫৫ সালে উইন্ডসর কাপ জেতার প্রাক্কালে রাজকুমারের পরনে ছিল সাদা রঙের স্ল্যাক প্যান্ট আর উইন্ডসর পার্ক পোলো দলের ইউনিফর্ম। তাতেই দারুণ লাগছিল বিজয়ী ডিউক অব এডিনবার্গকে।
রুচিশীল সবসময়
স্যুট-টাইতেই যে শুধু স্বাচ্ছন্দ্য ছিলেন প্রিন্স ফিলিপ, তা কিন্তু নয়; ছবিতে দেখুন, দুটো ভিন্ন কাপড়ের তৈরি ট্রাউজার আর জ্যাকেটেও কী অভিজাত লাগছে তাঁকে! পকেট স্কয়ার হিসেবে ব্যবহৃত রুমালটি থেকে শুরু করে সানগ্লাস কিংবা ক্লাব টাই—এমনকি জলপাইরঙা ল্যান্ড রোভার—সবই সদ্য প্রয়াত রাজকুমারের পরিশীলিত রুচির সঙ্গে একদম ঠিকঠাক মানিয়ে গিয়েছে।
আভিজাতিক ফিলিপ
স্যুট-টাইয়ের সঙ্গে যে টপ হ্যাট এমন মানিয়ে যাবে, তা আর কে জানত! ভালো করে খেয়াল করুন, টুপির রংটি কিন্তু কোট বা ওয়েস্টকোটের সঙ্গে তেমন মেলেওনি। তবু ‘পারফেক্টলি ফিটেড’ স্যুটের সঙ্গে এক শেড হালকা রঙের টপ হ্যাটে প্রিন্স ফিলিপকে লাগছিল রাজকুমারের মতোই। আনুষ্ঠানিক টেইলরিংয়ের যথার্থ উদাহরণ হিসেবে বহুদিন রয়ে যাবে রাজকুমারের এই সাজ।
আভিজাত্য আর বাহুল্যকে মিলিয়ে ফেলেননি রাজকুমার ফিলিপ। ছোট্ট একটি উদাহরণ এ কথা আরও দারুণভাবে প্রমাণ করবে। রাজপরিবারের অন্য সদস্যদের মতো সুইস ঘড়ি নয়, বরং তাঁর সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিল ‘ব্রাউন লেদার স্ট্র্যাপ’যুক্ত একটি সাধারণ হাতঘড়ি। আর এমন ছিমছাম রুচিতেও নিজের আভিজাত্য ও দৃঢ়তা যথার্থভাবে তুলে ধরেছিলেন তিনি। বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন সাময়িকী জিকিউয়ের সাবেক সম্পাদক ডিলান জোনস তাই সদ্য প্রয়াত রাজকুমারের রুচির প্রশংসা করে বলেন, ‘পোশাকে ভদ্রতার চর্চা করতেন প্রিন্স ফিলিপ। তিনি জানতেন কী পরা শোভন, কী পরা সমীচীন।’