মধুর রকমফের

মধু সংরক্ষণ করতে হবে কাচের বয়ামে
ছবি: নকশা

মধুর আহা কিবা মধুর মধু সব!

মধুর মধু আলো, মধুর মধু বায়।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘প্রভাত সংগীত’ কবিতায় এভাবেই করেছেন মধুবন্দনা। মধুর মিষ্টতা পছন্দ নয়, এমন মানুষ খুব একটা পাওয়া যাবে না।

কিন্তু মৌমাছির চাক থেকে সংগ্রহ করা ষোলো আনা খাঁটি মধুর স্বাদই থাকে আলাদা। তবে মধু সংগ্রহের পর মাঝের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অনেক সময়ে আসল মধুই পাওয়া যায় না। আবার সঠিক সংরক্ষণের অভাবে এর পুষ্টিগুণও কমে যায়। মধুর রয়েছে বিভিন্ন ধরন এবং তার ওপর নির্ভর করে স্বাদও হয় ভিন্ন। সাধারণত খলিসা মধুকেই সবচেয়ে ভালো মধু বলা হয়ে থাকে। খলিসা মধু মানে দেখতে সাদা এমন ফুলের মধু। কিন্তু মধুর রং খুব গাঢ় ও স্বাদ হয় খুব কড়া ও মিষ্টি। সাধারণত ফাল্গুন মাসে এই ফুলের মধু পাওয়া যায়। পশুর ফুলের মধু একটু কম গাঢ় (হালকা লালচে) ও মিষ্টি হয়। সাধারণত চৈত্র মাসে এই মধু পাওয়া যায়। বাইন মধু সহনীয় মিষ্টি, খলিসা বা পশুর মধুর মতো কড়া নয়।

সাধারণত আষাঢ় মাসে এই মধু পাওয়া যায়। কেওড়া মধু একটু টক–মিষ্টি। এ মধু দেখতে সাদা রঙের হয়ে থাকে। সাধারণত জ্যৈষ্ঠ মাসে পাওয়া যায়। গেওয়া একটু তিতকুটে স্বাদের হয়, যা বেশি রূপচর্চায় ব্যবহার করা হয়।

বিভিন্ন রকম মধু থাকলেও তার সংরক্ষণের উপায়গুলো কিন্তু একই রকম। মধুতে ভিটামিন সি ছাড়া প্রায় সব ধরনের ভিটামিন থাকে, তাই এর পুষ্টিগুণ সহজে কমে না। আবার মধু যত পুরোনো হয় তার কার্যকারিতা তত বাড়ে এবং নষ্ট হয় না। মধু উষ্ম খাবার আর ১০০ গ্রাম মধুতে ক্যালরি থাকে ২৮৮, তাই দিনে এক চামচের বেশি মধু খাওয়া ঠিক নয়, বললেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের সাবেক পুষ্টি বিভাগের প্রধান আখতারুন নাহার। মধুর পুষ্টিগুণ ঠিক রাখতে আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ।

মধু সরক্ষণ করতে হবে কাচের বোতলে। মধু রেফ্রিজারেটরে বা গরম স্থানে রাখা যাবে না। মধুর বোতলের মুখ খোলা রাখা যাবে না।

মধু নষ্ট হয় শুধু পানিতে, তাই এমনভাবে সংরক্ষণ করতে হবে, যেন পানি না লাগে। মধুর উপকারিতা অনেক। তবে খাঁটি মধু না হলে বিপরীত হতে পারে। মধুতে দুই রকমভাবে ভেজাল করা যায়। চিনি, রাসায়নিক মেশানো ও দুই ধরনের মধু একসঙ্গে মেশানো। তবে মধু যেহেতু বিভিন্ন রকম হয়, তাই খাঁটি মধু চেনার পদ্ধতিগুলোও নানা রকমের। খাঁটি বা অপ্রক্রিয়াজাত মধু চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় মধুর ওপর একধরনের সাদা ফেনার আস্তরণ পড়ে—জানালেন মধু বাজারজাতকরণের পেজ আহরণের স্বত্বাধিকারী সাঈদ নিশান।

খাঁটি মধু চেনার আরও কিছু উপায় আছে। একটা সাদা কাপড়ে সামান্য মধু লাগিয়ে রাখতে হবে। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়ার পর দাগ থাকলে খাঁটি মধু বোঝা যায়। কিছুটা মধু নিয়ে রেফ্রিজারেটরে এক দিন রেখে দিন। খাঁটি মধু ঠান্ডা হয়ে জমে যাবে না। একটা সুতি কাপড় প্রথমে পানিতে আবার খাঁটি মধুতে ভেজানোর পর আগুনের কাছে নিলে আগুন জ্বলবে ও পটপট শব্দ হবে।