বিদেশে চাকরি করতে চান?

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৬ থেকে ২০১৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার ১৮৩ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে ২৬ লাখ সৌদি আরবে আর ২৩ লাখ গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। কয়েক বছর ধরে সবচেয়ে বেশি কর্মী যাচ্ছেন ওমান, কাতার ও সিঙ্গাপুরে। এর বাইরে মালয়েশিয়া, বাহরাইন, মরিশাস, ইরাক, লিবিয়া, লেবানন, জর্ডান, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রুনেই, ইতালি ও ইউরোপে কিছু লোক যাচ্ছেন।
সরকারের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর পাঁচ থেকে ছয় লাখ লোকের কর্মসংস্থানই হচ্ছে বিদেশে। তবে বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার আগে কিছু তথ্য ভালো করে আপনার জানা প্রয়োজন, নইলে প্রতারিত হতে পারেন।
নাম নিবন্ধন
বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আপনাকে শুরুতেই ঢাকার জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) কিংবা আপনার জেলার জনশক্তি কার্যালয়ে গিয়ে নাম নিবন্ধন করাবেন। এ জন্য খরচ ৮০ টাকা।
নাম নিবন্ধনের পর আপনি দালাল এড়িয়ে বৈধ যেকোনো রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রায় এক হাজার বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি আছে, যাদের প্রত্যেকের একটি করে লাইসেন্স নম্বর আছে। www.hrexport-baira.org এ তালিকায় গিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর নাম জেনে নিতে পারেন।
ব্যাংক ঋণ সহায়তা
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে বিদেশগামীরা ঋণ নিতে পারেন। এ জন্য তাঁকে বিদেশে চাকরির নিয়োগপত্র দেখালেই চলবে। এ ছাড়া সোনালী, অগ্রণী, জনতাসহ সরকারি-বেসরকারি আরও অনেক ব্যাংকই এখন বিদেশে যাওয়ার জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেয়।
যাওয়ার আগে জেনেনিন
আপনি যে দেশেই যেতে চান না কেন, প্রথমেই দরকার পাসপোর্ট। তাই নিজেই পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে এমআরপি পাসপোর্ট করুন। বিদেশে যাওয়ার আগে আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। যে দেশে যাবেন, সেই দেশের অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।
বিদেশে যে কোম্পানিতে চাকরি করতে যাচ্ছেন, সেখানকার চাকরির শর্ত জেনে নিন। শর্তে বেতন-ভাতা, থাকা-খাওয়া, ছুটি, চিকিৎসাসহ কোম্পানির সব সুযোগ-সুবিধা জেনে নিন। যে দেশে যাচ্ছেন, পাসপোর্টে সেই দেশের ভিসা আছে কি না দেখে নিন। চাকরি নিয়ে যেতে হলে ‘এমপ্লয়মেন্ট ভিসা’ লাগবে। বিদেশে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট করতে হয়। টিকিট কাটার সময় অবশ্যই প্লেন ছাড়ার সময় ও এয়ারপোর্টে পৌঁছানোর সময় জেনে নিন। পথে কোথাও যাত্রাবিরতি বা ট্রানজিট আছে কি না সেটিও জানুন।
বিদেশে যাত্রার কয়েক দিন আগে ভিসা সিলসহ পাসপোর্ট, মেডিকেল সনদ, বিএমইটির বহির্গমন ছাড়পত্র, স্মার্ট কার্ড, চাকরির চুক্তি, যে দেশে যাবেন, সেই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের ঠিকানা এগুলো যত্ন করে রাখুন। প্রয়োজনে এগুলোর ফটোকপি পরিবারের কাছে দিয়ে যান।
বিদেশে যাওয়ার সব বিষয় চূড়ান্ত হয়ে গেলে বাড়ির কাছে সুবিধাজনক কোনো ব্যাংকে দুটি হিসাব খুলুন। একটি নিজের ও অন্যটি পরিবারের কারও নামে। একটি অ্যাকাউন্টে পরিবারের বা সংসারের খরচের অর্থ পাঠান। আর নিজের হিসাবে টাকা জমাতে পারেন।
বিদেশে থাকা অবস্থায় একটি বড় সমস্যা টাকা পাঠানো। মনে রাখবেন, শুধু সরকার অনুমোদিত ব্যাংক বা মানি একচেঞ্জের মাধ্যমেই টাকা পাঠানো বৈধ।
বিদেশে থাকা অবস্থায় অবশ্যই সে দেশের প্রচলিত আইনকানুন মেনে চলুন। সে দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের ঠিকানা ও ফোন নম্বর রাখুন।
প্রয়োজনীয় কিছু নম্বরও ঠিকানা
প্রবাসীকল্যাণ ভবন, ৭১-৭২, পুরোনো এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটন গার্ডেন, ঢাকা। www.probashi.gov.bd
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি):
৮৯/২, কাকরাইল ঢাকা, www.bmet.org.bd
‑বোয়েসেল: ৭১-৭২ এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটন গার্ডেন, ঢাকা। ৯৩৬১৫১৫, ৯৩৩৬৫৫১ www. boesl.org.bd
বায়রা: বায়রা ভবন, ১৩০ নিউ ইস্কাটন রোড, ঢাকা। টেলিফোন: ৮৩৫৯৮৪২, ৯৩৪৫৫৮৭

যেসব সাবধানতা জরুরি
বিদেশে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আপনি কখনোই দালালদের কাছে যাবেন না। কখনো কোনো অবস্থাতেই অগ্রিম অর্থ দেবেন না। বিনা রসিদে কাউকে টাকা এবং রিক্রুটিং এজেন্সি বাদে কারও কাছে পাসপোর্ট দেবেন না। যে কাজ পারেন না, সেই কাজ করতে যাবেন না। ভুয়া অভিজ্ঞতার সনদ দেবেন না। মাদকাসক্ত অবস্থায় বিদেশে যাবেন না। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে কোনো নারী চাকরি নিয়ে বিদেশে যেতে পারবেন না। তবে গৃহকর্মী ও পোশাকশ্রমিকদের ক্ষেত্রে বয়স ২৫ বছর হতে হবে। সরকারি একমাত্র জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বোয়েসেল বিনা খরচে মেয়েদের বিদেশে পাঠানোর সহায়তা দেয়। সেখান থেকে সঠিকভাবে তথ্য জেনে তারপর মেয়েদের বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।