
কীইবা ক্ষতি হতো যদি সারাটি জীবন ছোট্টটি থেকে যেতাম! যখন তখন ছোটবেলার মতো আম্মু তোমার কোলে মুখ লুকাতাম, আব্বুর কাছে চিরকুট লিখতাম নদীর পাড়ে ঘুরতে না নিলে কথা বলব না। চিঠি এখনো লিখি তোমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে মনে মনে।
যেদিন নিজেকে ক্ষমা করতে পারব সেদিন আর মনে মনে লিখব না। তোমাদের কাছ থেকে দূরে এই যান্ত্রিক নগরে ভীষণ একলা একা এই আমি। মাধ্যমিক শেষ হওয়ার পরই বাড়ি থেকে দূরে যেতে হলো এই পাগলী ভীষণ আবেগী মেয়েটাকে। বালিশ আর হোস্টেলের বারান্দা তোমাদের জন্য কান্নার সাক্ষী। এর আগে তোমাদের ছেড়ে একদিনও থাকিনি যে!
উচ্চ মাধ্যমিকের পর তো পঞ্চাশ কিলোমিটারের দূরত্বটা প্রায় চারশতে ঠেকল। আস্তে আস্তে প্রতিদিনের কান্নাটা গিলে ফেললেও বুকের জ্বলুনিটা বাড়ল। একসময় এতেই অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। চাইলেই যখন-তখন ছুটে যেতে পারি না তোমাদের কাছে। প্রতিটা মুহূর্তে মায়ের কোলে শুয়ে থাকা আর অফিস থেকে ফিরে মাথায় বাবার হাত রাখাটা খুব মিস করি। তোমাদের যে বড্ড বেশি ভালোবাসি। আব্বু তোমার অসুস্থতার কারণে গত বছরের প্রায় এগারো মাসই তোমাদের সাথে থাকলাম। একটু সুস্থ হয়ে তোমরা বাড়ি চলে যাওয়ার পর এখন আবার সেই প্রথমবারের মতো কষ্ট হয় তোমাদের ছাড়া এই কঠিন নগরীতে থাকতে।
আব্বুর অসুস্থতার পর থেকে আম্মুও কেমন যেন হয়ে গেল। একটা রাতও ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না তোমাদের চিন্তায়। ভীষণ ঝড় বয়ে যায় এ মনে। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে এখন পর্যন্ত তোমাদের কোনো স্বপ্ন পূরণ করতে না পারা এই মেয়েটিকে কেন এত ভালোবাস তোমরা! প্রতিটা ক্ষণে তোমাদের নিত্যনতুন ভালোবাসায় বিমোহিত হয়ে অপরাধী লাগে নিজেকে। তোমাদের স্বপ্ন বেচে দেওয়া মেয়েটাকে একটু কম ভালোবাসলে কী হয়...!
নজরানা জাহান, ঢাকা।