অন্দর
বর্ষায় অন্দর ঝকমকে রাখবেন যেভাবে
কিছু সহজ পদ্ধতিতে চললে বর্ষায় পাবেন শুষ্ক আর পরিষ্কার অন্দর
খুব প্রয়োজন না হলে বর্ষাকালে বেশির ভাগ সময় বাড়িতে থাকতেই সবাই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু মুশকিল হলো, দিনভর বৃষ্টি আর আর্দ্রতার কারণে আমাদের ঘরবাড়ির অন্দরমহল কেমন যেন স্যাঁতসেঁতে আর চুপসে থাকে, যার প্রভাব আমাদের শরীর–মনে গিয়েও পড়ে। কিন্তু কিছু সহজ পন্থা অনুসরণ করে দারুণভাবে আপনি এসব সমস্যা মোকাবিলা করতে পারেন।
দরজা, জানালা ও ছাদ
প্রথম যে জিনিসটি মেরামত করা জরুরি, তা হলো বাড়ির ছাদ। আপনার ছাদ সঠিকভাবে পরীক্ষা করুন। সমস্ত ড্রেন ও বৃষ্টির জলের পাইপগুলো পরিষ্কার করুন, যাতে সেগুলোতে কোনো ময়লা আটকে না থাকে এবং ছাদে জল জমে না থাকে। বারান্দা ও বারান্দার পানি যাওয়ার ঝাঁজরি পরিষ্কার করতে ভুলবেন না।
বাড়ির দরজা ও জানালার যেকোনো ফাঁক পুডিং দিয়ে বন্ধ করুন। অনেক সময় কাঠের দরজা বা জানালা আর্দ্রতার কারণে বেড়ে আটকে যায়। তেমন হলে মিস্ত্রি দিয়ে ঠিক করে নিন।
আসবাব
বৃষ্টির সময় কাঠের জিনিসগুলো সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়। আর্দ্রতা শোষণ করে এগুলো ফুলে উঠতে থাকে। ছত্রাকের কারণে বার্নিশ ও ল্যাকার করা আসবাবে সাদা সাদা দাগ পড়ে যায়। এটি প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের আসবাব স্প্রে পাওয়া যায়।
যদি আপনার মনে আসবাব সারাই বা রং করানোর কোনো পরিকল্পনা থাকে, তবে বর্ষার এই কয়েক মাসের জন্য স্থগিত রাখুন। নতুন কোনো কাঠের কাজ করাবেন না। বৃষ্টির কারণে বাতাসের স্যাঁতসেঁতেভাব আপনার আসবাবকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে। আর্দ্রতার সংস্পর্শ এড়াতে পারে আপনার কাঠের সব আসবাব দেয়াল থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে রাখুন।
সুগন্ধ
বর্ষায় বাড়িতে একধরনের স্যাঁতসেঁতে গন্ধ পাওয়া যায়। আপনার বাড়ি থেকে যেকোনো দুর্গন্ধ দূর করতে লেবু ও ভিনেগার ব্যবহার করুন। আলমারিতে কর্পূরের বল বা নিমপাতা রাখলে আপনার জামাকাপড় ছত্রাক ও দুর্গন্ধ থেকে বাঁচবে।
ভারী পর্দা সরান
বর্ষার দিনগুলো এমনিতেই যথেষ্ট অন্ধকারাচ্ছন্ন। তাই জানালা দিয়ে ঢোকা সূর্যালোককে আটকাতে আপনার ভারী পর্দার প্রয়োজন নেই। সেগুলো হালকা আর স্বচ্ছ পর্দা দিয়ে বদলে ফেলুন। উজ্জ্বল রং ব্যবহার করুন, যা আপনার ঘরে একটি আনন্দময় পরিবেশ এনে দেবে।
বিশেষ কিছু টিপস
বাড়িতে তাজা বাতাস ঢুকতে দিন। সব সময় দরজা-জানালা আটকে না রেখে খুলে রাখুন, যাতে তাজা বাতাস সঞ্চালিত হয় এবং আপনার বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ দূরে থাকে।
মেঝে ভেজা রাখবেন না। ভেজা মেঝে ঝুঁকিপূর্ণ। যে কেউ পিছলে আঘাত পেতে পারেন। আর ভেজা মেঝে জীবাণু আর ছত্রাক বৃদ্ধি করে। তাই সব সময় মেঝে মুছে শুকনা রাখুন।
শক্তিশালী জীবাণুনাশক দিয়ে নিয়মিত ওয়াশরুম পরিষ্কার করুন। বাজে গন্ধ এড়াতে ও এলাকা শুষ্ক রাখতে এগজস্ট ফ্যান ব্যবহার করুন। ট্যাপ ও ঝরনা শুকিয়ে মুছুন, এসব জায়গা জীবাণুর সেরা প্রজননস্থল। সপ্তাহে একবার বেকিং পাউডার ও ভিনেগার দিয়ে পরিষ্কার করুন, যাতে জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া তৈরি না হয়।
পোকামাকড় ও মাছি তাড়ানোর জন্য খাবার তৈরি করার পর রান্নাঘরের কাউন্টার, চিমনি ও খাবার টেবিল লবণ–ভিনেগার দিয়ে পরিষ্কার করুন।
এই বিষয়গুলো লক্ষ রাখলে প্রতি সপ্তাহে ঘর পরিষ্কার করার জন্য অতিরিক্ত সময় আপনাকে দিতে হবে না। পরিবারের সব সদস্য স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করলে পরিচ্ছন্নতার কাজগুলো শুধু সহজই হবে না, বরং আনন্দদায়কও হয়ে উঠবে। সর্বোপরি, এটি সবার বাড়ি, তাই সবাইকেই অংশগ্রহণ করতে হবে।
বর্ষার আগে ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি, আলগা তার, পুরোনো ভাঙা সুইচ ও অন্যান্য জিনিস ঠিক করে নিন। ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক তার থাকলে পাল্টে ফেলুন। বৈদ্যুতিক সকেটের কাছে জলের ছিদ্র থাকলেও নজর রাখুন।
বর্ষা ঋতু কার্পেটের ব্যবহারের উপযুক্ত সময় নয়। ভেজা জুতা ও আর্দ্র পরিবেশ ছত্রাক ও জীবাণু বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে। অতএব এগুলো মুড়িয়ে কয়েক মাসের জন্য তুলে রাখাই ভালো।
লেখক: স্থপতি