বাহারি ছাতা, ছাতার বাহার

বর্ষাকালে ছাতা বিক্রির ধুম পড়ে যায়। বায়তুল মোকাররম মার্কেট থেকে তোলা ছবি l আশরাফুল আলম
বর্ষাকালে ছাতা বিক্রির ধুম পড়ে যায়। বায়তুল মোকাররম মার্কেট থেকে তোলা ছবি l আশরাফুল আলম

রোদ অনেকটাই বাঙালির গা সওয়া। রোদে পুড়তে রাজি, তবু মাথার ওপর ছাতা মেলতে গড়িমসির অন্ত নেই। তবে মাথায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়লে সেই গা ছাড়া ভাবটি আর থাকে না। তখন ঘরের কোণে পড়ে থাকা ছাতাটির খোঁজ পড়ে। নবাবপুর রোডের পাইকারি ছাতার দোকান আন্না জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. রুবেল বলছিলেন, ‘এ কারণে আমাদের দেশে গরমে ছাতার ব্যবসা হয় না। ছাতার বিক্রিবাট্টা চলে আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস।’
রেকর্ড ভাঙা গরম পড়েছিল এবার গ্রীষ্মে। বর্ষা শুরু হয়েছে দেরিতে। ফলে এ বছর ছাতার ব্যবসায় মন্দা বলেই জানালেন ব্যবসায়ীরা। অথচ ইতিহাস জানাচ্ছে ছাতার উদ্ভাবন হয়েছিল রোদ ঠেকাতেই। খ্রিষ্টজন্মের প্রায় ১২০০ বছর আগে মিসরে যে ছাতার চল হয়েছিল, তা ব্যবহৃত হতো রাজাগজা ও অভিজাতদের খররোদ থেকে রক্ষার নিমিত্তে। রোদ ঠেকানো ছাতাকে বলা হতো ‘প্যারাসোল’। ‘আমব্রেলা’ বলে যে ছাতাটির সঙ্গে এখন আমাদের ঘনিষ্ঠতা, সেটি তৈরি হয়েছিল বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে।
শ্রাবণ তো যায় যায়। বৃষ্টির বিপত্তি থেকে গা বাঁচাতে ছাতার সাহচর্য দরকার হবে আরও মাস খানেক। অনেক রকম ছাতাই আছে বাজারে। লম্বা বাঁটের সাবেকি ছাতা ‘বাংলা ছাতা’ বলে যার পরিচিতি, এগুলোর চল এখন কমে এসেছে। নবাবপুরের ছাতার পাইকারি দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল, চীনের তৈরি হরেক রকমের ভাঁজ করা ছাতা বিকোচ্ছে প্রচুর। এসব ছাতা দুই ভাঁজ ও তিন ভাঁজ করে রাখা যায়। ছাউনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বিভিন্ন রঙের একরঙা ও নকশা করা প্যারাসুট কাপড়। মানভেদে দুই ভাঁজের ছাতার দাম ১৬০ থেকে ৫৫০ টাকা। তিন ভাঁজের ছাতার দাম ৩৫০ থেকে ১১০০ টাকা। আমদানিকারকেরা চীন থেকে এসব ছাতা এনে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের নামে বাজারজাত করছেন। এটলাস, মুন, শংকর, রহমান—এসব প্রতিষ্ঠানের নামে চলছে ভাঁজ করা ছাতা।
বাংলা ছাতা তৈরি হয় দেশেই। সেই আদ্দিকালের কাঠের বাঁটওয়ালা কালো সুতি কাপড়ের ছাউনি দেওয়া ২৬ ইঞ্চি ঘেরের ছাতার দাম ১৮০ টাকা। লোহার শিকের ৩০ ইঞ্চি ঘেরের বাংলা ছাতার দাম ৩৫০ থেকে ৭৫০ টাকা। বাংলা ছাতা চলে কম। বিক্রেতারা জানালেন, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোনাকাটার ক্ষেত্রে বাংলা ছাতা কিনে থাকে। এটাই বাংলা ছাতার প্রধান বিক্রি। ‘শরিফ ছাতা’, ‘ইজতেমা ছাতা’ ও ‘এটলাস ছাতা’ বাংলা ছাতার এই তিনটি প্রধান ব্র্যান্ড। বিখ্যাত ‘মহেন্দ্র দত্তের’ ছাতা এখন দুর্লভ। ভারতের মহেন্দ্র দত্তের বাংলা ছাতাই ছিল এককালে বর্ষাকালে বাঙালির বিশ্বস্ত সঙ্গী। ঐতিহ্য অনুরাগের বশবর্তী হয়ে মহেন্দ্র দত্তের ছাতা দিয়ে মাথা ঢাকতে চাইলে নবাবপুরে দু-একটি দোকানে পাওয়া যাবে বটে, তবে তার দাম পড়বে ১২০০ টাকা থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত। এই ছাতাগুলো অবশ্য খুব টেকসই। তবে তাতে কী যায় আসে। দিনে দিনে মানুষের রুচি-অভ্যাসও তো বদলে গেছে। কাজের সময় বোতাম চেপে মাথার ওপর মেলে ধরা, কাজ ফুরোলে ভাঁজ করে হাতব্যাগে পুরে ফেলার মতো জিনিস পেলে কে যাবে ঢাউস আকারের সাবেকি আমলের ছাতা বয়ে বেড়াতে? উপরন্তু মাথার ওপর মেলে ধরা এসব বাহারি ছাতা সাজসজ্জার বাহারও খুলে দেয়।