প্রিয় লেখক প্রিয় বই

তাঁদের সবাই ‘বেস্টসেলার’ বইয়ের লেখক। লেখক, ঔপন্যাসিক কিংবা কবি। রীতিমতো তারকা খ্যাতিসম্পন্ন। আমরা যেমন তাঁদের লেখার ভক্ত, তাঁরা যেমন আমাদের প্রিয় লেখক, ঠিক তেমনি তাঁদেরও প্রিয় লেখক আছেন, আছে প্রিয় বই। তাঁদের প্রিয় লেখক, প্রিয় বই নিয়ে এই আয়োজন

কাজী আনোয়ার হোসেন
কাজী আনোয়ার হোসেন

কাজী আনোয়ার হোসেন
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা পড়ার পর বিস্মিত হয়েছিলেন ‘মাসুদ রানা’র স্রষ্টা কাজী আনোয়ার হোসেন। এটাও তখন বুঝে গিয়েছিলেন, এত উঁচু মাপের লেখালেখি তাঁর পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়।
‘ইয়ান ফ্লেমিংয়ের জেমস বন্ড সিরিজের কয়েকটি বই পড়ার পর তাঁর অ্যালিেস্টয়ার ম্যাকলিনের দ্য গানস অব নাভারন আমার হাতে আসে। ওটি পড়ার পর মনে হলো ম্যাকলিন তো ফ্লেমিংয়ের দাদা। আর এই বইটি আমার সবচেয়ে প্রিয় বই হয়ে গেল। মাসুদ রানা সিরিজের ষষ্ঠ বই দুর্গম দুর্গ রচিত হলো দ্য গানস অভ নাভারন-এর ছায়া অবলম্বনে।’ বলছিলেন কাজী আনোয়ার হোসেন।
হুমায়ূন আহমেদও আছেন তাঁর প্রিয় লেখকের তালিকায়। ‘নন্দিত নরকে পড়ে আমি আবেগ সামলাতে পারিনি, কেঁদেছিলাম। ছোট বোন রুনুকে গল্প শোনাতে গিয়ে বড় ভাই তাকেই একটা গল্প বলতে বলল। তখন ১৩-১৪ বছরের কিশোরীর সেই সরল উক্তি “আমি বুঝি জানি?” উপন্যাসের এই জায়গায়টি কেন জানি না আমাকে ভীষণ আপ্লুত করেছিল। দরজা বন্ধ করে কেঁদেছিলাম, পাছে কেউ আবার না দেখে ফেলে যে একজন বয়স্ক মানুষ কাঁদছে। একবার হুমায়ূন সেবা প্রকাশনীতে এসেছিলেন। কথা প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছিলেন যে আমি তাঁর কোনো লেখা পড়েছি কি না। আমি নন্দিত নরকের কথা বলেছিলাম, বলেছিলাম এই কান্নার কথা। বোধহয় কিছুটা অবাকই হয়েছিলেন। সেগুনবাগিচায় আমাদের বাড়ির যে ঘরটিতে দরজা বন্ধ করে কেঁদেছিলাম, সেটা দেখতে চেয়েছিলেন।’ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘বুদ্ধিরাম’ গল্পটিও খুব ভালো লেগেছিল জনপ্রিয় এই লেখকের। [আলাপচারিতা: আসজাদুল কিবরিয়া]

জর্জ আর আর মার্টিন
জর্জ আর আর মার্টিন

জর্জ আর আর মার্টিন
বর্তমান সময়ে জর্জ মার্টিন জ্বরে ভুগছে পুরো তরুণসমাজ। তাঁর আ সং অব আইস অ্যান্ড ফায়ার বইয়ের গল্প অবলম্বনে নির্মিত সিরিয়াল ‘গেম অব থ্রন্স’ মুক্তি পাওয়ার পর খ্যাতির তুঙ্গে থাকা এই লেখক জানান, জে আর আর টলকিনের লেখা লর্ড অব দ্য রিংস তাঁকে হাইস্কুলের রোমাঞ্চকর দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রিয় লেখকের কথা বলতে হলে তিনি জে আর আর টলকিনের কথাই বলেন।

আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
আর্নেস্ট হেমিংওয়ে

আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
মার্কিন এই ঔপন্যাসিক বলেছিলেন, ‘বইয়ের চেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু আর নেই।’ জীবনের বেশির ভাগ সময় আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়ালেও সব সময় সঙ্গী হিসেবে বই তাঁর সঙ্গে থাকতই। সাম্প্রতিক কালের প্রখ্যাত কলম্বিয়ান লেখক গাব্রিয়েল গারসিয়া মার্কেসের প্রিয় লেখকের তালিকায় ছিল হেমিংওয়ের নাম। দুই লেখকের তালিকায় খুব একটা হেরফের নেই, হেমিংওয়ের পছন্দের তালিকায় আরও আছে সমারসেট মম ও এমিলি ব্রন্টের নাম।

গাব্রিয়েল গারসিয়া মার্কেস
গাব্রিয়েল গারসিয়া মার্কেস

গাব্রিয়েল গারসিয়া মার্কেস
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া এই ঔপন্যাসিক বই পড়ার জন্য বেশির ভাগ সময় কাটাতেন লাইব্রেরিতে। কৈশোরে তাঁর মনে দাগ কেটেছিল টমাস মানের উপন্যাস দ্য ম্যাজিক মাউন্টেন। এরপর জেমস জয়েসের লেখা পড়ে ২০ বছর বয়সী মার্কেস যখন মুগ্ধতার সাগরে ভাসছিলেন, তখন হঠাৎ ধাক্কা খান উইলিয়াম ফকনারের কাছে এসে। অভিভূত হয়ে যান মার্কেস। এরপর চলতে থাকে এই ভালো লাগার অভিযান। মার্কেস সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন এমন একজনকে ঠিক করে উঠতে পারেননি। লিও তলস্তয়, ডি এইচ লরেন্স, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, ক্যাথরিন ম্যান্সফিল্ড—কেউ বাদ যাননি তাঁর তালিকা থেকে। ভার্জিনিয়া উলফ পড়ে তিনি বলেছিলেন, এ যেন আরেক উইলিয়াম ফকনার! বিশাল পড়ালেখার ভান্ডারে তিনি সেরা বলেছেন সবাইকেই। বলেছেন, ‘সবাইকে জানো। যখন সবার লেখা পড়ে শেষ করবে, তখন তুমি যেখানেই যাও না কেন, সবকিছুর মাঝে তাদের পাবে।’

হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ
জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের প্রিয় লেখক ও কবির তালিকায় রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, শামসুর রাহমানের নাম। আরও পড়তেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সৈয়দ শামসুল হক ও শওকত হোসেনের লেখা।
জীবনানন্দ তাঁর জীবনে ভালোভাবেই ভর করে ছিলেন। ‘মাঝে মাঝেই জীবনানন্দ দাশের কবিতার বই পড়তেন। তাঁর অনেক বইয়ের নামই জীবনানন্দের কবিতা থেকে নেওয়া।’ হুমায়ূনের বেশির ভাগ বইয়ের প্রকাশক অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম এমনটাই বললেন। শেকস্পিয়ারও ছিলেন হুমায়ূনের প্রিয়। তাঁর ভালো লাগত আইজ্যাক আসিমভের বিজ্ঞান কল্পকাহিনি। স্টিফেন হকিংয়ের লেখাও পড়তেন তিনি। জীবনের শেষভাগে নিউইয়র্কে যখন চিকিৎসা নিচ্ছিলেন, তখন মাজহারুল ইসলামের এক বন্ধু জাপান থেকে হারুকি মুরাকামির বই পাঠিয়েছিলেন। হুমায়ূন এর আগে এই বেস্টসেলার লেখকের বই পড়েননি। মাজহার বললেন, ‘একটি বই শেষ করে আরও দুই-তিনটা বই আমার ওই বন্ধুকে পাঠানোর জন্য বললেন। ওই বন্ধু হারুকি মুরাকামির এক কার্টন বই পাঠিয়ে দিলেন। এরপর হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তাঁর হাতে হারুকির বই-ই ছিল।’

জে কে রাওলিং
জে কে রাওলিং

জে কে রাওলিং
ছোটবেলা থেকে কল্পনাবিলাসী ছিলেন ‘হ্যারি পটার’-এর লেখক রাওলিং। স্কুলে সব সময় অবিশ্বাস্য ও রোমাঞ্চকর গল্প লিখতেন তিনি। ছোটবেলায় কল্পনারাজ্যের অধিবাসী রাওলিংকে এক আত্মীয় জেসিকা মিটফোর্ডের জীবনী পড়তে দেন। এবং সে সময়ই রাওলিংয়ের আদর্শের জায়গায় স্থান করে নেন জেসিকা মিটফোর্ড। জেসিকার লেখার সব বই পড়ে ফেলেন রাওলিং। এ ছাড়া ক্ল্যাসিকসের নাম এলেই জেন অস্টেন এবং পরবর্তীতে ভার্জিনিয়া উলফের কথা তিনি এড়াতে পারেন না। তবে জেসিকা মিটফোর্ডের প্রতি আলাদা ভালোবাসা আছে বলেই পরে নিজের মেয়ের নাম রেখেছেন জেসিকা।

হারুকি মুরাকামি
হারুকি মুরাকামি

হারুকি মুরাকামি
৫০টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামির সাহিত্যকর্ম। অনেক বেস্ট সেলার বইয়ের জনক এই লেখকের পছন্দ রুশ সাহিত্য। ফিওদর দস্তইয়েফস্কির লেখা তিনি বারবার পড়তে পছন্দ করেন। তাই বলে পশ্চিমা লেখকদের এড়িয়ে চলেন, তা কিন্তু না। ফ্রানৎস কাফকার লেখাও তাঁর অনেক প্রিয়।

ড্যান ব্রাউন
ড্যান ব্রাউন

ড্যান ব্রাউন
দ্য ভিঞ্চি কোড আর ড্যান ব্রাউন যেন একে অপরের পরিপূরক। একজন ঔপন্যাসিক হলেও ব্যক্তিগতভাবে রোমান্টিক কিংবা গতানুগতিক উপন্যাস খুব একটা পছন্দ করেন না তিনি। ফ্রেড রিশন, জেমস ব্যামফোর্ডসহ আর যেসব লেখক ক্রিপ্টোলজি নিয়ে লেখালেখি করেন, তাঁদের লেখা পড়তে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এই লেখক।

সূত্র: মেন্টালফ্লস ডট কম, দ্য উইক ডট কম, ব্রেইনপিকিংস ডট কম।