ভূতের ভয় তাড়াতে কী করবেন

মাঝরাত। গভীর ঘুমে মগ্ন। ঠিক এ সময়ে পাশের ঘর থেকে ভেসে আসা খটখট শব্দে ঘুম ভাঙল আপনার। পাশের ঘরে কেউ নেই, তাহলে শব্দটা করছে কে? ধীরে ধীরে হিম হয়ে আসছে আপনার শরীর। ভাবছেন, মানুষ ছাড়া এ কাজ আর কে করতে পারে? অশরীরী কিছু? এই ভয়ে না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলেন সারাটা রাত। সকালে চোখে–মুখে না ঘুমানোর ক্লান্তি। একটি রাতই নয়, এভাবে হয়তো নির্ঘুম কেটে যাচ্ছে রাতের পর রাত, যার প্রভাব পড়ছে শরীরে ওপর। এই পরিস্থিতি যে একা ঘরে থাকলেই হচ্ছে, তা-ও হয়তো নয়। ঘরে অন্য কেউ থাকলেও অনেক সময় এমন ভূতের ভয় কাজ করে।

সাধারণত মানুষের মন যখন খুব দুর্বল থাকে, তখন চেপে বসে এমন ভয়। অনেক বেশি দুশ্চিন্তা আর নিরাপত্তাহীনতাও মনে এ ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করার পেছনে প্রভাব রাখে। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক সালমা পারভীন। কেন এমন হয়, আর কী করলেই বা মিলবে সমাধান, সেসবও জানালেন তিনি।
মানসিক চাপের কারণে হালকা হয়ে যায় রাতের ঘুম। আর এ জন্য একটু হালকা শব্দও অনেক জোরে বলে মনে হয়। রাতের নিস্তব্ধতায় যেকোনো শব্দের প্রতি মন আরও মনোযোগী হয়ে ওঠে। এ ছাড়া রাতের অন্ধকার আর ঘরের নীরবতা খুব গা ছমছমে একটা পরিবেশের জন্ম দেয়। যে কারণে মনে হয়, সবাই তো ঘুমাচ্ছে, তাহলে শব্দটা আসছে কোথা থেকে? ভূতের ভাবনায় অনেকেই কুঁকড়ে যান ভয়ে। জোর করে চোখ বন্ধ করে ভাবেন, কখন পার হবে বাকি রাত। এ ধরনের আতঙ্ক যাঁদের মনে প্রতিনিয়তই কাজ করে, ঘুমানোর আগে তাঁরা ব্রিদিং এক্সারসাইজ করতে পারেন। এই এক্সারসাইজ মনকে হালকা করতে সাহায্য করে। ফলে রাতে গভীর ঘুম হয়। মাঝরাতে কোনো শব্দ যখন মনের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি করবে, তখনই মনকে কোনো ইতিবাচক ভাবনায় ঘুরিয়ে নিতে হবে। সেটা হতে পারে কোনো ভালো লাগার মুহূর্তের ভাবনা। দেখবেন, নিমেষে উধাও হয়েছে ভূত বা অলৌকিক কিছুর দুশ্চিন্তা।
এরপরও ভয় না কাটলে ঘরের আলো জ্বেলে নিন। এবার যে ঘর বা জায়গা থেকে শব্দ আসছে বলে মনে হচ্ছে, সেখানে গিয়ে দেখে আসুন বিষয়টি আসলে কী। একা যেতে ভয় পেলে কাউকে সঙ্গে নিয়ে যান। আরেকটি বিষয় মনে রাখবেন, এ ধরনের ভয় খুব সহজেই অন্যের মধ্যেও ছড়িয়ে যায়। তাই আপনার এই ভূত-আতঙ্ক বাসার অন্য দুর্বল চিত্তের সদস্যের মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারে। এ কারণে ভূতের গল্প ঘুমানোর আগে না শোনাই ভালো। টিভিতে ভৌতিক কোনো সিরিয়াল বা সিনেমা মনে ভয়ের জন্ম দেয়। ভূতের ভয় থাকলে এ ধরনের কিছু না দেখাই ভালো। কারণ, ভূত বলতে আসলে কিছুই নেই। যে ভয়টা আপনাকে তাড়া করছে, তা আর কিছুই নয়, আপনার দুর্বল চিত্তে গড়ে ওঠা একটি ভাবনামাত্র!