ফুটবলার সাদের ঈদ

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদের সে খুশি–আনন্দ গত বছর মাচায় তুলে রাখা হয়েছিল। এবার যখন সেটি মাচা থেকে নামিয়ে রোদে দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হলো, তখনই করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। অদৃশ্য শক্তিটা যতই আমাদের শিকল বন্দী করে রাখতে চায়, তবু উঁকি দেয় ঈদ–উৎসবের হাতছানি।
গত বছর করোনা খেলার গেটে তালা মেরে দিলে সিলেটে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করার সুযোগ পেয়েছিলেন জাতীয় দলের ফুটবলার সাদ উদ্দিন। বাস্তবতা এবার কোথায় ঈদ করাবে তাঁকে? তা এখনো অজানা। বাস্তবতা বলার কারণ প্লে–অফ পর্ব পেরিয়ে তাঁর ক্লাব আবাহনী লিমিটেড এএফসি কাপে খেলার সুযোগ পেলে ঈদের ছুটি নেই। সে ক্ষেত্রে ঈদ উদ্‌যাপন করতে পারেন ধানমন্ডিতে ক্লাবে। সেটি না হলেও জাতীয় দলের ক্যাম্পের জন্য ঈদ ঢাকায় করতে হতে পারে তাঁর। মানসিকভাবে সে প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছেন ২২ বছরের তরুণ এই ফুটবলার।
সাদ বাস্তবতা মেনে নিতে শিখেছেন ২০১৬ সাল থেকেই। ১৭ বছর বয়স থেকে খেলছেন দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটিতে। পেশাদার জগতে প্রবেশের পর থেকেই হারিয়ে ফেলেছেন ঈদের চাঁদ দেখার আনন্দ। জীবনের বাঁকবদলে এসে সবচেয়ে বেশি মিস করেন চাঁদরাতটাকেই।

স্মৃতি হাতড়ে বললেন, ‘চাঁদরাত খুব মিস করি। ঈদের দিনের চেয়ে আগের রাতটাই বেশি মজা করতাম। বন্ধুরা মিলে চাঁদ দেখার অপেক্ষায় থাকতাম। সারা রাত মজা করতাম।’
এখনো বছরে অন্তত একটি ঈদ বাড়িতে উদ্‌যাপন করেন তিনি। নামাজ পড়ে এসে মা–বাবাকে সালাম করার মধ্যেই তাঁর ঈদ আনন্দ। সাদ বলছিলেন, ‘ঈদে নামাজ পড়ে এসে মা–বাবাকে সালাম করি। এটাই এখন সবচেয়ে আনন্দের। এরপর চাচা–চাচিদের সঙ্গে দেখা করি। সেমাই খাই। বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাই।’
ফ্যাশন সচেতন হিসেবে সাদের সুনাম আছে। পোশাক–আশাকে বেশ রুচিশীল। ঈদে পাঞ্জাবি–পায়জামার সঙ্গে চামড়ার স্যান্ডেলই তাঁর পছন্দ। প্রতি ঈদে বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে অনেক উপহার পেয়ে থাকেন তিনি। নিজের পছন্দমতোও কিনে থাকেন পাঞ্জাবি।

ভাইদের মধ্যে তিনি মেজ হওয়ায় ছোট তিন ভাইয়ের আবদারের শেষ নেই তাঁর কাছে। প্রতি ঈদে সবার পছন্দ অনুযায়ী কেনাকাটা করে থাকেন তিনি। ছোট ভাইদের খুশি করতে পারার মধ্যেও আনন্দ খুঁজে পান সাদ, ‘অনেক উপহার পেলেও নিজের পছন্দ অনুযায়ী ঈদের পাঞ্জাবি কিনি। ছোট ভাই কাজিনদের জন্যও তাদের পছন্দ অনুযায়ী জামাকাপড় কেনাকাটা করি। ওদের খুশি দেখার মধ্যেও আমার একটা আনন্দ আছে।’

ঈদের সঙ্গে সেমাই–পায়েসের মতোই অবিচ্ছেদ্য অংশের মতো জড়িয়ে সেলামি। সেটি আর এখন পান না বলে যতটুকু আফসোস আছে, তার চেয়ে বেশি আনন্দের ছোট ভাইবোনদের সেলামি দিতে পারাই। ঈদের মাহাত্ম্যটা যে সবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে।