আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এ দিবস উপলক্ষে ছাপা হলো পাঠক বন্ধুদের একটি কবিতা ও তিনটি গল্প
বাবা আসছে

লোকটা থাকে অন্ধকারের ভেতর। একা একা দরজা-জানালা বন্ধ করে বসে থাকে সারা দিন। কারও সঙ্গে কথা বলে না খুব একটা। তবে লোকটাকে ঘিরে গ্রামের সবার ভেতর গুঞ্জন আছে। সে নাকি ভবিষ্যৎ বলতে পারে। সে কারণেই অনেকটা পথ একা একা হেঁটে এসেছে আবিদ। কাউকে না জানিয়ে গাঁয়ের মেঠোপথ ধরে হেঁটে এসেছে সে সকালেই। ‘আহা, লোকটা যদি তার হারিয়ে যাওয়া বাবার খবরটা দিতে পারত!’ আবিদ খুব ভয়ে ভয়ে সেই লোকটার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আর কী আশ্চর্য লোকটা আবিদকে দেখে মাথা তুলে তাকায়।
ফিসফিস করে বলে, ‘কী গো খোকা, কেন এসেছ আমার কাছে?’
আবিদ আমতা-আমতা করে বলে, ‘আমার বাবা যুদ্ধে গেছে কয়েক মাস হলো। বাবাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে। সবাইকে বলেছি কিন্তু কেউ বাবার কোনো খবর দিতে পারছে না। আপনি কি বাবাকে এনে দিতে পারবেন?’
লোকটা হাসে। রহস্যময় হাসি। চোখ বন্ধ করে কী যেন ভাবে। তারপর আবিদের দিকে তাকিয়ে হাসে। আবিদ সরু চোখে লোকটার দিকে তাকিয়ে কৌতূহলী প্রশ্ন ছোড়ে, ‘বাবার কি কোনো খবর বলতে পারবেন?’
‘পারব!’
‘সত্যি?’
‘হুম। তোমার বাবা খুব ভালো আছেন। যুদ্ধের মাঠে শত্রুর সঙ্গে লড়াই করছেন। খুব ক্লান্ত। তাই তোমার কাছে আসতে পারছেন না। তবে খুব শিগগির ফিরে আসবেন তোমার বাবা। দেশ স্বাধীন করে ফিরে আসবেন।’
লোকটার কথা শুনে আবিদ কী রকম মোহাবিষ্ট হয়ে তাকায়, ‘সত্যি বাবা আসবে?’
‘আসবেই।’
আবিদ আর দাঁড়ায় না। দৌড়ে আসে নিজের বাড়ির দিকে। শুধু বারবার মনে হয় বাবা আসছে। কিন্তু মাকে বলতেই মায়ের চোখ দিয়ে শুধু জল ঝরে। আবিদ আবার মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগে একটা স্বপ্নও দেখল আবিদ। একটা লাল ঘোড়ায় করে সবুজ পাঞ্জাবি পরে তার বাবা এসেছে। আবিদ বাবাকে দেখে দৌড়ে তার কোলে ঝাঁপ দেয়। স্বপ্নটা দেখেই আবিদ লাফিয়ে ওঠে। ঘুম থেকে উঠে সে শোনে তার মায়ের চিৎকার—‘আবিদ, দেশ স্বাধীন হইছেরে বাবু। শিগগির চল মোড়ের রাস্তায়। শুনলাম তোর বাবা আসতেছে।’
আবিদের কোনো দিকে খেয়াল থাকে না। মায়ের পেছন পেছন সেও রুদ্ধশ্বাসে দৌড়াতে থাকে। চোখে-মুখে চাপা উত্তেজনা। মনে মনে বলতে থাকে সে, আমার বাবা আসছে। আজ বাবা আসছে।