
গোল সে আগেও করেছে। বাহবাও পেয়েছে নানাজনের কাছ থেকে। কিন্তু তিন ম্যাচে চার গোলের স্মৃতি সানজিদার কাছে এখনো নাকি বিস্ময় জাগানিয়া। সানজিদা বলে, ‘আমি জাতীয় দলের হয়ে এবারই প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। তাই প্রতিটি গোল তো বটেই, ম্যাচগুলোও আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়।’
সানজিদা আক্তার অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা দলের ফুটবলার। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মেয়েদের ফুটবলের বাছাইপর্বে দারুণ ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখিয়েছে সে। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দল জয়ী হয়েছিল দুটি খেলায়। যেখানে বড় অবদান ছিল সানজিদার। সংযুক্ত আরব– আমিরাতকে ৬ গোলে নাস্তানাবুদ করা ম্যাচে সে করেছিল দুটি গোল। জর্ডানের বিপক্ষে যে একমাত্র গোলে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ দল সেটিও এসেছিল সানজিদার পা থেকে। টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশের ছিটকে পড়া ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে গোলটিও করেছিল সে।
সানজিদার বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায়। এ বছরই সে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে উপজেলার কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে। মা-বাবার ছয় সন্তানের মধ্যে সানজিদা তৃতীয়। ২৩ নভেম্বর মুঠোফোনে কথা হয় তার সঙ্গে। এই ফুটবলার বলে, ‘পঞ্চম শ্রেণি থেকে আমি প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলি। কিন্তু পড়াশোনার ক্ষতি হবে ভেবে পরিবার থেকে সায় ছিল কমই। তবে ধারাবাহিক সাফল্যের ফলে ফুটবল খেলা নিয়ে এখন আর কেউ কিছু বলে না।’ সানজিদা বলতে ভুলল না তাকে নিয়ে এলাকায় উন্মাদনার কথা, ‘এলাকার সবাই এখন আমাকে চেনে। টুর্নামেন্ট চলার সময় সবাই আমার খেলার খোঁজ রেখেছেন, অনেকেই টিভি খুলে বসেছেস খেলা দেখার জন্য। এটি খুব অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে আমাকে।’
শুধু সানজিদা নিজে আনন্দে আত্মহারা নয়। তার শিক্ষক ও কলসুন্দর মহিলা ফুটবল একাডেমির পরিচালক মঞ্জুরুল উদ্দিন জানালেন সানজিদার বেড়ে ওঠার কথা।
অনূর্ধ্ব-১৬ জাতীয় ফুটবল দলে ডাক পাওয়ার আগে সানজিদা অংশ নিয়েছে বিভিন্ন জাতীয় প্রতিয়োগিতায়। প্রতিটিতেই দেখিয়েছে নৈপুণ্য। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সানজিদার স্কুল হয়েছিল সেরা। ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বঙ্গমাতা ফজিলাতুনন্নেসা মুজিব ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০১৩ ও ২০১৪–এ জাতীয় চ্যাম্পিয়শিপে।
এ ছাড়া নাসরিন একাডেমির হয়ে খেলেছে ঢাকা মহানগর লীগে।
কথা বলতে বলতেই অনুশীলনে ডাক পড়ে তার। পরীক্ষা শেষ, তাই রীতিমতো অনুশীলনে ব্যস্ত সে। অল্প শব্দে বলে ভবিষ্যতের কথা, ‘আমি বিশ্বমানের ফুটবলার হতে চাই।’