বেলি ফুল

.
.

বাবা,
সালাম নেবেন। জানি না, আপনি যে ভুবনে চলে গেছেন, সেখানে আমার সালাম পৌঁছায় কি না।
মেঘলা আকাশ। চারদিক অন্ধকার করে এখুনি বৃষ্টি নামবে। আমার মনে পড়ে যায় সেই মণিপুরি ফার্ম, যা এখন সংসদ ভবনের জায়গা। সেখানে আমাদের সেই ছোট্ট সুন্দর ফুলে ফুলে ভরা বাড়িটাকে, যেখানে আমরা থাকতাম। কতই না ভালোবেসে আপনি কত শত ফুলগাছই না লাগিয়েছিলেন। সব ফুলই তো আপনার ভালো লাগার। ঘাসফুল, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, ঝুমকালতা। সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন গোলাপ আর বেলি ফুল। চলে যাওয়ার আগে ভীষণ অসুস্থ শরীরেও কত জাতের গোলাপ ফুল নিয়ে আস্ত একটা বই–ই তো লিখে গেলেন। আর বেলি তো আপনার অসম্ভব প্রিয় আর ভালো লাগার ফুল ছিল। কত রকম বেলি ফুলের গাছই না ছিল আমাদের সেই সুন্দর বাড়িটাতে। এই বৃষ্টিতে বেলি ফুলে ভরে থাকত বাগানটা। আমরা দুই বোন ফুলের মালা গেঁথে, ডালা সাজিয়ে কত কী যে করতাম। আমার বিজ্ঞানী বাবা অফিস করে বিনা বেতনে তাঁর প্রিয় ছাত্রদের পড়িয়ে যখন বাসায় ফিরতেন, তখন আমরা দুই বোন ঘুমিয়ে গেছি। আমাদের ফুলপ্রিয় বাবা, তাঁর শার্টের পকেটে দু-চারটে বেলি ফুল রাখতেন।
বাবা ডিনার সেরে আমাদের দুই বোনের বেডরুমে এসে আদর করে মাথায়, কপালে হাত বুলিয়ে দিতেন বড্ড স্নেহ ও মমতায়। আধো ঘুম আধো তন্দ্রায় বুঝতাম—বাবা এসেছেন, বেলি ফুলের গন্ধটাই যে বাবার ছোঁয়ার অনুভূতিটা পাইয়ে দিত। এখন এই শহরের জীবন, ফ্ল্যাটবাড়িতে। ব্যালকনির টবে বেলি ফুল লাগালে, দু-চারটে ফোটে আবার ঝরেও যায়।
আমার জীবনের ঘরের মানুষটা (স্বামী) জানেন বেলি ফুল আমার যে কত প্রিয়, তাই মাঝেমধ্যেই এই বৃষ্টিভেজা দিনে আমার জন্য মনে করে বেলি ফুলের মালা কিনে আনেন। আহারে! সোনা-মুক্তা-হিরা নয়, এ যে আমার কতটা পাওয়া! রাতে ঘুমের সময় বালিশের কাছে সেই পরম পাওয়া বেলি ফুলের মালা রেখে ঘুমাই। মাঝরাতে, ঘুম ভেঙে গেলে দেখি, বেলি ফুলের গন্ধে সারাটা ঘর ভরে আছে। ডিম লাইটের নীলাভ আলোয় একটা স্বপ্নের পরিবেশ। আমি পাশ ফিরে ঘুমোতে ঘুমোতে মনে করি, বাবা—আপনি তো আমার খুব কাছেই আছেন, আমার মাথায় পরম স্নেহের হাতটি বুলিয়ে দিচ্ছেন।
হাসনা হোসেন
মনসুরাবাদ, আদাবর, ঢাকা।