বন্ধ হয়ে গেছে ২৪ কারখানা

কক্সবাজার বিসিক শিল্পনগরে কারখানা না করে জমি ফেলে রাখা হয়েছে l প্রথম আলো
কক্সবাজার বিসিক শিল্পনগরে কারখানা না করে জমি ফেলে রাখা হয়েছে l প্রথম আলো

কক্সবাজারে বিসিক (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন) শিল্পনগর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৪ সালে। ৮৭টি প্লটের মধ্যে শিল্প কারখানা গড়ে তোলা হয় ৩৯টিতে। কিন্তু সেই থেকে আর বাড়েনি কারখানা, দিনে দিনে কমেছে। বর্তমানে ঠেকেছে ১৫টিতে। বাকি ২৪টি বন্ধ হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিসিক শিল্পনগর প্রতিষ্ঠা হলেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। চলাচলের সড়ক পর্যন্ত ঠিকভাবে সংস্কার করা হয় না। এ ছাড়া শিল্প প্লটের অনেকগুলো খালি পড়ে থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে এটি কাঙ্ক্ষিত রূপ পায়নি।
বিসিক সূত্র জানায়, দেশের ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দরিদ্র লোকজনের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে শহরতলির ঝিলংজা ইউনিয়নের মুহুরীপাড়ায় ২১ দশমিক ৬৯ একর জমিতে কক্সবাজার বিসিক শিল্পনগর প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৮০ সালে এই শিল্পনগরে ৯৩টি প্লট তৈরি করে শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য ৮৭টি প্লট ( প্রতিটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বরাদ্দকৃত প্লটের মাত্র ৩৯টিতে শিল্প ইউনিট গড়ে তোলা হয়। অন্য প্লটগুলো খালি ফেলে রাখা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিসিকে ঢোকার প্রধান সড়কটি জরাজীর্ণ, খানাখন্দে ভরা। সড়কের পাশে বিসিক ভবনটিরও নাজুক পরিস্থিতি। পুরোনো ভবনের ভেতরে দেয়ালের পলেস্তারা ধসে পড়ছে। ৩৯টি শিল্পকারখানার মধ্যে নিরিবিলি ফিশ ফিড মিলস, মিনহার ফিশারিজ, কুলিয়ারচর সি ফুডস, নিরিবিলি পোলট্রিসহ ১৫টি কারখানা চালু রয়েছে। বন্ধ হয়েছে ২৪টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্বর্ণালী ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরি, এ রহমান অয়েল, কক্সবাজার পলিথিন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, অ্যাকোয়া ফিশারিজ, কক্সবাজার ফ্লাওয়ার মিল, সোনালী ফুড প্রোডাক্টস ও ঈগল ফ্লাওয়ার মিল।
বিসিক কার্যালয়ের পাশে নিরিবিলি ফিশ ফিড মিলস লিমিটেড ও নিরিবিলি পোলট্রি ফিড মিলসের কারখানা। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ৪০ জন শ্রমিক মাছ চূর্ণ করে মাছের খাদ্য তৈরি করছেন।
নিরিবিলি ফিশ ফিড ও পোলট্রি ফিড মিলসের ব্যবস্থাপক মোখলেছুর রহমান বলেন, প্রতিদিন এই কারখানা থেকে ৫০ মেট্রিকটন মাছের খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে। প্রতি মাসে ৯০০ টন। জেলায় মাসে খাদ্যের প্রয়োজন ৬০০ মেট্রিকটন। অবশিষ্ট খাদ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
মিনহার ফিশারিজ লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক জামিল আহমেদ বলেন, মাছের জোগান না থাকায় ব্যবসা সফল হচ্ছে না। কাঁচামালের স্বল্পতা ও বিসিকের অবকাঠামোগত নানা সমস্যার কারণে কারখানাগুলোতে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। লোকসানের মুখে বেশির ভাগ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যান্য কারখানাও যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সূত্র জানায়, এই শিল্প নগরে বর্তমানে কর্মরত আছেন এক হাজার ৪০২ জন শ্রমিক। এর মধ্যে নারী ৪৫০ জন। ২০১২-১৩ অর্থবছরে এই শিল্পনগর থেকে সরকার রাজস্ব আয় করে আট কোটি ছয় লাখ ৯৬ হাজার টাকা। কারখানা বন্ধ হওয়ায় ইতিমধ্যে প্রায় এক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।
শ্রমিক রেখা রানী দাস বলেন, বিসিক শিল্পনগরে চার শতাধিক নারীশ্রমিক কাজ করেন। কিন্তু তাঁদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। বাড়ি ফিরতে হয় সন্ধ্যার আগেই। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বখাটেদের উৎপাত লেগেই থাকে।
ব্যবসায়ী ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, অন্তত ২০ জন প্রভাবশালী প্লটের বিপরীতে শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন। অনেকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান তৈরি না করে প্লট অন্যদের চড়া মূল্যে বিক্রি করেছেন অথবা খালি ফেলে রেখেছেন।
এ ব্যাপারে বিসিক কর্তৃপক্ষ নীরব। তা ছাড়া ঋণ পরিশোধ না করায় বিসিকের ১২টি শিল্প ইউনিটের বিরুদ্ধে মামলা করেছে কয়েকটি বাণিজ্যিক ব্যাংক।
বিসিক কক্সবাজার শিল্প সহায়ক সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) দিলদার আহমেদ চৌধুরী বলেন, কারখানা স্থাপনের নামে যাঁরা প্লট বরাদ্দ নিয়ে ফেলে রেখেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে বিসিক দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিসিকে যাতায়াতে ভাঙা সড়কের মেরামতকাজ চলছে। নানা অবকাঠামো নির্মাণ ও জরাজীর্ণ ভবনেরও সংস্কারকাজ শুরু করা হবে। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আর সার্বিক নিরাপত্তার ব্যাপারে পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।