বিশ বছর পর তোমার শহরে

তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম এই রাজশাহী শহরেই, কলেজে পড়ার সময়। আজ বলতে দ্বিধা নেই, সেদিন মেজাজ ভীষণ খারাপ ছিল। তখন আমি বাধ্য মেয়ে। তাই তোমার বান্ধবীরা সবাই মিলে নিয়ে গেল আমাকে। এরপর পদ্মার পানি কোথা থেকে কোথায় গড়িয়েছে, তুমি তা জানো। রয়েছে অনেক পাওয়া না পাওয়ার গল্প। অনেক কিছু হারানোর বেদনা। পদ্মা থেকে আমি চলে গেলাম ব্রহ্মপুত্রের পারে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর তুমি বুড়িগঙ্গার তীরে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সব যাতনা সয়ে জীবনের গল্পে আমরা এক রাস্তায় হাঁটি সাত বছর আগের এই ফেব্রুয়ারি মাসেই।

মনে আছে, আমার বিয়ের কার্ড ছাপানো হলে আমি তোমাকে ফোন করে বলেছিলাম, আমার কার্ড লাল টুকটুকে। তুমি বললে, তোমারটা সাদা ফকফকে। কত হেসেছিলাম আমরা...আনন্দে, উত্তেজনায়।

আজও যখন সাহেববাজার কিংবা নিউমার্কেটের রাস্তা দিয়ে হাঁটি, বাতাসে ভেসে আসে সেই এক সুর। পরিচিত কোলাহল যেন খুঁজে পাই। রাস্তার পাশের কোনো দোকানে আমাদের সময়ের পরিচিত গান বেজে উঠলে আমি হেসে ফেলি, অজান্তে, আনমনে

বিয়ের দিনেও ছিল নানা বিভ্রাট। কত আয়োজন করে, ২৬ বছর বয়সে নাক ফোঁড়ালাম, শুধু বিয়ের দিন শখের নথ পরব বলে। তুমিও তোমার বন্ধুকে দিয়ে ফটোগ্রাফি করাতে চেয়েছিলে। বিয়ের দিন আমার নথ খুঁজে পেলাম না আর তোমার বন্ধুরা তো রাস্তার মাঝপথে গাড়ি নষ্ট হওয়ার কারণে আসতেই পারল না। চার-চারজন আলোকচিত্রী নিয়ে একটা গাড়ি সময়মতো পৌঁছাতেই পারল না কনের বাড়িতে! কত ঝামেলা। মন খারাপ। তবু আমরা হেসেছিলাম। বুঝেছিলাম, ঝামেলা আসবেই। এগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে শুরু করাই জীবন।

ভালোবাসা, অভ্যাস নাকি নির্ভরতা; আমি জানি না। চাকরিসূত্রে এখন আমাদের দুই শহরে বসবাস। আমার সঙ্গে তবুও আমাদের সন্তান আছে। তোমার একা একা দিনাতিপাত। কষ্ট লাগে, তবু ভবিষ্যতের কথা ভেবে মেনে নিতে হয় অনেক কিছু।

দেখো, প্রায় বিশ বছর পর আবার এই শহরে, রাজশাহীতে, বলতে গেলে তোমার শহরে আমি। আজও যখন সাহেববাজার কিংবা নিউমার্কেটের রাস্তা দিয়ে হাঁটি, বাতাসে ভেসে আসে সেই এক সুর। পরিচিত কোলাহল যেন খুঁজে পাই। রাস্তার পাশের কোনো দোকানে আমাদের সময়ের পরিচিত গান বেজে উঠলে আমি হেসে ফেলি, অজান্তে, আনমনে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ছেলে তীহান বলে, মা, হাসো কেন?

আমি বলি, এমনি…।