বাজ থেকে বাঁচব কীভাবে?

.
.

কালবৈশাখীর এই মৌসুমে মাত্র তিন দিনে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বজ্রপাতে প্রায় ৬৫ জন মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় সবাই নতুন করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এত মৃত্যুর এই খবর যুক্তরাষ্ট্রের সিএনএনেও প্রচার পেয়েছে। বাজের তো কোনো টাইমটেবিল নেই। কখন কার মাথায় পড়বে কে জানে? তাই ভয়ের কারণ আছে। পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়া কঠিন, তবে ঝড়-বৃষ্টির সময় কিছু সতর্কতা নিলে ঝুঁকি কমানো যায়। বিজ্ঞানীরা এসব নিয়ে গবেষণা করে অনেক তথ্য দিয়েছেন।
১. আকাশের মেঘে বিদ্যুতের অতিরিক্ত চার্জ সঞ্চিত হয়ে একসময় প্রবল শব্দে মাটিতে নেমে আসে ও বিপরীত চার্জের সঙ্গে মিলিত হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়, এটাই বজ্রপাত। উঁচু গাছ বা দালানকোঠায় বাজ আঘাত হানে। কারণ, মেঘে সঞ্চিত চার্জ সবচেয়ে কম দূরত্বে বিপরীত চার্জের সঙ্গে মিলিত হতে চায়।
২. তাই বজ্র-বিদ্যুতের সময় আপনি বাইরে খোলা বিস্তৃত প্রান্তরে বা নদীতে নৌকায় থাকলে বাজ আপনার মাথায় পড়বে। কারণ, আপনিই সেখানে সবচেয়ে উঁচু বস্তু! তাই এ সময় ঘরের ভেতর থাকা নিরাপদ। বাসায় বাজ পড়লেও তা টিন বা ইটের দেয়ালের মাধ্যমে মাটির সঙ্গে সহজে যুক্ত হবে, আপনার তেমন ক্ষতি হবে না। শহরে উঁচু ভবনের চারপাশে আর্থিং ব্যবস্থা থাকে। বিদ্যুৎ পরিবাহী তামার তারের এক মাথা মাটির গভীরে পুঁতে রাখা হয়, অন্য প্রান্ত থাকে ছাদের ওপরে, চোখা শিকের আকারে। এতে বাজের হাত থেকে ভবন ও ঘরের মানুষ রক্ষা পায়। গ্রামে বাড়ির চারপাশে উঁচু সুপারি ও নারকেলগাছ লাগানো হয়, যেন বাজ পড়লে সেখানেই পড়ে, বাড়ি রক্ষা পায়।
৩. এমন কুসংস্কার আছে যে বজ্রাঘাতে মৃত ব্যক্তির শরীরে দামি পাথর থাকে, তাই লাশ চুরি হওয়ার ভয় থাকে। আত্মীয়স্বজন কবর পাহারা দেয়। আসলে বাজ কোনো বস্তু না যে আকাশ থেকে পড়বে। এটা শুধুই বিদ্যুৎ চার্জ। বাজের সঙ্গে কোনো দামি পাথরের সম্পর্ক নেই।
৪. আমাদের দেশের চেয়েও ভয়াবহ বাজের দেশ হলো দক্ষিণ আমেরিকার ভেনেজুয়েলা। ওই দেশের জুলিয়া রাজ্যে ক্যাটাটুম্বো নদীর তীরবর্তী এলাকায় বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে প্রায় ৩০০ দিনই বজ্রপাত ঘটে। নাসা এই এলাকাকে বিশ্বের ‘বজ্রপাতের রাজধানী’ বলে ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, সায়েন্স টাইমস, ১৭ মে ২০১৬।
৫. ওই এলাকার ভূমির গঠনের কারণেই এত বজ্রপাত হয়। সেখানে লেক মারাখায়বোর চারপাশ ঘিরে দক্ষিণে রয়েছে ঘোড়ার খুরের মতো আন্দিজ পর্বতমালা ও উত্তরে ক্যারিবিয়ান সাগর। ঠান্ডা পার্বত্য বাতাস আর সাগর ও লেকের গরম বাতাসের সংঘর্ষ বজ্র-বিদ্যুতের আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি করে।