বছরে একটাইতো নতুন জামা, একদিনে দুই ঈদ হতো...

খুব ছোট একটা গ্রামের খুব ছোট একটা ঘর থেকে উঠে আসা ছেলে আমি। বাবা গ্রামের সব বাবাদের মতোই কৃষক ছিলেন, নতুন কাপড়-চোপড়ের মুখ বা পরার সুখটাও পেতাম খুব অল্প। তাই কোনো দিন যদি বাড়িতে নতুন কাপড়-চোপড় আসত সেই দিন টাই আমাদের জন্য স্পেশাল ঈদ হিসেবে গণ্য হতো।

এলাকার বড় মানুষগুলোর দেওয়া জাকাতের জামা-ই ছিল মূলত আমাদের ঈদের জামা। সুতরাং সেখানে আমার পছন্দ বা অপছন্দের কোনো জায়গা ছিল না। একটা জামা পাব, সেটা হোক না হলুদ শার্টের সাথে লাল প্যান্ট অথবা একটা সবুজ রঙ্গের পাঞ্জাবি যার এক পাশের পকেট থেকে উপরের অংশ আগেই ছিঁড়ে গেছে, সেদিন হতো ছোট ঈদ। রাতে বাড়ির সকল সমবয়সী মিলে সে কি আনন্দ, জোছনা রাত হলেতো কথাই নেই...

ঈদের দিন, খুব ভোর, ৫টা কি সাড়ে ৫টা বাজে সবে, গ্রামের মোরগগুলো মাত্র কুক্কুরু দেওয়ার জন্য জেগে উঠল, তার আগেই সাবান এর কেস নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তাম পুকুরে। তপ্ত রোদে পোড়া কালো কালো চামড়া গুলোর ওপর স্টিম রোলার চালাতাম, সেই পাঞ্জাবি পড়েই দৌড় আয়নার সামনে, কাকুদের ঘরে গিয়ে পাউডার, তার ওপর ক্রিম, আবার পাউডার মাখতাম। ঈদের নামাজে অজুও করতে ইচ্ছে করত না, ফরসা ভাবটা চলে যাবে ভেবে।

সালামির ব্যাপারটা ছিল ওই দিনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পার্ট। ‘নিজের টাকা’ ব্যাপারটার সাথে খুব বেশি পরিচিতি না থাকায়, ভাবি বা ভাইদের দেওয়া এক-একটা আধুলি যেন এক-একটা স্বর্ণমুদ্রা ছিল আমার জন্য। সব শেষে বন্ধুরা সবাই মিলে কার কত বেশি হলো, সেটার প্রতিযোগিতাও অন্যতম চিত্র। অবশ্য সবগুলো টাকা দিয়ে কি করব সেটাই পরে বুঝে উঠতে পারতাম না। মনে থাকা পর্যন্ত লাস্ট ঈদে আমার বকশিশ ছিল ২৭ টাকা।

তারপরতো সারা দিনের হই-হুল্লোড় সেই নতুন জামার যাচ্ছে-তাই অবস্থা করে ছাড়তো। তবুও, দিন শেষে কত যত্ন করে রাখতাম সেই জামাটাকে। আমার কাছে ঈদ মানে ছিল নতুন একটা জামা। আমার ধর্ম একটা ঈদ দিত আমাকে, আমার জামা আরেকটা ঈদ।