
ব্যায়ামের গুণ জানা আছে সবারই। কিন্তু কোনো না কোনো কারণে করা হয়ে ওঠে না। প্রভাবটা সরাসরি পড়ে শরীরের ওপরে। শরীরের সুস্থতার পাশাপাশি ত্বকের সুস্থতাও কিন্তু নির্ভর করে ব্যায়ামের ওপরে। ত্বক নিয়ে যাঁদের নানা অভিযোগ, তাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করে দেখতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ব্যায়ামের মাধ্যমেও আপনি পেতে পারেন সতেজ ও সুস্থ ত্বক।
ব্যায়াম মানেই শুধু দৌড়ানো নয়, বরং বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামের কথা আলোচনা হচ্ছে প্রতিদিনই। কার্ডিও এক্সারসাইজ, অ্যারোবিকস, ওয়েট লিফটিং, ওয়েট লিফটিং ইত্যাদি ধরনের ব্যায়ামের মধ্য থেকে বেছে নিতে পারেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সোহেলী রহমান বলেন, ‘ব্যায়ামের ফলে শরীরের প্রতিটি কোষে রক্ত চলাচল বাড়ে। এর ফলে প্রতিটি কোষে পৌঁছে যায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেন। ত্বকের কোষে এ প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো পৌঁছানোর ফলে ত্বক সতেজ হয়ে ওঠে।’
ত্বকে পুষ্টি উপাদান পৌঁছানো ছাড়াও নানা উপকার পাওয়া যাবে নিয়মিত ব্যায়ামে। জানাচ্ছেন সোহেলী রহমান—
* নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
* ব্যায়াম মানসিক চাপ দূরে রাখতে সাহায্য করে। ব্যায়ামের ফলে শরীর ক্লান্ত হয়। এর ফলে ভালো ঘুম হয়। মানসিক চাপ কমলে এবং ভালো ঘুম হলে ত্বক সজীব হয়।
* ব্যায়ামের ফলে কিছু হরমোন নিঃসরণ হয়। এর প্রভাবে ত্বকের তেল রক্ষণকারী গ্রন্থিগুলোর কার্যকারিতা কমে। ফলে ত্বকের তেল চিটচিটে ভাব দূর হয়।
* মাংসপেশি সবল হলে ত্বকের টোনিং হয়ে ওঠে চমৎকার।
* ত্বকের বিভিন্ন কোষে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কিছু বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয়। রক্ত চলাচল বৃদ্ধির ফলে এগুলো সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে। এসব পদার্থ জমে থাকলে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ব্যায়ামের ফলে ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখা সম্ভব। ত্বকের যেসব গ্রন্থি ঘাম নিঃসরণ করে, ব্যায়ামের ফলে সেগুলো কার্যকর হয়ে থাকে।
কোন ব্যায়ামে কেমন উপকার পাওয়া যায়, এ ব্যাপারে জানালেন পারসোনা হেলথের প্রধান প্রশিক্ষক ও ইনচার্জ ফারজানা খানম—
কার্ডিও এক্সারসাইজ ও অ্যারোবিক
ট্রেডমিল বা সাইক্লিংয়ে শরীরের রক্ত চলাচল বাড়ে, ফলে ত্বক উজ্জ্বল দেখায়। এসব ব্যায়ামের ফলে শরীরে পানির চাহিদা বাড়ে। তাই যিনি এমন ব্যায়াম করেন, তিনি স্বাভাবিকভাবেই পর্যাপ্ত পানি পান করেন। এর ফলে ত্বক থাকে সতেজ। বিভিন্ন অ্যারোবিক এক্সারসাইজের ফলে ত্বকের নিচের রক্তনালিগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়ে।
কারও কারও হরমোনজনিত সমস্যার কারণে ওজন বেড়ে যায়, ত্বকে ব্রণ দেখা দেয় এবং মাসিক অনিয়মিত হয়। ব্যায়ামের ফলে এ সমস্যাগুলোও কমে যায়।
ওয়েট লিফটিং
বয়সের কারণে ত্বকে বলিরেখা পড়ে। বিভিন্ন ধরনের ভারোত্তোলন ব্যায়ামের (ওয়েট লিফটিং) ফলে ত্বকে বলিরেখা কম পড়ে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা হারাতে থাকে। এর ফলে ত্বক ঝুলে পড়তে শুরু করে। এ ছাড়া ওজন কমতে থাকলেও ত্বক খানিকটা ঝুলে পড়তে দেখা যায়। এ ধরনের ব্যায়াম করার ফলে ত্বকের ঝুলে থাকা ভাবটা থাকে না, বরং দারুণভাবে ত্বকের টোনিং হয়।
এ ধরনের ব্যায়ামে শরীর ক্লান্ত হয়, ফলে ভালো ঘুম হয়। অনিদ্রার ফলে চোখের নিচে কালি পড়া, ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়াসহ নানান সমস্যা হয়ে থাকে। ওয়েট লিফটিং করলে এ সমস্যাগুলো এড়ানো যায়।
ফেসিয়াল এক্সারসাইজ
মুখের বিভিন্ন মাংসপেশির নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম রয়েছে। নিয়মিত এ ব্যায়ামগুলো করার ফলে মুখের ত্বকের টোনিং হয়। তা ছাড়া এ ব্যায়ামের ফলে মুখের ত্বকের লোমকূপগুলো খুলে যায়, ফলে ঘাম বের হতে পারে। এ ধরনের ব্যায়ামের পর বারবার মুখে পানির ঝাপটা দিলে মুখের ত্বক পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যায়।
ওয়েট লিফটিং
শরীরের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের বয়স তো বাড়বেই। তবে ত্বকে বয়সের ছাপ না চাইলে শিখতে পারেন যোগব্যায়াম। এতে মানসিক চাপও কমে। শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে নানান রকম দেহভঙ্গির সমন্বয়ে ত্বক সতেজ ও উজ্জ্বল হয়, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে এবং ত্বকে বলিরেখার ছাপ পড়ে না। নিয়মিত ফেসিয়াল করালে যে উপকার হয়, নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে এর চেয়েও বেশি উপকার পাওয়া সম্ভব।
ঘরের বাইরে ব্যায়াম
পরিচ্ছন্ন বাতাসে ব্যায়াম করতে পারলে তা মনকে সতেজ করে তোলে। একই সঙ্গে বাড়ে ত্বকের সজীবতা।
লেখক: চিকিৎসক