
তপুর ওই ‘বন্ধু...’ গানটা মনে আছে নিশ্চয়ই—বন্ধু হলে আর কী লাগে? সত্যিই তো, হাসি-কান্না, দুঃখ কিংবা আনন্দে পাশে বন্ধুরা থাকলে আর কীই-বা প্রয়োজন! হতাশার একেকটা মুহূর্তে বন্ধুর একটুখানি সঙ্গই ভুলিয়ে দেয় সবকিছু, আশার বাঁধনে শক্ত গিঁট লাগিয়ে দেয় বন্ধুর একটা হাসি!
বন্ধুত্ব মানে নির্ভরতা, ভাগাভাগি করে নেওয়া সুখ-দুঃখ। সেসব জানা আছে আমাদের। আবার বন্ধুরা যে বন্ধুর ব্যবহারিক জিনিসেও ভাগ বসায়, তাও নতুন নয়। এই যেমন নোমান আর নিপুণের কথা ধরা যাক। মিরপুরের একটি হোস্টেলে থাকেন তাঁরা। কখনো নোমান বেরিয়ে যান বন্ধুর শার্ট পরে, কখনো নিজে ঘুম থেকে উঠে দেখেন বন্ধুই সাধের স্যান্ডেলটা পায়ে গলিয়ে বেরিয়ে গেছেন! একজন কোনো একটা বই এনে টেবিলে রেখে কোথাও গেছেন এক ফাঁকে, ব্যস এসে দেখতে পাবেন দিব্যি অন্যজন বইয়ের অর্ধেকটা পড়ে এখন কয় পৃষ্ঠা বাকি আছে তা গুনছেন! এমন ভাগাভাগির মাঝেই তো লুকানো থাকে বন্ধুত্বের বিশালতা! হল বা হোস্টেল-জীবন এমন ভাগাভাগির রঙেই রঙিন হয়ে ওঠে বন্ধুত্বগুলো।
নিপা আর সোনিয়া তো ভাগ বসান একে অন্যের গয়নার বাক্সে। মাঝেমধ্যে চিন্তায় পড়ে যান কোনটি কার গয়না?
এই ভাগাভাগিটা যে শুধুই হল, হোস্টেল কিংবা একত্রে থাকা বন্ধুদের মধ্যেই রয়েছে, তা কিন্তু নয়। স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়—সবখানেই যে বন্ধুত্বের মানে একে অন্যের জিনিসে ভাগ বসানো। স্কুলে টিফিনের বাক্সটা বের করামাত্রই কীভাবে হামলে পড়ত বন্ধুরা, তা কি আমরা কেউ ভুলে গেছি! ক্লাসে তিন-চারজন মিলে এক বইয়েই চোখ বুলানো, ক্যানটিনে চায়ের এক কাপেই পাঁচজনের চুমুক, বন্ধুত্বের রং মিশে আছে সবখানে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সিফাত যেমন প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের হেডফোনটা নিয়েই ঢোকেন, ফেরার সময় যে কারটা নিয়ে ফেরেন, তার ঠিক নেই। আবার ক্লাসের ফাঁকে একা গান শুনবেন, তারও উপায় নেই। কোনো একজন বন্ধু এসে এক কানের ইয়ারফোন খুলে নিয়ে শুনতে শুরু করেন। সিফাত বলেন, ‘ওদের সামনে রেগে যাই। এমন ভাব দেখাই যাতে ওরা মনে করে বিরক্ত হচ্ছি। অবশ্য ওরা আমার এই কপট রাগকে পাত্তাও দেয় না।’
বন্ধুদের এই ভাগাভাগির জন্য ফেসবুক তো খুলে দিয়েছে নতুন এক দিগন্ত, মুক্ত এক পৃথিবী! এই মুহূর্তে শুনতে থাকা গানটা বন্ধুদেরও শোনাতে শেয়ার বাটনে একটামাত্র ক্লিকই যথেষ্ট। খুব ভালো লাগছে কোনো সিনেমা, লিংকটা ফেসবুকে শেয়ার করলে বন্ধুরাও ভাগ পেয়ে যায় সেই ভালোলাগার। আনন্দময় কোনো ছবি, দারুণ কোনো বই, মজার ভিডিও অথবা শুধুই অনুভূতি—অনলাইন বন্ধুদের সঙ্গে সবকিছুই এখন ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়!
মারুফ আর আরিফ আবার এক সেট বই কিনেই দিব্যি চালিয়ে নিচ্ছেন পড়াশোনা।
বাহুল্য নয়, বন্ধুত্বটা তো ভাগাভাগিতেই মিষ্টি হয়। বন্ধু থাকলে কি এত কিছু লাগে?