ঠিক একইভাবে ফোনটা যদি অন্য কোনো দেশের (ধরে নিন একটা দেশ) পুলিশের কাছে যেত, তাহলে কী হতো? কল্পনা করার চেষ্টা করেছেন শিশু-লেখক মো. মিকসেতু
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি শিশু জানে, সমস্যায় পড়লে পুলিশে ফোন দিতে হবে। তাই বলে অঙ্কের জট ছাড়াবে পুলিশ? এমন ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যে। বাড়ির কাজ হিসেবে ১০ বছরের শিশু লেনা ড্রাপাকে শিক্ষক যে অঙ্ক কষতে দিয়েছিলেন, তার সমাধানে পুলিশের সহায়তা চেয়েছিল সে। সমাধানও পেয়েছিল পত্রপাঠমাত্র! (সূত্র: প্রথম আলো, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)
শিশু: হ্যালো, পুলিশ আঙ্কেল বলছেন?
পুলিশ: হ্যাঁ, বলেন।
শিশু: আঙ্কেল, আমি স্কুলে পড়ি। ক্লাস থ্রি, রোল নম্বর ৫৩। আমি একটু বিপদে পড়ে ফোন করেছি।
পুলিশ: সেটা তো জানিই। বিপদ ছাড়া মানুষ আবার পুলিশকে ফোন করে নাকি! আনন্দ-ফুর্তি, খাইদাইয়ের সময় তো আমাদের কেউ চেনে না। যখনই বিপদে পড়বে তখনই পুলিশ!
শিশু: জি, এটাই তো আমাদের শেখানো হয়েছে।
পুলিশ: ভুল শেখানো হইছে। এখন কি আর সেই শিক্ষা আছে? শিক্ষা ছিল আমাদের সময়। পড়া না পারলে গাছের ডাল ভাইঙ্গা...যাকগা খাজুইরা আলাপের টাইম নাই। কী জন্য ফোন করছেন, সেইটা বলেন।
শিশু: আঙ্কেল, আমার একটু হেল্প লাগবে। আপনি যদি আসতেন। আমাদের বাসার ঠিকানা...
পুলিশ: বাসায় গিয়ে হেল্প করতে হবে! আপনারা ভাবেন কী? দেশে জনগণের জন্য মাথাপিছু একজন করে পুলিশ আছে নাকি? আরে ভাই, পুলিশের চাকরি করি বইলা কি ভাবেন পায়ের উপ্রে পা তুইলা সারা দিন মাছি মারি? কেউ ফোন দিয়া বাসায় ডাকল আর নাচতে নাচতে চইলা গেলাম। তা-ই ভাবেন, না?
শিশু: আপনি আসবেন না, আঙ্কেল?
পুলিশ: কারে আঙ্কেল ডাকতাছেন? এইখানে কোনো আঙ্কেল থাকে না। স্যার ডাকবেন। কী সমস্যা, থানায় আইসা বলেন।
শিশু: আচ্ছা আঙ্কেল...সরি স্যার, এখন তো সন্ধ্যা, আম্মু বের হতে দেবেন না। আপনিই আসেন না, প্লিজ!
পুলিশ: বাসায় গেলে চা-নাশতার খরচ দিতে হবে। পারবেন?
শিশু: স্যার, নাশতা রেডি আছে। সন্ধ্যায় আম্মু নুডলস রান্না করেছেন। খুব মজা হয়েছে।
পুলিশ: আরে মিয়া, ওই নাশতা না। পাত্তি মানে টাকা আছে? টাকা দিতে পারবেন?
শিশু: পারব, স্যার। আজকে টিফিনের টাকার অর্ধেক খরচ করিনি। এখনো ১০ টাকা আছে।
পুলিশ: ওই মিয়া, পুলিশের লগে মশকরা করেন? ৫৭ ধারা চেনেন?
শিশু: স্যার, রাগ করবেন না। আব্বুর কাছে আরও টাকা আছে। আব্বুকে বললে টাকা দেবেন।
পুলিশ: ঠিক তো?
শিশু: জি স্যার, ঠিক।
পুলিশ: আচ্ছা, এইবার বলেন, সমস্যাটা কী।
শিশু: অঙ্ক মিস হোমওয়ার্ক দিয়েছেন। দুইটা অঙ্কের সমাধান কোনোভাবেই মেলাতে পারছি না। আপনারা এসে যদি একটু সাহায্য করতেন...।
পুলিশ: খাইছে আমারে!
শিশু: কে কী খাইল, স্যার!
পুলিশ: না, ইয়ে মানে...অঙ্ক ব্যাপারটা তো আসলে ইয়ে...বুঝলেন না, ইয়ে...
শিশু: আসবেন না, স্যার? আমি কিন্তু কেঁদে ফেলব। ই ই ই ই...
পুলিশ: আরে বাবু, কাঁদে না, কাঁদে না। অঙ্ক হচ্ছে খুব সহজ একটা ইয়ে...সূত্রে ফেললেই ইয়ে হবে। পুলিশকে ইয়ে...মানে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমরা চোর-ডাকাত ধরতেই ইয়ে পাই না, মানে কূল পাই না।
শিশু: তার মানে আপনি আসবেন না?
পুলিশ: কীভাবে আসব! আমরা তো সবাই ব্যস্ত। তা ছাড়া এটা পুলিশের নাম্বার না। আপনি ভুল করছেন। এইটা কমলাপুর রেলওয়ে বুকিং। হ্যাঁ হ্যাঁ, সুবর্ণা এক্সপ্রেস এইমাত্র ছেড়ে গেল।
শিশু: আঙ্কেল...
পুলিশ: সরি, রং নাম্বার। আপনাকে এই মুহূর্তে ট্রেনের কোনো টিকিট দিতে পারছি না। টিকিট ব্ল্যাকে বিক্রি হচ্ছে। আমরা ব্ল্যাকারদের ধরার চেষ্টায় আছি। রাখি। ভালো থাকবেন। আপনার যাত্রা শুভ হোক।