মনের জানালা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

মেহতাব খানম
মেহতাব খানম

সমস্যা
আমার সঙ্গে একটা মেয়ের চার বছরের সম্পর্ক। কদিন আগে সম্পর্কটা ভেঙে গেছে। কারণ একটাই, আমি ওকে সন্দেহ করি। আসলে আমি ওর পাশে অন্য কোনো পুরুষ সহ্য করতে পারতাম না। মনে হয়, আমার মানসিক সমস্যা আছে। সেও এ রকম মনে করে। আমি তাকে এখনো অনেক ভালোবাসি, ফিরে পেতে চাই। কিন্তু কীভাবে আমি ওর ভুল ভাঙাতে পারব?
হারুণ, রামগতি।
পরামর্শ
দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভেঙে যাওয়াটা খুব কষ্টকর। তুমি মেয়েটির পাশে কোনো পুরুষ মানুষ সহ্য করতে পারো না, এর মানে আসলে কী? সে অন্য কোনো পুরুষ বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারবে না? যদি তা-ই হয়, তাহলে আমার মনে হয় না তুমি ওকে পুরোপুরি বিশ্বাস কর। কারণ, সঙ্গীর প্রতি বিশ্বাস থাকলে তো তুমি ওর ব্যক্তিস্বাধীনতা মেনে নিতে পারতে। যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশ্বাস, উদারতা, অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ভালোবাসা বা প্রেমের সম্পর্কের বেলায়ও দুজনেরই অধিকার আছে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে সুস্থ বন্ধুত্ব বজায় রাখার। প্রেম মানে কিন্তু এই নয় যে আমরা একজন অন্য জনের জীবনধারা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করব। এতে করে অন্যকে অসম্মান করা হয়। তুমি যদি মেয়েটিকে সত্যিই ভালোবাসো, তাহলে ওর পছন্দ-অপছন্দগুলোকেও বুঝতে হবে। মেয়েটির ভুল ভাঙানোর উদ্যোগ নেওয়ার আগে তোমার মধ্যে যে সম্পর্কটি নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে, সেটি কাটানো খুব প্রয়োজন। সন্দেহপ্রবণতার বিষয়টি অনেক সময় অসুস্থতার পর্যায়ে চলে যায় বলে অন্য মানুষটি খুব বেশি কষ্ট পায়। তোমাকে অবশ্যই অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আর সেটা মেয়েটির সঙ্গে আবার প্রেমের সম্পর্কে ফেরত যাওয়ার চেষ্টা করার আগেই। যদি মেয়েটি তোমার সঙ্গে সম্পর্ক আর না-ও চালিয়ে যেতে চায়, তবুও তোমাকে এই সন্দেহপ্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সমস্যা
আমাদের ২২ বছরের বন্ধুত্ব। সেই কলেজ থেকে আজ চাকরিজীবন। একই কলেজ, একই অফিস। বিশ্বাস, ভালোবাসা, সম্মান আমাদের বন্ধুত্বের মধ্যে সব সময় ছিল। আমার বন্ধু সংসারী মানুষ। আমি শারীরিক সমস্যার কারণে বিয়ে করিনি। গত এক মাস আগে বন্ধু আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমি তো অবাক। মনে মনে রেগে যাই। বাইরে দেখাই না। তারপর বন্ধু বলল, আমার স্ত্রী একজনের প্রেমে পড়েছে। স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিতে চায়। এখন সে বুঝতে পারছে না তার মেয়ে দুটোকে নিয়ে কী করবে। আমি তো আরও অবাক। বন্ধু আরও বলে, মেয়েরা বলে, আব্বু, তুমি আমাদের জন্য এমন মা এনেছ কেন। আমাদের বকে, অনেক মারপিট করে। একটা ভালো মা আনতে পারোনি। ওর বড় মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণী ও ছোট মেয়ে নার্সারিতে পড়ে। আমি চাই না ওদের ঘর ভেঙে যাক। বন্ধু বলে, সে আমার বিশ্বাস ভেঙেছে, আবার কী করে সম্ভব বিশ্বাস করা। এখন আমি কী করতে পারি বন্ধুর জন্য। ওর স্ত্রীকে ফোন করি, ফোন ধরেন না। বাসায় গিয়ে কথা বলতে চাই, বন্ধু বলে, ওর সঙ্গে তোমার কথা বলা মানায় না। আমি এখন কী করব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঝাউতলা, কুমিল্লা।
পরামর্শ
বন্ধুর কাছ থেকে এ ধরনের প্রস্তাব তোমার কাছে পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত ছিল, সেটা বোঝা যাচ্ছে। বন্ধুর সন্তান দুটোও যে এই পরিস্থিতিতে খুব কষ্ট পাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তুমি এই মানুষটির একজন বড় শুভাকাঙ্ক্ষী বলেই আন্তরিকভাবে চাইছ ওদের সম্পর্কটি যেন ভালো হয়। তবে তোমার বন্ধুকে একটি কথা বলা খুব প্রয়োজন, তিনি যেন তাঁর মেয়েদের মনে মায়ের প্রতি আরও বেশি অশ্রদ্ধা তৈরি না করেন। প্রত্যেক সন্তানই তার বাবা-মাকে অনেক ভালোবাসে। ঘৃণা বা অশ্রদ্ধার মনোভাব তৈরি হলে ওরা পরবর্তী জীবনে সুস্থ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারবে না। ওদের মা যদি সত্যিই অন্য কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে থাকেন এবং তোমার বন্ধু তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্কটির ইতি ঘটাতে চান, তাহলে সেটি সুন্দরভাবে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে করা যেতে পারে। তিনি তাঁর মেয়েদের বলতে পারেন, যেকোনো কারণেই হোক, তাদের বাবা-মা আর একসঙ্গে থাকতে পারছেন না। মা সন্তানদের জন্ম দিয়েছেন, অনেক দিন পর্যন্ত তাদের সেবাযত্ন করেছেন, সন্তানেরা যেন সেই ব্যাপারটি মাথায় রাখে। তুমি একজন অত্যন্ত ভালো বন্ধু বলে কিছু একটা করতে চাইছ বুঝতে পারছি। তবে দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক সদিচ্ছা এবং শুভকামনা নিয়েও যদি তৃতীয় পক্ষ কিছু করার চেষ্টা করে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেটি হিতে বিপরীত হয়। বন্ধুর স্ত্রী তোমার এই উদ্যোগকে সম্ভবত ভালো দৃষ্টিতে দেখবেন না। তুমি এতে খুব কষ্ট পাবে হয়তো। বন্ধুর প্রস্তাবটিকে তুমি কীভাবে নেবে সেটি একান্তভাবে তোমারই সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। যদি তোমার উত্তর ‘না’ হয়, তাহলে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তুমি অত্যন্ত ভদ্রভাবে সেটি কেন সম্ভব নয় তা তাকে বুঝিয়ে বলো।