বিতর্কে অনন্য জুনায়েদ

বিতার্কিক জ​ুনায়েদ আহমদ চৌধুরী l প্রথম আলো
বিতার্কিক জ​ুনায়েদ আহমদ চৌধুরী l প্রথম আলো

চট্টগ্রামের বিতর্ক অঙ্গনের অতি পরিচিত নাম জুনায়েদ। শুধু কি বিতর্ক? উপস্থাপনা, ব্র্যান্ডিং, কুইজ প্রতিযোগিতা—সর্বত্র রয়েছে তাঁর দৃপ্ত পদচারণ। পুরো নাম জুনায়েদ আহমদ চৌধুরী। ডাকনাম কৌশিক। সবার কাছে জুনায়েদ কৌশিক নামেই বেশি পরিচিত তিনি।
সম্প্রতি জুনায়েদের সঙ্গে এক আড্ডায় উঠে আসে তাঁর সাফল্যের নানা দিক। বিতর্ক, সংগঠন, পড়াশোনা—সবকিছুই চালাচ্ছেন সমান তালে। এর মাঝেও সময় পেলে বই পড়েন বলে জানালেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর বিতার্কিক পরিচয়ই বড় হয়ে ওঠে। কখন থেকে শুরু? জুনায়েদ জানান, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় বিতর্কের হাতেখড়ি তাঁর। সেবারই প্রথম বিটিভির জাতীয় স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সাফল্য পান। এরপর চর্চাটা ছাড়েননি আর। তারপর স্কুলেই যুক্ত হন বয় স্কাউট, যুব রেড ক্রিসেন্টসহ নানান সেবামূলক কর্মকাণ্ডে।
দীর্ঘ পথপরিক্রমায় জুনায়েদের সাফল্যের তালিকা বেশ লম্বাই বলতে হবে। জাতীয় শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতায় উপস্থিত বক্তৃতা বিভাগে জাতীয় পুরস্কার অর্জনের পাশাপাশি রাকাব-টিএমএস আন্তস্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন, জাতীয় বিতর্ক উৎসব-২০০৮–এ বারোয়ারি বিতর্ক বিভাগে শ্রেষ্ঠ বিতার্কিক, আইআইইউসি-বিসি ক্লাব বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন, ইউএস এইড-প্ল্যান বাংলাদেশ আন্তবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যামিপয়ন, টিআইবি আয়োজিত আন্তক্লাব বিতর্কে রানারআপ এবং উইকিপিডিয়া-আন্তবিশ্ববিদ্যালয় কুইজ প্রতিযোগিতায় রানারআপ হন তিনি। এ ছাড়া দৃষ্টি-ডিবেট প্রিমিয়ার লিগে পর পর দুবার বর্ষসেরা বিতার্কিকও হয়েছেন তিনি।
বিতর্ক ও কুইজের পাশাপাশি ব্র্যান্ডিং কনটেস্টেও রয়েছে জুনায়েদের সাফল্য। বেস-ক্যাপিটাল বিজনেস আইডিয়া ও ব্র্যান্ডিং কনটেস্টে চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। এ ছাড়া বাংলা লায়ন-দৃষ্টি আয়োজিত বিজনেস আইডিয়েশন প্রতিযোগিতায় (ব্রেইনস্ট্রর্মিং) রানারআপ, বার্জার পেইন্টস ব্র্যান্ডিং কনটেস্টে দ্বিতীয় রানারআপও হন এই মেধাবী তরুণ।
সামাজিক দায়দায়িত্ব পালনে সর্বদা উদ্যোগী জুনায়েদ বয় স্কাউট ও যুব রেডক্রিসেন্টের সদস্য হিসেবে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়কবলিত বিভিন্ন এলাকায় আর্তমানবতার সেবায় পালন করেছেন স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব। সাংগঠনিকভাবে বর্তমানে তিনি দৃষ্টি-চট্টগ্রামের মিডিয়া ও কমিউনিকেশন সম্পাদক। ইতিমধ্যে তিনি অংশ নিয়েছেন বেশ কয়েকটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে। সেসবের মধ্যে মডেল ইউনাইটেড নেশনস সম্মেলন অন্যতম।
উপস্থাপনাতেও সপ্রতিভ জুনায়েদ। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রেও উপস্থাপনার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। নানামুখী ব্যস্ততা সত্ত্বেও পড়াশোনায় সিরিয়াস জুনায়েদ। আগ্রাবাদ হাতেখড়ি স্কুল থেকে ২০০৫ সালে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং এইচএসসিতে ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৮০ পেয়েছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন এমবিএতে পড়ছেন।
অবসরে বই পড়তে ভালোবাসেন তিনি। প্রিয় লেখক সত্যজিৎ রায় ও মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। প্রিয় বই ফেলুদাসমগ্র। বাবা মহিউদ্দিন চৌধুরী বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের সাবেক উপব্যবস্থাপক এবং মা সৈয়দা দেলোয়ারা খানম সমাজসেবী। দুই ভাইবোনের মধ্যে জুনায়েদ ছোট। তাঁর বড় বোন প্রবাসী। ঘুরতে ভীষণ পছন্দ করেন তিনি। এ পর্যন্ত দেশের মোটামুটি সব ঐতিহাসিক ও পর্যটন স্থান ঘুরে দেখেছেন। নিজের স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে জুনায়েদ বলেন, ‘সৃজনশীল যেকোনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সব সময় সম্পৃক্ত থাকতে চাই, আর ভবিষ্যতে নিজেকে গড়ে তুলতে চাই একজন সফল করপোরেট ব্যক্তিত্বরূপে।’