
একটা শিশু যখন অস্বাভাবিক চঞ্চল থাকে তখন আমরা তাকে বলি হাইপারঅ্যাকটিভ বা অতিচঞ্চল। বাচ্চার অতিচঞ্চলতা তার আশপাশের লোকজন বিশেষ করে তার শিক্ষক, বাবা-মায়ের জন্য মাঝেমধ্যে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাঁরা বিব্রতবোধ করেন। নিজেকে স্থির রাখতে না পারা এবং কোনো বিষয়ের প্রতি মনোযোগ না দিতে পারার ফলে অতিচঞ্চল বাচ্চারা নানা সমস্যারও সম্মুখীন হয়। অতিচঞ্চলতার কারণে বাচ্চারা অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকারও হয়। আপনার বাচ্চাও যখন হাইপারঅ্যাকটিভ থাকে তখন আপনাকে সাবধান থাকতে হবে।
বাচ্চার অতিচঞ্চলতা লক্ষ করলেই প্রথম কাজ হবে চিকিৎসকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা। আপনার বাচ্চার কাজকর্ম, অতিচঞ্চলতার লক্ষণগুলো চিকিৎসককে খোলাখুলি জানাতে হবে।
ঠিকভাবে সকালের খাবার খাওয়া
যদি আপনার বাচ্চার শিক্ষকেরা ওর নামে অভিযোগ করে যে ও ক্লাসের মধ্যে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে এবং ক্লাসে অতিচঞ্চল তাহলে বাচ্চাকে প্রতি সকালে স্বাস্থ্যকর খাবার দিন। ক্ষুধা ও ব্লাড সুগারের ওঠানামা করলে বাচ্চা অতিচঞ্চল হয়ে ওঠে।
গাঢ় শ্বাস নিতে শেখানো
বাচ্চাকে বিভিন্ন কিছু শেখানোর পাশাপাশি কীভাবে নিজের দৈনন্দিন জীবনকে সুন্দর করে তোলা যায়, তাও শেখাতে হবে। গাঢ় শ্বাস নিতে শেখানো, ইয়োগা বা মেডিটেশন করার মাধ্যমে কীভাবে নিজের মনকে শান্ত রাখা যায়, তাও বাচ্চাকে শেখানোর দায়িত্ব বাবা-মায়েরই।
বাইরে থেকে ঘুরে আসতে শেখানো
ঘরের মধ্যে নানা কাজে ব্যস্ত থাকে আপনার বাচ্চা। এর মধ্যে কিছু সময় বাইরে হেঁটে আসা আপনার বাচ্চার মনকে শান্ত রাখতে পারে। বাইরে যাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম বাচ্চাকে অতিচঞ্চলতা থেকে দূরে রাখে।
রুটিনের মধ্যে রাখা
আপনার বাচ্চার জন্য একটি রুটিন করে দিন বা ওকে ওর সারা দিন, সারা সপ্তাহ এমনকি ছুটির দিনগুলোর জন্যও রুটিন প্রস্তুত করতে পারেন। সে যখন জানবে তার কখন কী করতে হবে, তখন সে অতিচঞ্চলতা থেকে দূরে থাকবে।
গান শোনানো
সফট মিউজিক বা হালকা গান আপনার বাচ্চার মনকে শান্ত করে তুলতে পারে। তাকে নতুন নতুন গান শুনতে শেখান। তাকে বিভিন্ন ধরনের গান শুনতে শেখান। বাচ্চার হোমওয়ার্কের সময়, রাতের খাবারের সময় বা ঘুমানোর আগে হালকা কিছু ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক চালিয়ে রাখুন।
শান্ত থাকার সময় দিন
বাসায় একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করুন যে সময়ে বাচ্চা অবশ্যই চুপচাপ থাকবে। এই সময়ে ব্যস্ত থাকার জন্য বাচ্চাটি বই পড়তে পারে, ছবির বই দেখতে পারে বা পাজল মেলাতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম
প্রতিদিন ২০ মিনিট ব্যায়াম করলে বাচ্চার স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকে, তেমনই তার মধ্যে একধরনের মানসিক প্রশস্তি চলে আসে। এমনকি শীতের সময়ও ঘরের মধ্যেই হালকা ব্যায়াম করতে পারে সে। নিয়মিত ব্যায়াম বাচ্চার অতিচঞ্চলতা কমিয়ে দেয়।
নিজে শান্ত থাকুন
বাচ্চাকে চুপচাপ রাখতে হলে নিজেকেও চুপচাপ থাকতে হবে। আপনি নিজে যদি বাচ্চার সামনে চিল্লাচিল্লি করেন এবং মানুষের সঙ্গে চিৎকার দিয়ে কথা বলেন তাহলে আপনার বাচ্চাও যে অতিচঞ্চল হয়ে উঠবে, অনেক বেশি কথা বলবে, এটি স্বাভাবিক।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিন্তু অতিচঞ্চলতাকে ভালোভাবে দেখা হয়। বাচ্চার অতিচঞ্চলতা যদি ভালো কাজে ব্যবহার করা যায় তাহলে সে ভবিষ্যতে কর্মঠ হতে পারে।