বন্ধুকথন

‘কেন? সিনিয়র হলে কি বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারে না!’ অনেকটা এমনই ছিল গত দুই বছর আগেও আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর।

হ্যাঁ, এমনই তো ছিল, ছিলাম তো আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড। হয়তো সব সময় দেখা হতো না, সারা দিন কথা হতো না, সব সময় একসঙ্গে ঘুরতাম না, একসঙ্গে হইহুল্লোড় করতাম না, তারপরও ছিলাম তো আমরা সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে একসঙ্গে, আলাদা-স্বতন্ত্র এক রাজত্বে; না, হোক না সেটা সশরীরে। আমাদের মধ্যে ঝগড়া ছিল না, ছিল সরাসরি বাঁশ! অযথা রাগ ছিল না, ছিল অভিমান। হাজারো সাধারণের ভিড়ে ছিলাম তো আমরা অতি অসাধারণ।

কিন্তু একদিন, আগস্ট মাসের একটা দিন, সব বদলে দেয়। হঠাৎই সব মোড় অন্যদিকে ঘুরে শুরু হয় এক নতুন পথযাত্রা, যার যাত্রাপথ হয়তো হতে পারত অনেকটা স্বপ্নময়। কিন্তু যাত্রাপথে হঠাৎ...হলো আরকি কিছু একটা। পারিনি ধরে রাখতে তোমার সেই হাত, সেই বন্ধুত্ব। অনেকটা ছিটকেই সরে গেলাম—অনেক দূরে। সে কথা না হয় না-ই বললাম।

এরপর অনেকটা সময়। এটাকে শুধু সময় বললে হয়তো ভুল হবে। ‘সময়’ নামে যে দেড়টা বছর গেল, তা ছিল অভিমান থেকে ভুল কাটিয়ে ওঠার একটা পর্যায়, যা অন্ততপক্ষে আমার জন্য ‘সময়’-এর চেয়ে অনেক বেশি কিছুই ছিল।

ভালো থাকার এই মুখোশ নিয়ে এমনই কাটছিল। এরপর একদিন হঠাৎ ফেসবুকে তার ‘মেটাল (গান) শুনো?’ মেসেজটা! ফেসবুকের অন্য যেকোনো বার্তার মতো এটাও খুব সাধারণ একটা মেসেজ হতে পারত। কিন্তু সব মেসেজ দেখলে তো আর চোখ ঝাপসা হয়ে আসে না, গলা ধরে আসে না, কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে না, কথা জড়িয়ে যায় না। সম্ভবত ‘সাধারণ’ এই মেসেজটার দিকেই আমি অসাধারণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ।

‘বেস্ট ফ্রেন্ড’, জানো, রিপ্লাই দিতেই আমি কত ভেবেছিলাম! বারবার শুধু ভাবছিলাম কী লিখলে, কীভাবে কথা বললে আমার সেই বেস্ট ফ্রেন্ডকে খুঁজে পাব। কথা কিন্তু হয়েছিল। তবে তা ছিল আবছা, ঝাপসা, তার দিক থেকে অনেকটাই রূঢ় এবং খানিকটা রহস্যময়। সত্যি বলতে, তারপরও আমি খুশি ছিলাম। তবে প্রায়ই মনে হচ্ছিল, এ তো স্বপ্ন। ঘুম ভাঙলেই আবার সেই ‘আমি’তে ফিরে যেতে হবে, যে ‘আমি’র জীবনে বন্ধুর স্থানটি সম্পূর্ণই খালি। ঘুম ভাঙতে অবশ্য বেশি সময় লাগেনি। এবার আবার কী হলো, এটা সত্যিই আমার অজানা। সত্যি বলতে, এ কদিন তো মনে হচ্ছে ঘুমটা পুরোপুরিই ভেঙে গেছে।

গত দুই বছর আগের বন্ধু দিবসটাও আমার জন্য অন্য রকম ছিল। আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু তখনো আমারই বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। কিন্তু আজ সেই বেস্ট ফ্রেন্ডকে ‘তুমি’ করে বলার অধিকারটুকুও নাকি আমার নেই।

এই যে ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’, দেখো, আর কিন্তু ইচ্ছা করে না প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে তোমার ফেসবুক প্রোফাইল ঘুরে দেখতে, আর পারি না ইনস্টাগ্রামে বারবার সেই পুরোনো ছবিগুলোই নতুন করে দেখতে। কেন ইচ্ছা করবে? কেন পারব, বলো? এভাবে প্রোফাইল ঘুরে ঘুরে ছবি দেখার জন্যই কি ছিল বন্ধুত্বটা? অন্য সম্পর্কের আড়ালে কি বন্ধুত্বটা এভাবে হারিয়ে যাওয়া প্রয়োজন ছিল? এমন হাজারো প্রশ্ন, কিন্তু উত্তর দেওয়ার একমাত্র মানুষটিই নেই। তুমি এখন অপরিণত, অচেনা একটা স্মৃতি।

আচ্ছা, সবকিছু ভুলে কি আবার, আরেকটিবার বন্ধুত্বকে খুঁজে আনা যায় না, যেটা হারিয়ে গেছে দুঃস্বপ্নের মাঝে, অভিমানের আড়ালে? তুমি শুধু একটি পা এগিয়ে আসো, হাতটা তো আমার বাড়ানোই আছে; তুমি শুধু এগিয়ে এসে ধরবে আরেকবার। বিশ্বাস করো, এ বন্ধুত্বের হাত আর কখনো ছুটবে না, কখনোই না।

তাসনুভা হক, চট্টগ্রাম।