
চাারটা ছেলেমেয়ে গোল হয়ে বসেছে। মনে হচ্ছে কোনো ব্যবসা নিয়ে কথা হচ্ছে তাঁদের মধ্যে। টার্গেট গ্রুপ, ফিজিবিলিটি, সট অ্যানালাইসিস...এমন কঠিন কঠিন শব্দ কানে আসছে। বোঝা যায়, আস্ত এক ব্যবসা দাঁড় করানো নিয়েই আলাপ করছে ছেলেমেয়েগুলো। হালের ‘বিজনেস কমপিটিশন’গুলোর একটা চেনা দৃশ্য এটি। ব্যবসা আর করপোরেট দুনিয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে এই সব প্রতিযোগিতা। যে সংগঠনগুলো এসব প্রতিযোগিতা, কর্মশালা, সভা ইত্যাদি আয়োজন করে, তাদের একটি বিইউপি বিজনেস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ক্লাব। ঢাকার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের একদল তরুণ এই সংগঠনের প্রাণ। ক্লাবের মডারেটর মো. ওসমান গনির তত্ত্বাবধানে দল বেঁধে নানা আয়োজনের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছেন তাঁরা।
শুরুতে বিজনেস ক্লাব ও কমিউনিকেশন ক্লাব নামে দুটো আলাদা সংগঠন থাকলেও ২০১৬ সাল থেকে এক হয়ে ‘বিইউপি বিজনেস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ক্লাব’ পুরোদমে কাজ করছে। ক্লাবের মোট সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ১১৫। সভাপতি মাহমুদ হাসান বলছিলেন, ‘বিজনেস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ক্লাব হওয়ায় সদস্যদের মধ্যে ব্যবসায় অনুষদের শিক্ষার্থী বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষার্থী ক্লাবের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে। এই অনুষদের বাইরের অনেক শিক্ষার্থীও বর্তমানে আমাদের ক্লাবের সদস্য।’
আবেদন করলেই যে ক্লাবের সদস্যপদ পাওয়া যাবে, ব্যাপারটা মোটেও এমন নয়। এ ক্লাবের সদস্য হতে হলে বেশ কঠিন একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ক্লাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অমৃত আলিম বললেন, ‘প্রতিবছর আমরা সদস্য আহ্বান করি। ৩০০-৩৫০ জন আগ্রহ প্রকাশ করে। পরবর্তীকালে আগ্রহীদের চার ধাপে নিজেদের প্রমাণ করতে হয়। প্রতি পর্বে মানুষ কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত যারা টিকে থাকে, তারা ক্লাবের সদস্য হতে পারে।’
জানা গেল, এবার ক্লাবের সদস্যপদ পেয়েছেন মাত্র ৩৯ জন। মাহমুদ হাসান জানালেন, বর্তমানে শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতা আগের চেয়ে বেড়েছে। ‘আমাদের সময় পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল। এখন ব্যবসায় অনুষদে প্রতিবছর ৬০০ জন ভর্তি হয়। তাই ক্লাবের মান বজায় রাখতে প্রক্রিয়া একটু কঠিন করা হয়েছে।’
মানের দিক থেকে ক্লাবটি এই কড়া নিয়মের সুফল পাচ্ছে হাতেনাতে। কেবল গত দেড় বছরে নামকরা প্রতিযোগিতাগুলো থেকে দশটি পুরস্কার বাগিয়েছে এই সংগঠনের সদস্যরা। চারটি প্রতিযোগিতায় এসেছে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব। এ ছাড়া বেশ কিছু ছোট-বড় পুরস্কার তো আছেই।
শুধু প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেই থেমে নেই সংগঠনটির সদস্যরা। দেশের বড় বিজনেস কমপিটিশনগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ‘ক্রিয়েডিভ’। বিইউপি বিজনেস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ক্লাব প্রতিবছর সফলভাবে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রথম দুটি আসর সীমাবদ্ধ ছিল নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে। ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ে এই ‘মার্কেটিং ও অ্যাড মেকিং’ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিবছর সংগঠনটি ‘করপোরিডলারজ’ নামে আরেকটি বড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ‘বিজনেস স্ট্র্যাটেজি কমপিটিশন’ হিসেবে এই প্রতিযোগিতার বেশ সুনাম আছে। প্রথম পাঁচ বছর আন্তবিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়ে ২০১৬ সাল থেকে জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সম্প্রতি ক্লাবের পরিসরটা আরেকটু বড় হয়েছে। হাসিমুখে জানালেন অমৃত। বলছিলেন, ‘সদস্যদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও করপোরেট জগতের বড় বড় মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রায়ই কর্মশালার আয়োজন করি আমরা। সম্প্রতি অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আরও যোগ্য করে তুলতে টেন মিনিট স্কুলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।’
ভবিষ্যতে প্রিয় ক্লাবকে কোথায় দেখতে চান তাঁরা? ‘আমি আমাদের ক্লাবকে এমন একটা জায়গায় দেখতে চাই, যেখানে এই ক্লাব হবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের দক্ষতা উন্নয়নের একটা চেনা মঞ্চ।’ বেশ দৃঢ় কণ্ঠেই বললেন সভাপতি মাহমুদ হাসান।