
* যে বাসে ড্রাইভারের মাথার ওপরের ফ্যান ছাড়া বাকি সব
ফ্যান নষ্ট থাকে, তাকেই লোকাল বাস বলে।
* লোকাল বাস এমন জায়গা যেখানে ঝোলে মানুষ, অথচ বলার সময় বলা হয় বাদুড় ঝোলার কথা।
* অনেকেই মনে করে, কোনো কিছুর শুরুতে ডান পা দেওয়া নিয়ম। শুধু লোকাল বাসের হেলপার এর ব্যতিক্রম।
* পঙ্গু হাসপাতালের ডাক্তার না হয়েও লোকাল বাসের হেলপার বিনা দ্বিধায় মানুষের ‘পা’ চেয়ে বসেন। প্রায়ই তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘আগে বাম পা দ্যান, বাম পা দ্যান।’ তাঁদের কথা অনুযায়ী পা দিতে মানুষ আপত্তিও করে না।
* লোকাল বাস সাম্যবাদীদের জায়গা। এখানে ড্রাইভার, কন্ডাক্টর কিংবা হেলপার বলে আলাদা পোস্ট নেই। যিনি একটু আগে কন্ডাক্টর হয়ে ভাড়া তুলছিলেন, মাঝরাস্তায় গিয়ে দেখা যায়, তিনি ড্রাইভারের সিটে বসেছেন আর ড্রাইভার উঠে দরজায় হেলপারি করছেন।
* শুধু লোকাল বাসেই ‘সংরক্ষিত মহিলা আসন’ লেখা সিটে প্রায়ই কিছু ‘মহিলা’কে বসে থাকতে দেখা যায়, বাহ্যিক গঠনে যাঁরা দেখতে অবিকল পুরুষের মতো।
* পিঁপড়া একমাত্র প্রাণী যে নিজের দেহের ওজনের তুলনায় ৮ গুণ ভারী বস্তু বহন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে লোকাল বাস পিঁপড়াকেও হার মানিয়েছে। ঢাকার বাসগুলো তার প্রমাণ।
* লোকাল বাস একমাত্র জায়গা যেখানে ৪০ সিটে ৫০ জন বসার পরও কন্ডাক্টর নিশ্চিন্তে ‘সিট খালি’ বলে ডেকে ডেকে লোক তুলতে পারেন।
* অন্য যেকোনো যানবাহনের চেয়ে লোকাল বাস দেশের ছাত্রছাত্রীদের কথা বেশি ভাবে। কারণ, শুধু এখানেই স্টুডেন্ট ‘হাফ’ চলে।
* ছোট, বড়, মাঝারি—পা যে সাইজেরই হোক না কেন, ইতিহাসে এখনো কেউ লোকাল বাসে স্বাভাবিকভাবে পা মেলে বসতে পারেনি।
* ১০ সেকেন্ড আগে ভাড়া নিয়ে ভুলে গিয়ে আবার ভাড়া চাওয়ার অলৌকিক ক্ষমতা শুধু লোকাল বাসের কন্ডাক্টরদেরই আছে।
* দাঁড়িয়ে ঘুমানো প্রাণীদের মধ্যে ঘোড়ার পরই মানুষের স্থান। তবে ঘোড়া যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে ঘুমাতে পারলেও মানুষকে শুধু লোকাল বাসেই দাঁড়িয়ে ঘুমাতে
দেখা যায়।
* ‘ভাড়া পরে নিয়ো’ লোকাল বাসের ভেতর বহুল উচ্চারিত একটা বাক্য।
* রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা জমানোর জন্য চায়ের দোকানের চেয়ে যানজটে আটকে থাকা লোকাল বাস বেশি জনপ্রিয়।
* লোকাল বাসের যেকোনো যাত্রীই গাড়ি চালানোতে ড্রাইভারের চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখেন। পার্থক্য শুধু যাত্রীরা গাড়ি চালাতে পারেন না।
* লোকাল বাসের যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি দ্বিধায় ভোগেন। আস্তে গাড়ি চালালে ড্রাইভারকে ধমক দেন, ‘ওই ব্যাটা, গরুর গাড়ি চালাস?’ আবার ড্রাইভার জোরে গাড়ি চালালেও ধমক দেন, ‘ব্যাটা, নিজেকে অ্যারোপ্লেন পাইলট ভাবস!’
* লোকাল বাস একটা অলাভজনক ব্যবসা। কারণ, কন্ডাক্টরকে প্রতিদিনই বলতে শোনা যায়, ‘সারা দিন টিরিপ মাইরাও এহনো তেলের ট্যাকাই উঠে নাই।’
* বেকারত্ব দমনে লোকাল বাসের ভূমিকা অপরিসীম। অধিকাংশ বাসের জানালা এবং সিটের গায়ে ‘আপনি কি পার্টটাইম চাকুরি খুঁজছেন’–সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে।
* লোকাল বাসের হেলপার, কন্ডাক্টরদের সঙ্গে আমাদের সমাজের কারও কারও যথেষ্ট মিল আছে। বাসে তোলার সময় আদর করে, গায়ে-মাথায় হাত বোলায়, নামানোর সময় মোটামুটি ধাক্কা দিয়ে নামায়।