ফাগুন মাস কী উচ্ছ্বাস

ফাগুন প্রকৃতির রঙের ছোঁয়া থাকুক পোশাকেও। মডেল: মারিয়া, পোশাক ও গয়না: আড়ং, ব্লাউজ: ওয়ালিজ, সাজ: রেড, ছবি: কবির হোসেন
ফাগুন প্রকৃতির রঙের ছোঁয়া থাকুক পোশাকেও। মডেল: মারিয়া, পোশাক ও গয়না: আড়ং, ব্লাউজ: ওয়ালিজ, সাজ: রেড, ছবি: কবির হোসেন

ফাগুনে আগুন লাগে প্রকৃতিতে, সেটা নজর এড়ায় না রবীন্দ্রনাথের। ‘এত বাঁশি বাজে/ এত পাখি গায়’ এ ঋতুকে উপেক্ষা করার উপায় কী! তাঁর এমন বসন্তবিলাসে অবাক হয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। তবে নুহাশপল্লীর বসন্ত প্রকৃতিতে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনিও। রবীন্দ্রনাথের নীলমণিলতা, বাগানবিলাস, মাধুরীলতারা তাঁকেও বানিয়েছিল বসন্তপ্রেমী। ‘বসন্তবিলাপ’ (প্রথম আলো, এপ্রিল ০৮, ২০১১) লেখায় তিনি বসন্তকে অভিবাদন জানিয়েছেন। উৎসবের মধ্য দিয়েই তো বরণ করে নিতে হবে এ ঋতুরাজকে। ফাগুন মাসের প্রথম দিন মানেই যেন বাঙালির জীবনে রঙের ছোঁয়া। সাজপোশাকের মধ্য দিয়েই তার প্রকাশ হোক।

মেকআপের চেয়েও চুলের সাজটাই নজর কাড়বে এবার
মেকআপের চেয়েও চুলের সাজটাই নজর কাড়বে এবার

চুলে চমক
চোখে ক্যাট আইলাইনার, রংবেরঙের আইশ্যাডো অনেক হলো। উজ্জ্বল রঙে ঠোঁট রাঙানোর চলও পুরোনো হলো বলে। এবার তাই সব মনোযোগ থাকবে চুলেই। এমন মনে করেন রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন। ‘চুলের স্টাইল এবার প্রাধান্য পাবে সাজে। লুক বদলে চুলের স্টাইল বড় ভূমিকা রাখে। তাই নিজেকে যাঁরা একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে চান, তাঁরা নানা ঢঙে চুল সাজাতে পারেন।’ বললেন তিনি। বান, বেণি, ঝুঁটি এমনকি খোলা চুলও বেশ দেখা যাবে এবার। তবে মূলকথা একটাই—মেসি লুক। কেউই আর টানটান করে চুল বেঁধে খুব গোছানো ভাবটা আনতে চাইছেন না। বদলে একটু এলোমেলো ঢংই চলছে। এ ছাড়া মুক্তা বা পাথর দিয়ে চুল সাজানোও হবে।

পোশাকের রঙের বাহার তো থাকবেই। সেটায় ভারসাম্য আনতে চোখের সাজটা হবে নিউট্রাল। কপার বা বাদামি টোনে চোখ সাজানো হবে। ঠোঁটে থাকতে পারে উজ্জ্বল রং। তবে গোলাপি, লাল, কমলা রঙের লিপস্টিকগুলোর পাশাপাশি চলবে নুড শেডগুলোও। সব মিলে সাজে সাদামাটা ভাবটাই থাকবে।

যেকোনো রঙের বোটনেক ব্লাউজ পরে ফেলতে পারেন শাড়ির সঙ্গে
যেকোনো রঙের বোটনেক ব্লাউজ পরে ফেলতে পারেন শাড়ির সঙ্গে

ব্লাউজে বাহার
চুলের সাজটার মতোই এবার বাড়তি মনোযোগ পাবে ব্লাউজ। তবে রং মেলানোর ঝামেলা নেই। শাড়ির সঙ্গে যেটা দেখতে ভালো, সেটা পরে ফেললেই হলো। নিখুঁত ফিটিং আর বৈচিত্র্যময় কাটের ব্লাউজ চলবে এবার। ফ্যাশন ডিজাইনার ওয়ালীউদ্দিন আহমেদ জানালেন, বোটনেক আর হল্টার কাটের ব্লাউজ এবার চলবে বেশ। একটু ভারী গড়ন হলে অবশ্য এ ধরনের ব্লাউজ না পরাই ভালো। তাঁরা পরতে পারেন লেস বসানো, পেছনে ফিতা দিয়ে নকশা করা ব্লাউজ। এমব্রয়ডারির কাজ তেমন চলবে না ব্লাউজে। বরং কাপড়টাই বেছে নেওয়া হবে বাহারি। শাড়ির ব্লাউজ পিস দিয়ে ব্লাউজ বানানোর চলও এখন নেই বললেই চলে।

নকশার বাহুল্য নেই, শাড়ির রঙেই থাকছে বসন্তের বর্ণিলতা
নকশার বাহুল্য নেই, শাড়ির রঙেই থাকছে বসন্তের বর্ণিলতা

বাসন্তী বসন
বসন্তবরণের পোশাক মানেই তো শাড়ি। আর তাতে উজ্জ্বল সব রং। নতুন পাতার কচি সবুজ যেমন আছে, ঝরাপাতার বাদামি বর্ণও চোখে পড়বে। বসন্ত প্রকৃতির রংগুলোই ঘুরেফিরে দেখা যাবে পোশাকে। হলদু, সবুজ, কমলার নানা শেড তো থাকবেই। পাড় কিংবা আঁচলে লাল, গোলাপি, নীলের বৈপরীত্যও থাকতে পারে। ফ্যাশন ডিজাইনার এমদাদ হক জানালেন, পাড়ওয়ালা শাড়িই চলছে এ সময়ে। চিকন জরি বা নানা রঙের স্ট্রাইপ দেওয়া পাড় দেখা যাচ্ছে। সুতি শাড়ি তো পরা হবেই। অনেকে সিল্ক বা মসলিনও বেছে নিতে পারেন।

আড়ংয়ের বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হলুদ বা কমলা দুটো রংই এবার বেশ চলছে। যেকোনো একটি রঙের প্রাধান্যের কথা বলা যাবে না। ব্লকপ্রিন্টের শাড়ির চলও ফিরে আসছে। তবে পুরো শাড়িতে নয়, পাড় কিংবা আঁচলে চিকন ব্লকপ্রিন্ট থাকছে। আড়ংয়ে এবার নতুন এসেছে জামদানি আঁচলের শাড়ি। পুরো শাড়িতে স্ট্রাইপ বা বুটির নকশা, আঁচলটা শুধু জামদানি মোটিফের নকশা করা।