ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ!

ভাইয়ে ভাইয়ে নানা বিষয় নিয়ে বিরোধ দেখা দেওয়ার ঘটনা ঘটে অনেক সময়। বিশেষ করে জমিজমা নিয়ে এ বিরোধ প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়। এ নিয়ে আপন ভাইদের মধ্যে মামলা-মোকদ্দমাও হতে দেখা যায়। কিন্তু ভাইদের মধ্যে কোনো কারণে বিরোধ হলে মামলা-মোকদ্দমায় কি এর শেষ পরিণতি? নাকি মামলা-মোকদ্দমা এড়িয়ে এর সুষ্ঠু সমাধানও সম্ভব?

কী নিয়ে বিরোধ

জমিজমা আর বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগবণ্টন নিয়েই বেশি মামলা-মোকদ্দমা দায়ের হয়। বাবা-মা বেঁচে থাকা অবস্থায় ভবিষ্যতে কীভাবে কে, কত অংশ পাবে কিংবা ব্যাংকে টাকাপয়সা থাকলে বাবা-মা কাকে নমিনি করে দিল এসব বিষয়ে বিরোধের ঘটনা ঘটে। অনেক সময় এক ভাইয়ের নিজের নামে সম্পত্তি থাকলে অন্য ভাইয়েরা এসে দখল করতে চায়। আবার ভাইদের মধ্যে কিছু তুচ্ছ বিষয়ও আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বাবা-মা বেঁচে থাকা অবস্থায় তাদের সম্পত্তির মালিক কোনো সন্তান হতে পারে না। এটা জানা থাকা সত্ত্বেও ভাইয়েরা আগেভাগেই জায়গা দখল করে নিতে চায়।

বিরোধ যদি আদালতে গড়ায়

বাবা বা মা মারা যাওয়ার পর তাদের রেখে যাওয়া সম্পত্তি ভাগবণ্টনের ক্ষেত্রে যদি কোনো আপস-মীমাংসা না হয় তাহলে বঞ্চিত ভাই বা ভাইয়েরা দেওয়ানি আদালতে গিয়ে বণ্টন বা বাঁটোয়ারা মোকদ্দমা করে থাকেন। আদালতে দীর্ঘদিন বিচার চলতে থাকে এবং আদালত রায়, ডিক্রি দেন কে কতটুকু জায়গা পাবেন। কে কতটুকু সম্পত্তির মালিক। অনেকের অংশ আছে এমন কোনো সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ নিজেরা আপস করে কিংবা আদালতের সাহায্যে বণ্টন বা ভাগ করে নেওয়াকে বাঁটোয়ারা বলে।

শরিকদের মধ্যে বনিবনা না হলে আদালতের মাধ্যমে এই ভাগবণ্টন দাবি করা যায়। একেই বাঁটোয়ারা মামলা বলা হয়। সাধারণত বিরোধ দেখা দেওয়ায় ছয় বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়। কেউ মারা গেলে তাদের উত্তরাধিকারের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে এবং অংশ চাইতে পারে। এ বাঁটোয়ারা মোকদ্দমা ছাড়াও অনেকে জায়গার স্বত্ব ঘোষণার জন্য কিংবা জমির দখলের জন্যও অন্য ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে। আবার ফৌজদারি মামলাও হয় অনেক সময়।

যদি ভাইদের মধ্যে কোনো বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়ায় তাহলে আদালতে আপস-মীমাংসার মাধ্যমে নিজেদের বিরোধ মিটিয়ে ফেলার সুযোগ রয়েছে। মামলা-মোকদ্দমার যেকোনো স্তরেই এ সুযোগ নেওয়া যায়। কিছু ক্ষেত্রে সাক্ষী স্তরে থাকলেও আদালত আপস-মীমাংসাকে সমর্থন করে থাকেন। বণ্টনের মামলার ক্ষেত্রে দুবার ডিক্রি হয়। প্রাথমিক ডিক্রি হওয়ার পরে বা আগে বাদী-বিবাদী নির্ধারিত সময়ে আপস-মীমাংসা করে নেওয়ার সুযোগ আছে।

ভাইদের মধ্যে বিরোধ যতই হোক নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে তা মীমাংসা করে ফেলাই উচিত। ভাইদের মধ্যে বিরোধ থাকলে এর প্রভাব তাদের সন্তানদের মধ্যেও পড়ে। যৌথ সংসার থাকলে তাতে ফাটল দেখা যায়। বাবা-মা বেঁচে থাকলে তাঁদেরও মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দেখা দেয়। নিজেদের এবং ভবিষ্যৎ বংশধরদের কথা চিন্তা করেই বিরোধের সুষ্ঠু সমাধান করে নেওয়া উচিত। নিজেদের মধ্যে বিরোধ থাকলে সামাজিকভাবেও হেয় হতে হয়। স্বার্থ টিকিয়ে রাখতে আইনের আশ্রয় নেওয়ার চেয়ে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে প্রয়োজনে কিছুটা স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে হলেও সুষ্ঠু সমাধান করে নেওয়া উচিত। ভাইয়ে ভাইয়ে মামলা-মোকদ্দমা মানায় না।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট