বাবা–মায়েরা কেন বৃদ্ধ হয়!
পাঠকের সুখ–দুঃখ, হাসি–আনন্দ, পছন্দ, ভালোলাগা, ভালোবাসাসহ যে কোনো না বলা কথা শুনতে চায় মনের বাক্স। প্রতি সপ্তাহে পাঠকের পাঠানো সেসব লেখা থেকে নির্বাচিত কিছু লেখা আজ প্রকাশিত হলো এখানে
মাকে মনে পড়ে
আম্মা, দুই মাস হলো আমাদের ছেড়ে তুমি চলে গেছ। তোমাকে ছাড়া আমরা তিন ভাই কীভাবে সময় পার করছি, ভাবতেও অবাক লাগে। অথচ দিনে অন্তত একবার তোমার সঙ্গে কথা না বলে থাকতে পারতাম না। আমাদের মানুষ করতে কত কষ্ট করেছ। শিক্ষকতার পাশাপাশি সংসার সামলে আমাদের পড়িয়েছ। মাত্র পাঁচ দিনের এক টর্নেডো আমাদের সবকিছু এলোমেলো করে দিল। আশা করেছিলাম হাসপাতালের সিসিইউ থেকে তোমাকে সুস্থ করে বাড়িতে নিয়ে আসব। কিন্তু ষষ্ঠ দিন সকালে তুমি আমাদের তিনজনকে কিছু না বলে চলে গেলে। তোমার লিটু, সবু আর শামুর সঙ্গে কথা না বলে তুমি কী করে একলা আছ! এপারে অনেক কষ্ট করেছ। ওপারে ভালো থেকো।
লিটন, সবুজ ও শামীম, পাড়েরহাট, পিরোজপুর
এভাবেই কাটছে জীবন
রাতের অন্ধকারে দূরের টাওয়ারে টিপটিপ করে জ্বলতে থাকা লাল আলো দুটি দেখছি। এই আলো আমার বেশ পরিচিত। এমনিতে টাওয়ার দুটির দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার। কিন্তু অদ্ভুতভাবে রাতের বেলায় তারা দূরত্ব ঘুচিয়ে খুব কাছে চলে আসে। মানুষের ক্ষেত্রে বোধ হয় এটা সম্ভব নয়। এই দুই টাওয়ারের মাঝে আরও নানা মানুষের বসতি। কোনো বসতির আলো নিভে গেছে, গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন তারা, আবার কোনোটাতে জ্বলছে আলো। দিনের সব হিসাব চুকিয়ে তখনো ঘুমাতে যায়নি তারা। পরিত্যক্ত পুকুরে ঝিঁঝি পোকার দল তাদের সুরেলা কণ্ঠে চারদিক মাতিয়ে রাখার মহান দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আমি হালকা বাতাসের গন্ধ গায়ে মাখি। এ সময়ের বাতাসটা অন্য সময়ের চেয়ে একদম আলাদা। একধরনের প্রশান্তি বিরাজ করে। বেলকনির গ্রিলের ফাঁক দিয়ে আমি তাকিয়ে থাকি, ওই দুই আলোর মাঝবরাবর। জীবনের নানা দৃশ্যপট সেখানে ফুটে ওঠে রুপালি পর্দার মতো। হিসাব মেলাই, দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি, হাসি, এভাবেই একসময় পরদিন জেগে ওঠার জন্য ঘুমানোর প্রস্তুতি নেই।
বাঁধন পাল, বালিয়াকান্দি, রাজবাড়ী
বাবা–মায়েরা কেন বৃদ্ধ হয়!
ধীরে ধীরে বাবার মাথার চুলগুলো সাদা হতে শুরু করেছে। মা–ও আজকাল দূরের কিছু দেখতে বেশ ঝামেলায় পড়েন। বছর কয়েক আগেও বাবা বাজার করে ভারী দুটি ব্যাগ দুই হাতে নিয়ে দিব্যি হেঁটে বাড়ি চলে আসতেন। ছোটবেলায় হাতে হাত রেখে কলম ঘুরিয়ে একদিন লেখা শেখাতেন মা। এখন মায়ের চোখে বইয়ের ওই অক্ষরগুলো বড্ড অস্পস্ট। লাঠি ছাড়া এখন তাঁর পক্ষে হাঁটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গায়ের চামড়ায় ভাঁজ পড়ে গেছে। মাঝেমধ্যে হাঁটুর ব্যথায় চিৎকার করে ওঠেন। অনেক ডাক্তার দেখিয়েও ঠিক হচ্ছে না। এখন মায়ের স্মৃতিশক্তি অনেকটা লোপ পেয়েছে। সামনে গেলেও সহজে চিনতে পারেন না। মুখটা চোখের সামনে নিয়ে যখন চিনতে পারেন, জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্ট বোধ হয় এখানেই, সন্তান হয়ে চোখের সামনে মা–বাবাকে বৃদ্ধ হতে দেখা।
ইজাজ আহমেদ, তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ