ফলের চেয়েও ভালো শাকসবজি!

নানান রঙের ফল ও সবজিতে আছে নানান ধরনের পুষ্টি উপাদান। ছবি: বিবিসি
নানান রঙের ফল ও সবজিতে আছে নানান ধরনের পুষ্টি উপাদান। ছবি: বিবিসি

ফল ও শাকসবজি খাওয়া যে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তা আমরা সবাইই জানি। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি বেশি ফল খাওয়ার চেয়ে বেশি বেশি শাকসবজি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ভালো। সম্ভবত ফলে ‘সুগার’ বা শর্করার পরিমাণ বেশি হওয়ায় এমনটা হতে পারে। এ ছাড়া টিনজাত ফলের রস খাওয়ায় তেমন একটা উপকার পাওয়া যায় না বলেও জানিয়েছেন গবেষকেরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণার বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে কীভাবে ফল ও শাকসবজি খাওয়া স্বাস্থ্যবান থাকতে সহায়তা করতে পারে।

ইউরোপীয়দের মতো নাশতা করলে সকাল শুরু করতে পারেন একটা ডিমের ওমলেট আর বেশি পরিমাণে ‘স্পিনাচ’ বা পালংশাক-জাতীয় শাক দিয়ে। ডিমের প্রোটিন দীর্ঘক্ষণ আপনাকে শক্তি জোগাবে। আর এই জাতীয় শাকের ‘ফোলেট’ ও ‘বিটাইন’ ভিটামিন শরীরের ‘হোমোসিস্টাইন’-এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে হূদেরাগ প্রতিরোধে সহায়তা করবে। শাকের বিকল্প হিসেবে আপনি কিছু স্ট্রবেরি বা ব্লুবরি কিংবা একটা কমলা খেয়ে ফেলতে পারেন।
দুপুর ও রাতের খাবারে সবজি খেতে পারেন। আর ডেজার্ট হিসেবে খেতে পারেন ফল। কিন্তু কোন কোন সবজি খাবেন? গবেষকেরা বলছেন, যতটা সম্ভব নানান রঙের সবজি খান। নানান রঙের শাকসবজিতে এই রংগুলো আসলে হাজারো জৈব-যৌগিক রাসায়নিকের প্রতিনিধিত্বকারী। এসব ‘সাইটোকেমিক্যালস’ গাছ-লতা-পাতাকে সজীব ও স্বাস্থ্যবান রাখে। বিশেষভাবে খেয়াল রাখুন, এসব শাকসবজি খেতে হবে খুবই হালকা সেদ্ধ করে, পুরোপুরি সেদ্ধ করে এগুলো মেরে ফেলে না।

সবুজ

সবুজ পাতার শাকসবজি যেমন—পালংশাক, লেটুসপাতা ইত্যাদি ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও পটাশিয়ামের মতো সমৃদ্ধ খনিজের উত্স। বাঁধাকপি, ফুলকপি ও ব্রকোলি (বিশেষ জাতের ফুলকপি) জাতীয় সবজিগুলোয় সালফার ও অর্গানোসালফার আছে। সালফারে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। এ ছাড়া মেথিওনিন ও টরিনের মতো প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে এতে।

হলুদ ও কমলা

হলুদ ও কমলা রঙের ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ‘ক্যারোটিনয়েডস’ আছে। ক্যারোটস বা গাজর এই উপাদানে সমৃদ্ধ খাবারের একটা ভালো নমুনা। গাজর  ভিটামিন ‘এ’-এর একটি ভালো উত্স। এই ভিটামিন ‘এ’ দৃষ্টিশক্তির জন্য খুবই ভালো। বেশি বেশি গাজর খান, চোখ ভালো রাখুন। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ঠিক রাখতে এবং হাড়ের বৃদ্ধিতেও ভিটামিন ‘এ’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তরমুজ, টমেটো, মরিচ, লাউ ও কুমড়ো-জাতীয় ফলেও প্রচুর ক্যারোটিনয়েডস আছে।

লাল

আরেক জাতের ক্যারোটিনয়েডস আছে লাল রঙের। একে বলে ‘লাইসোপিন’। লাল টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে আছে এই লাইসোপিন। অন্যান্য সবজি ও ফলের সঙ্গে এর একটা পার্থক্য হলো টমেটো রেঁধে খেলেও এর লাইসোপিন কমে না, বরং বেড়ে যায়। তবে রান্না করা টমেটোতে ভিটামিন ‘সি’ নষ্ট হয়ে যায়।

নীল ও নীলাভ বেগুনি

নীল ও নীলাভ বেগুনি ফল ও সবজি এই রং পেয়ে থাকে ‘অ্যান্থোসায়ানিন’ নামের একটা রাসায়নিকের কারণে। ব্ল্যাকবেরি ও ব্লুবেরি, নীলচে গাজর এবং লাল বাঁধাকপিতে এটা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে বয়স বেড়ে গেলে স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখা এবং মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ঠিক রাখতে সহায়তা করতে পারে অ্যানথোসায়ানিন-সমৃদ্ধ ব্লুবেরি।

সাদা

রসুন ও পেঁয়াজ ‘অ্যালিল সালফার’সমৃদ্ধ। রসুন হূদেরাগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকর। এ ছাড়া এগুলো ক্ষতিকর উদ্ভিজ্জাণু মেরে ফেলে শরীর সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।