ভারী খাবারে সতর্কতা

ভারী খাবার খাওয়ার আগে বয়স, ওজন ও হজমক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। ছবি: অধুনা
ভারী খাবার খাওয়ার আগে বয়স, ওজন ও হজমক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। ছবি: অধুনা

কয়েক দিন পরই কোরবানির ঈদ। ঈদ নিয়ে সবার মাঝেই চলছে নানা ধরনের আয়োজন। বাড়িতে মজার রান্না হবে, সবাই মিলে সেসব খাওয়া হবে। বেড়াতে গিয়ে খাওয়া বা প্রচুর দাওয়াতের ব্যাপার তো আছেই। যেহেতু কোরবানির ঈদে খাওয়া একটু বেশি হবেই, তাই সেই খাওয়ার পর তৈরি হতে পারে নানা ধরনের জটিলতা।
ঢাকার বারডেম জেনারেল হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান ও প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা শামসুন্নাহার নাহিদ বলেন, ঈদে সবার একটু বেশি খাওয়া হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার মানে সব বয়সের মানুষ সমান খাবার খেতে পারবে তা না। নিজের বয়স, ওজন, সুস্থতা আর হজমক্ষমতা বিচার করে খেতে হবে। সাধারণত এ সময় বেশি মাংস খাওয়া হয় বলে বমি, পেটব্যথা, ডায়রিয়া, অ্যাসিডিটিসহ নানা সমস্যাও কিন্তু হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তিন বেলাতেই ভারী খাবার না খেয়ে দুই বেলা ভারী খাবার খেয়ে সকালে ও বিকেলে হালকা খাবার, সবজি, স্যুপ—এসব খেতে হবে। শুধু প্রোটিন না, কার্বোহাইড্রেট নিতে হবে পরিমাণমতো। খাবারে সবজি রাখতে পারলে খুবই ভালো হয়। সেটি সেদ্ধ বা সব সময়ের মতো করে খেতে ইচ্ছা না করলে স্যুপ করে হলেও খাওয়া জরুরি।
ঈদে শুধু মাংস খাওয়া হবে, তা কিন্তু নয়। থাকবে প্রচুর ডেজার্ট খাওয়ার সম্ভাবনাও। শামসুন্নাহার নাহিদ জানালেন, ডেজার্টে মিষ্টি খাবার না খেয়ে ফল খেলে খুব ভালো। সেটি সব সময়ের মতো খেতে না চাইলে ফল দিয়ে তৈরি সালাদ বা কাস্টার্ড করে খাওয়া যেতে পারে। খেতে পারেন ফলের জুসও। মনে রাখতে হবে, শুধু ফল দিয়ে জুস না করে সঙ্গে মেশাতে হবে পানিও। শুধু ফলের জুস বানালে তাতে পটাশিয়াম বেড়ে যাবে। আর ফলের জুস খেতে হবে চিনিছাড়া।
ডায়াবেটিস রোগীরা অবশ্যই সব ধরনের খাবার চিনিছাড়া খাবেন। গুরুপাক খাওয়ার পর তা হজমের জন্য খুব ভালো হচ্ছে টক দই। খাওয়ার পর টক দই দিয়ে বানানো লাচ্ছি, মাঠা ইত্যাদিও ভালো কাজ করবে। চাইলে ডেজার্টে মিষ্টি দইয়ের বদলে টক দইও খেতে পারেন। একেবারে কিছুই সম্ভব না হলে বাড়ি ফিরে একটু টক দই খেয়ে নিলেও তা হজমে সহায়তা করবে।
পুষ্টি কর্মকর্তা শামসুন্নাহার নাহিদ আরও বলেন, মাংস খাওয়ার বেলায় যদি অতিরিক্ত মসলা ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা খেতে ভালো লাগলেও খুব দ্রুত তৈরি করবে অরুচি। তাই বাড়িতে সাধারণ দিনের জন্য যেমন কম তেল বা মসলায় রান্না হয়, অতিথিদের জন্যও সেভাবে করাই ভালো। যাঁদের হৃদ্রোগ আছে, তাঁরা মাংস খাওয়ার ব্যাপারে রাখুন বিশেষ সতর্কতা। মাংস রান্নার আগেই সাদা চর্বি ফেলে দিয়ে গরম পানিতে পাঁচ মিনিট সেদ্ধ করে নিন। তারপর সেই পানি ফেলে রান্না করুন। এই ‘লিন মাংস’ সব ধরনের লোকের জন্যই ভালো। তা খাওয়ার পর থেকে নানা রোগের আশঙ্কা কমাবে, রোগ থাকলেও সুস্থ রাখবে।
বেশি খাওয়া হলে খেতে পারেন নানা ধরনের মসলা বা ফল দিয়ে তৈরি ডিটক্স। এক টুকরা লেবু, এক টুকরা মাল্টা, ধনে পাতা, পুদিনা পাতা দিয়ে বানাতে পারেন ডিটক্স। একটু লেবু, একটু আদা, আর দুই ধরনের গরম মসলা দিয়ে বানানো ডিটক্স মেদ কমাতে সহায়তা করবে, রুচিও বাড়াবে।
ঈদে খাওয়ার ব্যাপারে মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত খাবার সব সময়ের জন্যই বিপজ্জনক। আপনি যদি দশজনের বাড়িতে বেড়াতে যান, তাহলে দশজনের বাড়িতে দশ বাটি মাংস না খেয়ে আপনার জন্য যতটা স্বাভাবিক, ততটা খাবারই দশ দিয়ে ভাগ করে নিয়ে তারপর খান।