বদলে যাওয়া দেয়াল

দেওয়াল সাজাতে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা নকশা। নিজ বাসা এরকমভাবেই সাজিয়েছেন জাকিয়া উর্মি।ছবি: নকশা

নব্বইয়ের দশকে ঘরের দেয়ালের উচ্চতা সাধারণত হতো ১০ ফুট। আজকের যুগে এসে এ উচ্চতা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ কি সাড়ে ৯ ফুটে। কৃত্রিম ছাদ করা হলে উচ্চতা কমে যায় আরও এক ফুট। উচ্চতা কমে এলে কী হবে, মনের মতো করে দেয়াল সাজানোর অনুষঙ্গের কিন্তু কমতি নেই। বদলেছে রঙের ধারাও। দুই দশকের এ পরিবর্তনের কথাই জানালেন রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের প্রধান ও অন্দরসজ্জাবিদ গুলসান নাসরীন চৌধুরী।

দেয়ালের রংবদল

একেক দেওয়ালে একেক রং
ছবি: নকশা

দুই দশক আগে দেয়াল মানেই ছিল প্লাস্টার, সাদা কিংবা চাপা সাদায় নিপাট প্রশান্তি। বাড়ির সব কটি ঘরেই থাকত একই রঙের ব্যবহার। ধীরে ধীরে রংবদল হলো। এল বৈচিত্র্য। একটা ঘরের সব কটি দেয়ালই হয়তো হালকা গোলাপি কিংবা নীল রঙে রাঙানো। তবে এ ধারাও টিকল না। তাই একই ঘরের তিনটি দেয়ালে একই রং, আর অন্য একটা দেয়ালে আনা হলো ভিন্ন রং। হয়তো শোবার ঘরে চাপা সাদা রং করা হলো তিন দিকে, অন্য দেয়ালটা হলো পিচ রং। শিশুর ঘরে হয়তো এ পিচ রঙের জায়গা নিল নীল কিংবা গোলাপি। বসার ঘরে আবার একটা দেয়াল হলো আকাশি বা সবুজ।

দেয়ালজুড়ে নকশা যত

দেওয়ালের ওপর হাতে আঁকা মজার ছবি
ছবি: নকশা

দেয়ালে আরও বৈচিত্র্য আনতে এরপর এল ওয়াল পেপার। সেই সময়ও পেরিয়ে গেল। এরপর ঘরের একটা দেয়ালে বাঁশঝাড়, পাতা কিংবা কার্টুন ফুটিয়ে তোলা হলো কিংবা বসার ঘরের একটা দেয়ালে থাকল টেরাকোটা। খাবার ঘরের একটা দেয়াল মার্বেল পাথর, অমসৃণ পাথর বা রাস্টিক টাইলসের। হাতে আঁকা ছবিও থাকে যেকোনো ঘর কিংবা বারান্দার দেয়ালে। নানা রঙের ব্যবহারে উজ্জ্বল আর রঙিন এসব ছবিতে থাকে প্রাণোচ্ছলতার ছাপ। ব্যবহার হয় তেলরং। অফিস অন্দরের দেয়ালে প্লাইবোর্ডের ব্যবহার হচ্ছে, দেখলে মনে হয়, কাঠ দিয়ে তৈরি হয়েছে দেয়াল।

দেয়ালের গাঁথুনি

দেওয়ালে এখন সাজানো হয় নানা কিছু
ছবি: নকশা

দেয়াল সাজাতে একসময় ব্যবহৃত হতো কেবল ক্যালেন্ডার। এরপর যোগ হলো ছবি। ধীরে ধীরে থিম–নির্ভর হয়ে উঠল দেয়ালের সাজ। বসার ঘরে দারুণ কোনো দৃশ্যপট, খাবার ঘরে আবার ফলফলাদির ছবি। কাঠের চিকন খোপ খোপ করে তাতে নানা জিনিস সাজিয়ে রাখার প্রচলন হলো এরপর। ফ্রেমের প্রস্থ হতো ইঞ্চি চারেক। ফ্রেম তৈরিতে কাঠের বদলে বাঁশ, বেত, এমনকি কাচও ব্যবহার হতে শুরু করল। দেয়ালের গাঁথুনিতেও পরিবর্তন এসেছে। আগে দেয়ালের পুরুত্ব হতো অন্তত ১০ ইঞ্চি। পিলারের ব্যবহারে এখন পাঁচ, এমনকি তিন ইঞ্চি পুরুত্বের দেয়ালও দেখা যায়।

তারপরও ‘বিশেষ’ কিছু

রাস্টিক দেওয়াল
ছবি: নকশা

অন্দরের প্রবেশপথে দরজার একটা পাশের দেয়ালে এসেছে রাস্টিক টাইলসের ব্যবহার। আয়নাও থাকছে। রাস্টিক টাইলস থাকে অন্দরের একটা কোণে, পিলারেও।বাড়ির সীমানাদেয়ালেও এসেছে বৈচিত্র্য। সদর দরজার কাছের দেয়ালের সামনে ইঞ্চি চারেক ফাঁকা রেখে কাচ বসানো, দেয়ালের রাস্টিক টাইলস বরাবর বইছে সুদর্শন কোনো কৃত্রিম ঝরনা। পানিটুকু ছিটছে না বাইরে, পুনঃচক্রায়িত হচ্ছে সেখান থেকেই।

দেয়ালজুড়ে আলোর খেলা

দেওয়ালের ওপর আলোর খেলা
ছবি: নকশা

দেয়ালে এখন নানাভাবে হয় আলোর খেলা। দেয়ালে নানা রঙের আলো ফেলা হয়। স্পটলাইট বা সার্চলাইট দিয়ে করা যায় কাজটা। কৃত্রিম ছাদের সাহায্যও নেওয়া হয় ‘আলোময়’ এ দেয়ালের জন্য। ছাদের সিঁড়িঘরের দেয়ালেও আলোর বৈচিত্র্যময় ব্যবহার দেখা যায়। নানা রঙের আলোর ছোট ছোট বৃত্ত ঘোরে এ দেয়ালে। এমনই নানা পরিবর্তনে এবং সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তির ব্যবহারে দেয়াল পেয়েছে ভিন্নমাত্রা। দেয়াল হয়ে উঠেছে অন্দরবাসীর ভাবনা প্রকাশের অনন্য মাধ্যম।