ভাঙা সংসার জোড়া লাগে?

>
ছবিটি প্রতী​কী। ছবি: অধুনা
ছবিটি প্রতী​কী। ছবি: অধুনা

সংসার ভেঙে গেলে ভাঙা সংসার কি পুনরায় জোড়া লাগানো যায়? যদি সহজভাবে বলি, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো কারণে তালাক কিংবা বিবাহবিচ্ছেদ হলে তাঁরা যদি পুনরায় সংসার করতে চান, আছে কি উপায়? আইন কি সমর্থন করে তাঁদের মধ্যে পুনরায় সংসার গড়ার? স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যেকোনো কারণেই হোক বিবাহবিচ্ছেদ হতেই পারে কিংবা দুজনে পৃথকও থাকতে পারে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী যদি চান তাঁরা পুনরায় সংসার করবেন, তাহলে আইন কিন্তু তা সমর্থন করে। আইন অনুযায়ী নিজেরা আবার ভাঙা সংসার জোড়া লাগাতে পারেন। সে জন্য আইনের কিছু বিধিনিষেধও মানতে হবে।

কী আছে আইনে

মুসলিমদের ক্ষেত্রে ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে অনুযায়ী যেভাবেই বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক ঘটুক না কেন, যে পক্ষ তালাক দিতে চাইবে, সে পক্ষ তালাক উচ্চারণের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপর পক্ষের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মিউনিসিপ্যালিটি বা সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যানের বা মেয়রের কাছে নোটিশ লিখিতভাবে পাঠাবে। ওই নোটিশের কপি খুব দ্রুত অপর পক্ষের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা নেবে। যে পক্ষ থেকেই তালাকের নোটিশ দেওয়া হোক না কেন, চেয়ারম্যান বা মেয়র নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে উভয়পক্ষের মনোনীত প্রতিনিধি নিয়ে সালিশি পরিষদ গঠন করবেন। সালিসে পরিষদ উভয়পক্ষকে ডেকে সমঝোতার চেষ্টা করবে। এ সময় যদি স্বামী-স্ত্রী মনে করেন তাঁদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে তালাকের নোটিশ দেওয়া হয়েছে সে ক্ষেত্রে তাঁরা সমঝোতা করে তালাক প্রত্যাহার করে নিয়ে পুনরায় সংসার করতে পারেন। এ জন্য নতুন করে বিয়ের প্রয়োজন হবে না।

অনেক সময় সালিস পরিষদে না গিয়েও নিজেরা তালাক প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে সালিস পরিষদে সে ঘোষণাটি পাঠিয়ে অবগত করলেও হয়। কিন্তু তালাকের নোটিশ পাঠানোর পর যদি ৯০ দিন পার হয়ে যায় অর্থাৎ তালাক কার্যকর হওয়ার পর স্বামী বা স্ত্রী যদি অন্যত্র বিয়ে না করেন তাহলে তাঁরা পুনরায় নতুন করে বিয়ে করে নিতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, একই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তৃতীয়বারের মতো তালাক কার্যকর হলে তাঁদের পুনরায় বিয়ের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে (দেখুন পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ আইন ১৯৬১-এর ৭ (৬) ধারা)। স্ত্রী যদি তালাকের নোটিশ পাঠানোর সময় গর্ভবতী থাকেন, তাহলে সন্তান প্রসবের আগে যেকোনো সময় তালাক প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। আবার সংসার করতে পারেন। সন্তান জন্মদানের পর যদি সংসার করতে চান, তাহলে পুনরায় বিয়ে করতে হবে।

কেউ যদি তালাকের পর অন্যত্র বিয়ে করেন, তাহলে ওই বিয়ে বলবৎ থাকা অবস্থায় পুনরায় আগের স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে সংসার শুরু করতে পারবেন না। যদি কেউ পরেরবার বিয়ে বলবৎ থাকা অবস্থায় আগের তালাক দেওয়া স্বামী বা স্ত্রীকে বিয়ে করেন, তাহলে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধে অপরাধী হবেন। কেউ যদি আলাদা বসবাস করেন তাহলে তাঁরা নতুন করে একত্রে থাকার ঘোষণা দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ নেই। আবার স্বামী বা স্ত্রী যদি কোনো কারণে সংসার করতে না চান, তাহলে দাম্পত্য অধিকার দাবি করে স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ পারিবারিক আদালতে প্রতিকার চাইতে পারেন। সেই সময় আদালতে এসেও স্বামী-স্ত্রী দুজনে আপস-মীমাংসা করে পুনরায় দাম্পত্য সম্পর্ক শুরু করতে পারেন। যদি ভাঙা সংসার নতুনভাবে জোড়া লাগে, তাহলে তাঁরা আগের মতোই স্বামী-স্ত্রী পরিচয় পাবেন। তাঁদের আগে যেমন অধিকার ছিল পরস্পরের ওপর, তেমনই অধিকার সংসার জোড়া লাগার পরও থাকবে। সন্তান, ভরণপোষণ দেনমোহর সবকিছুই স্বাভাবিক অধিকার হিসেবে থাকবে।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট