মনসা পুঁথিপাঠের আসরে নারীদের মিলনমেলা

মনসাপূজা উপলক্ষে বাড়ির উঠানে নারীরা দলবেঁধে বসে মনসার পুঁথি পাঠ করছেন। ছবি: প্রথম আলো

‘ফণী যে’য়ে দংশিয়াছে মম শিরোমণি। ফিরিয়া করহ কৃপা আস্তিক জননী। ফাঁপর হয়েছি মাত শুন বিষহরী। ফণিরূপা ফির তুমি হংসপৃষ্ঠে চড়ি। বাপে সমর্পিল মোরে লক্ষ্মীন্দর করে।’—সত্তর বছর বয়সী বাসন্তী চক্রবর্তী এভাবেই সুর করে পুঁথি পাঠ করেছেন। অন্য নারীরা সমবেত কণ্ঠে ঘোষা (সুর করে পুঁথি পড়ার সহকর্মী) দিচ্ছিলেন।

১৩ আগস্ট বাংলা শ্রাবণ মাসের শেষ দিকে এ দৃশ্য দেখা যায় খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদরের পশ্চিম থানাপাড়ার অনিল চন্দ্র দাশের বাড়ির উঠানে। সেখানে চলছিল মনসার পুঁথিপাঠের আসর।

হিন্দুধর্মে মনসা সর্পদেবী। সর্পদংশন প্রতিরোধ ও সাপের বিষের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁর পূজা করা হয়। মনসার পূজা উপলক্ষে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় গ্রামীণ নারীরা শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি ঘুরে মনসার পুঁথি পাঠ করেন। পুঁথিপাঠের আসরের এ আয়োজন চলে আসছে কয়েক যুগ ধরে। সংসারের কাজকর্ম সেরে বেলা তিনটা থেকে পুঁথিপাঠে অংশ নেন নারীরা।

বাসন্তী চক্রবর্তী (৭০) বলেন, ‘জগৎগৌরী মনসার পূজা উপলক্ষে আমরা পুঁথি পাঠ করি। আমি কিশোরী বয়স থেকে মা–কাকিমাদের সঙ্গে পুঁথিপাঠের আসরে যেতাম। এখন গ্রামের বউ–ঝিদের সঙ্গে পালা করে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুঁথি পাঠ করি।’

পুতুল দাশ (৪৫) জানালেন, কোনো কোনো দিন ২০টির বেশি বাড়ি ঘুরে এই নারীরা পুঁথি পাঠ করছেন মাসব্যাপী।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক সুবীর মহাজন বলেন, মনসার পুঁথিপাঠের বিষয়টি শুধুই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একই সঙ্গে সংস্কৃতির অংশ। মনসার কাহিনি নিয়ে কালজয়ী সাহিত্য রচিত হয়েছে। তবে অঞ্চলভেদে পুঁথি ও তার পঠনরীতি আলাদা। শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন থেকে এই পুঁথিপাঠ আরম্ভ হয়, চলে মাসব্যাপী।