ভ্রাম্যমাণ বেতারে খবর পাঠ

চলন্ত বাস থেকে খবর পড়ছেন নাজমা ঝুমা
চলন্ত বাস থেকে খবর পড়ছেন নাজমা ঝুমা

আজকের যুগ তথ্যপ্রবাহের। এক ক্লিকেই মুহূর্তেই পাঠক-শ্রোতা-দর্শক জেনে নিতে পারেন বিশ্বের কোথায় কখন কী হচ্ছে। তথ্য এখন মানুষের নাগালের মধ্যে। গ্রামের কৃষক যিনি হাল চাষ করছেন কিংবা লন্ডনের জেপি মর্গানের একেবারে উঁচুতলায় বসে যিনি ট্যাবলেটে ক্লিক করে পৃথিবী ঘুরছেন, উভয়ের কাছেই এখন সব তথ্য সমানভাবে উপস্থিত।
আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা কত বিচিত্র ঘটনা, সংবাদ আর আবিষ্কার জানতে পারছি। রাত পোহালেই আইফোন সিক্স, আলফা হাতের মুঠোয় চলে আসে। মানুষের চাঁদে যাওয়ার ঘটনা, হিমালয় পর্বতে হিলারি তেনজিং থেকে হালের আসফিয়া-মুসা অনেকের নামই আমরা অবহিত। ভ্রাম্যমাণ চক্ষু হাসপাতাল, অরবিট, টেলিস্কোপ, মাইক্রোস্কোপ, লন্ডনের পাতালরেল, ইংলিশ চ্যানেল হয়ে ইউরোস্টার, উড়ন্তরেল, কত কিছুর সঙ্গেই না আমরা পরিচিত হচ্ছি।
স্যাটেলাইট টেলিভিশন প্রযুক্তি নাটক, সিনেমা, গান, ইউটিউব ও ড্রপ বক্স ইত্যাদিকে নিয়ে এসেছে সব সময়ে এক ক্লিকের মধ্যেই। সবকিছু ভ্রাম্যমাণ হলেও এখন পর্যন্ত এভাবে পুরো সংবাদ পরিবেশন করা হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ ও সবার কাছে অতি আকর্ষণীয় সংবাদ আংশিক ভ্রাম্যমাণ হলেও পুরোটা হয়নি। এ ক্ষেত্রে নতুন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে লন্ডনের বেতার বাংলা।
সেদিন ছিল রোববার, ৭ আগস্ট ২০১৪। সকাল সকাল জার্মানি থেকে বেতার বাংলার জার্মান শাখার উপস্থাপক হাবিব বাবুল ভাইয়ের টেলিফোন। জানতে চাইলেন, ওই দিন দুপুর ১২টার প্রবাসীর ভাবনা অনুষ্ঠানে আমি থাকছি কি না। নাজিম চৌধুরী ভাই ছিলেন না। অন্যদিকে বেতার বাংলার সব শিল্পী, কলাকুশলী, প্রেজেন্টার এবং শ্রোতা ফোরামের বন্ধুরা মিলে গিয়েছেন সাউদাম্পটনের সমুদ্র দর্শনে। বলা যায় সমুদ্রসৈকতে আনন্দ স্নানে অবগাহন করতে।
নাজিম ভাই আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন, রোববারের প্রবাসী অনুষ্ঠান আমাকে করতে হবে। ব্যস এতটুকুই। তাঁর সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি। এর মধ্যে তিনি অন্যান্য কাজে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেদিন যথারীতি দুপুর ১২টায় হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে যৌথভাবে (নাজিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে) প্রবাসীর ভাবনা অনুষ্ঠান শুরু করি আমরা। বাংলাদেশের সমকালীন ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে দারুণ এক আলোচনা জমে ওঠে। আমাদের সঙ্গে আলোচনায় যোগ দেন ঢাকা থেকে মেসবাহ উদ্দিন ভাই। তিনিও তাঁর অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। বিশেষত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে। ৭ মার্চ তিনি রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ছিলেন।

মেসবাহ উদ্দিন ভাইয়ের সঙ্গে কথোপকথনের পরপরই জার্মানি থেকে হাবিব বাবুল ভাই সরাসরি লন্ডনের সাউদাম্পটনের সমুদ্রসৈকতের পিকনিক স্পটে সংযোগ স্থাপন করেন। তিনি বেতার বাংলার সংবাদ পাঠিকা ডা. নাজমা ঝুমার সঙ্গে কথা বলেন সরাসরি। ঝুমা আপা পিকনিক স্পট থেকে সবার আনন্দের মুহূর্ত শ্রোতাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেন। এটা ছিল অনন্য এক উপস্থাপনা। ওই সময় ঝুমা আপা জানালেন, সেদিনের রাত আটটার সংবাদ তাঁরা উপস্থাপন করবেন পিকনিক স্পট থেকে ফেরার সময়। আমাকে সংবাদ তৈরি করে দিতে হবে, এটাই পরিকল্পনা তাঁদের।
প্রবাসীর ভাবনা অনুষ্ঠান আরও কিছুক্ষণ আমরা চালিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু সেলিনা আপা আগে থেকেই স্টুডিও লাইভ অনুষ্ঠান করছিলেন। তাই তাঁদের জন্য নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠান শেষ করি।

বেতার বাংলা ইউকের লোগো
বেতার বাংলা ইউকের লোগো

প্রবাসীর ভাবনা অনুষ্ঠান শেষ করে আমি স্টুডিও থেকে চলে আসি। এর পর জিবিনিউজের জন্য সংবাদ তৈরির ছক করছিলাম। এই সময় কিছুক্ষণ ফোন থেকে দূরে ছিলাম। একটু পর দেখি মিস কল। বেতার বাংলার সব চাইতে জনপ্রিয়, অতি প্রিয় মুখ ও সদা হাস্যোজ্জ্বল শব্দ প্রকৌশলী শিপলু ভাই ফোন করেছিলেন। ফিরতি ফোন করতেই জানালেন, সংবাদ রেডি হতে আর কতক্ষণ লাগবে। আশ্বস্ত করলাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই তৈরি হয়ে যাবে। তিনি বললেন, আমি যেন সংবাদ তাঁর মেইলে পাঠিয়ে দিই। কারণ, পিকনিক দলে থাকা সংবাদ পাঠিকা ঝুমা আপা ফেরার সময় বাস থেকে তা পরিবেশন করবেন। তখন সমুদ্রসৈকত থেকেই বেতার বাংলার পিকনিক আড্ডা সরাসরি রেডিওতে প্রচারিত হচ্ছিল।
বেশ ভালোই লাগছিল তাঁদের সেই পিকনিক আড্ডা। আমি সময়মতোই সংবাদগুলো তৈরি করে শিপলু ভাইকে মেইল করলাম। বেতার বাংলার পিকনিক পরিবার তখন বাসের মধ্যে। ঘড়ির কাঁটায় সময় যখন সাতটা পঞ্চান্ন, আমার কাছে তখনো অজানা, আদৌ রাত আটটার সংবাদ সময়মতো পরিবেশিত হবে কি না।
আমার কেন জানি মন উসখুশ করছিল। ওদিকে অফিসে মাসুদ ভাইও আমার মতো অবস্থায়। আমরা বিকল্প আর কোনো কিছু করিনি। বিকল্প কিছু করার জন্য হাতে সময়ও ছিল না। যাকে বলা যায় একেবারে ডেড টাইম।
এমনি সময় ঠিক আটটায় বেজে উঠল বেতার বাংলার সেই পরিচিত বাজনা। সঙ্গে সঙ্গে লাস্যময়ী সেই পরিচিত কণ্ঠ, সংবাদ পড়ছি আমি নাজমা ঝুমা। আমি অবাক এবং বিস্ময়ে বিমূঢ়। শব্দ প্রকৌশলীর ক্যারিশম্যাটিক প্রচেষ্টায় ফোন ও ল্যাপটপ এক করে রাত আটটার সংবাদ সরাসরি প্রচারিত হচ্ছে চলন্ত বাস থেকেই। আর যথারীতি লাইভ সংবাদ পড়ছেন ঝুমা।
প্রযুক্তির কাছে অনেক ক্ষেত্রে সময়, টেনস, স্ট্রেস, সভ্যতা হার মেনে যায়। বেতার বাংলা লন্ডনের চলন্ত বাস থেকে আইফোন-ল্যাপটপ-স্পিকার, পাঁচমিশালি সূত্রে অভিনব এই লাইভ সংবাদ পরিবেশন; বিজ্ঞান এবং প্রতিদিনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে নতুন এক সংস্করণ হিসেবে যোগ হবে। এ জন্য শব্দ প্রকৌশলী শিপলু ভাই ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার।
সুপ্রিয় পাঠক, আপনাদের ভালো লাগা স্মৃতিময় তথ্য ও অনুভূতিগুলো বেতার বাংলার ফেসবুক পেজে শেয়ার করতে পারেন। আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ভিন্ন ভিন্ন উপস্থাপকেরা সেখান থেকে লুফে নিয়ে বেতার বাংলায় নিশ্চয় শেয়ার ও আলোচনা করবেন। আমাদের সাথি হবেন এই আশা ঐকান্তিকভাবে করছি।
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
লন্ডন, যুক্তরাজ্য
<Salim932@googlemail.com>