প্রতীকী ছবি। ছবি: জামিউল ইসলাম
প্রতীকী ছবি। ছবি: জামিউল ইসলাম

বেশ রৌদ্রোচ্ছটা দিন, কিছুটা তপ্ত আবহাওয়া, হঠাৎ করে আকাশ কালো, হয়ে গেল একপশলা বৃষ্টি। আবার কখনো কখনো টানা দুদিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। এ যেন আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের নিত্যদিনের চিত্র। এমন দিনে প্রয়োজন ও কর্মক্ষেত্র ছাড়া বের হওয়াই হয় কম। সামাজিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন তেমন হয় না।

কিছুদিন আগে রোকসানার বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। অনুষ্ঠান কেমন হবে, কেমন করে সাজব, বান্ধবীরা সবাই আসবে তো, এগুলো নিয়ে ব্যাপক উৎকণ্ঠা ছিল ওর মনে। পরিবারের সদস্যরা নিপুণভাবে আয়োজন করেছিল সব। তবে ওই দিনের ব্যাপক বৃষ্টিতে মাঠে মারা যায় বিয়ের অনুষ্ঠানের সব আয়োজন। আড়াই শ জনের আয়োজন করা হলেও উপস্থিত হয়েছিলেন দেড় শ অতিথি। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে আসতে পারছি না বলে একের পর এক বার্তা পরিবারের সদস্যদের মুঠোফোনে। কোমরপানি ঠেলে আসতে পারেননি ভিডিও করার লোকজনও।

বছরের এ সময়টা বিয়ের জন্য আসলে ঠিক উপযুক্ত সময় নয় বলেই মনে করা হয়। দেখা যায় অনুষ্ঠানগুলোতে আগত অতিথির সংখ্যাও কম হয়। তবে এবারের বর্ষা মৌসুমে অন্য বছরের তুলনায় বিয়ের অনুষ্ঠান কম হচ্ছে বলে জানালেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিয়ে ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মৌসুম ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। জুন থেকে আগস্ট মাসে অনুষ্ঠানের আয়োজন অনেক কমই হয়। এসব অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে জড়িত থাকে কমিউনিটি সেন্টার, ক্যাটারিং ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বললেন, জুন থেকে আগস্ট মাসে তাঁদের সেন্টার ভাড়া অনেক কম রাখা হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড়ও দেন তাঁরা।

গত কয়েক দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কমিউনিটি সেন্টার, চায়নিজ রেস্তোরাঁ, ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবারের বর্ষা মৌসুমে গতবারের চেয়ে বুকিং কম পাচ্ছেন তাঁরা। শুধু শুক্র-শনিবার কিছু অনুষ্ঠান হচ্ছে। তবে এগুলোতেও নির্ধারিত অতিথির সংখ্যা কমানো হচ্ছে। অনুষ্ঠান যেগুলো হচ্ছে সেগুলোর বুকিং আগেই পাওয়া। নতুন অনুষ্ঠানের বুকিং পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম। তবে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ার কারণেও অনুষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মালিকানায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০০টি কমিউনিটি সেন্টার আছে। ঢাকা মহানগর কমিউনিটি সেন্টার মালিক সমিতির মতে, বেসরকারি কমিউনিটি সেন্টারের সংখ্যাও রয়েছে অনেক। এর বাইরেও বিভিন্ন হোটেল, চায়নিজ রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ঢাকা মহানগর কমিউনিটি সেন্টার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ধানমন্ডির প্রিয়াঙ্কা কমিউনিটি সেন্টারের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, এই বর্ষা মৌসুমে ব্যবসায় বেশ মন্দা যাচ্ছে তাঁদের। গত বছরের তুলনায় এবারে বুকিং বেশ কমেছে।

জাকির হোসেন বলেন, কিছু কারণে কমিউনিটি সেন্টার ব্যবসায় বেশ কয়েক বছর ধরেই বেশ মন্দা যাচ্ছে। কমিউনিটি সেন্টারের সংখ্যা বেড়েছে, এ জন্য প্রতিযোগিতা বেড়েছে। এ ছাড়া গ্রাহকেরা এখন যানজট ও সুবিধার কারণে বাড়ির কাছের সেন্টারে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সুনামটা এখন কাজ হচ্ছে না। এ ছাড়া বাঙালির সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো বেশির ভাগ শীত মৌসুমেই হয়। বর্ষা মৌসুমে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় কম।

এমন কথাই জানালেন ধানমন্ডির জিনডিয়ান রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপক মো. জামান। তিনি বলেন, রোজার ঈদের পর সব সময় অনুষ্ঠানের একটা চাপ থাকলেও এবার বেশ কম। উল্লেখ করার মতো কোনো অবস্থা নেই। যানজট, বৃষ্টি আর প্রচণ্ড গরম, এসব কারণে বুকিং হচ্ছে কম। এ ছাড়া এখন প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।

এখন বৃষ্টি যেমন হচ্ছে, তেমন গরমও পড়ছে, মৌসুমের ধরনটাই এমন। এ অবস্থায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সেন্টার না হলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা দায়, বলছেন অনেকে। পল্টন কমিউনিটি সেন্টারের এক কর্মকর্তা জানালেন, দুই-তিন মাস ধরে একদমই বুকিং পাচ্ছেন না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নয় বলে বড় অনুষ্ঠান হয় না।

তবে বড় কনভেনশন বা প্রেক্ষাগৃহগুলোতে বুকিং আট মাস থেকে এক বছর আগেই হয়ে থাকে। তারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রায় ছয় মাস আগে থেকে যোগাযোগ করে। কৃ ইভেন্টসের প্রতিষ্ঠাতা আনিকা আজম বললেন, ‘এবারের মৌসুমে ইভেন্টস আগের বছরের চেয়ে তুলনামূলক কম। তবে বড় কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে প্রায় এক বছর আগে বুকিং দেওয়া হয়। তাই ইভেন্ট খুব কম তা বলা যায় না। সেনাকুঞ্জ, র‍্যাডিসন, গলফ গার্ডেনে বুকিং হয় অনেক আগে। আমাদের সঙ্গে কন্টাক্ট হয় প্রায় ৬ মাস আগে থেকে।’

গ্রাহকেরা বলছেন, বর্ষা মৌসুমে ঝামেলার কথা ভেবেই অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন না তাঁরা। এবারের মৌসুমে রাস্তায় পানি জমছে বেশি। হয় যানজট, নয়তো তীব্র গরম, দুর্ভোগের কথা ভেবেই অনুষ্ঠানগুলো শীতের জন্য তুলে রাখছেন তাঁরা।