মনের বাক্স

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

মনে পড়ে আমায়?
তোমাদের বাড়িটা জেলা শহরের ‘ভাঙা গেট’ নামক জায়গায়। তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল আমার মামাবাড়িতে, মনে আছে? (জায়গাটার নাম চাঁপাতলা) তোমার সঙ্গে কাটানো কয়েকটা দিন আমার ভালো লাগার অনেকটা জুড়ে রয়েছে। জানি না তোমার আমাকে মনে আছে কি না। আমাদের আর দেখা হয়নি কখনো। তোমার চেহারাটা আমার মনে নেই। হয়তো দেখলে চিনব না। সেই অল্প কয়েক দিনের ভালো লাগা আমাকে আজও ভাবায়। তোমাকে লেখাটা হয়তো ছেলেমানুষি হচ্ছে। তুমি হয়তো কখনো পড়বে না এই লেখা। তবু কেন লিখছি? তুমি কি জানো তোমায় নিয়ে একটা আবেগপ্রবণ ছেলে কত কী ভেবে বসে আছে! প্রতিবার ছুটিতে মামিবাড়িতে গেলে শাকিল মামা, আবির মামাদের জ্বালাতন সইতে হয় তোমাকে নিয়ে। তোমার কি মনে আছে সেই আমাদের করা শীতের সকালের দুষ্টুমিগুলোর কথা? একসঙ্গে রস চুরি করে রসের ভাঁড় ভেঙে ফেলেছিলাম। এই মেয়ে, মনে পড়ে কিছু? আমরা কি পারি না দুষ্টুমিগুলো আবার সত্যি করতে, ভালো লাগাটাকে আর একটু মজবুত করতে, পরস্পরকে আর একটু কাছ থেকে চিনতে? পারি তো, তবে কেন হাত গুটিয়ে বসে থাকা। মামাদের জ্বালাতনগুলো না হয় সত্যিই করলাম।

আবীর

যশোর

যেখানেই থাকো সুখে থেকো

কয়েক দিন ধরে ঢাকার আকাশের মতো আমার মনের আকাশটাও গুমোট হয়ে আছে! থেমে থেমে হঠাৎ দুচোখ দিয়ে বৃষ্টি পড়ছে। এ রকম বৃষ্টির দিনে তোমাকে খুব মিস করি। ৪ এপ্রিল মনে আছে? জানি, মনে রাখোনি! মনে রাখার প্রয়োজনও বোধ করো না তুমি। কারণ, আজ আমি তোমার জীবনে অতীত। আর অতীত কজনই মনে রাখে? আমার মতো বোকারাই এসব অতীত নিয়ে পড়ে থাকে। এই দিনটা আমাদের ‘কাছে আসার’ দিন ছিল। তোমাকে হারাতে চাইনি কোনো দিন। কিন্তু আফসোস! আমার পৃথিবী থেকে তুমি হারিয়ে গেলে। আজকের এই বিশেষ দিনে শুধু একটাই কামনা করি, যেখানে যে অবস্থায় থাকো, সুখে থেকো তুমি। আমিও তোমাকে সুখী রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি আজ পরাজিত হয়ে গেলাম। একটা কথা মনে রেখো, আমি শুধুই তোমাকে ভালোবেসেছিলাম, এখনো বাসি।

ইতি

সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

না-বলা কথা

তোমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিলাম ক্লাসরুমে, সেদিন থেকেই তুমি আমার অনেকটা দখল করে ফেলেছ। কোনো দিন বলতে পারিনি আর হতে পারব না, কিন্তু নিজেকে এইটুকু বলে সান্ত্বনা দিই যে তুমি আমার জীবনে আছ একজন খুব ভালো বন্ধু হয়ে। যদি কোনো দিন আমাকে তোমার জীবনে দরকার মনে হয়, তাহলে শুধু একবার মনে মনে আমার নামটা নিয়ো। আমি পৃথিবীর যেখানেই থাকি তোমার পাশে হাজির হব। আমি তোমার হাত দুটো ধরে জীবনটা কাটাতে চাই। তবে কোনো দিনও তোমাকে বলতে পারব না। না-বলা কথা না-বলাই থেকে যাবে।

রাফি আহমেদ

হাবিপ্রবি, দিনাজপুর

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

‘মায়াবী সে...’
বাড়িতে ঢুকতেই খানিকক্ষণ মায়ের সেই চিরপরিচিত মিষ্টি বকুনি খেতে হলো! ‘কতবার বলেছি, এই ঝড়বৃষ্টির রাতে বাইরে যাবার দরকার নেই। শিলাবৃষ্টি হচ্ছে, তার ওপর আবার কিছুক্ষণ পরপর দুনিয়া আলো করে আকাশ চমকাচ্ছে। কোথায় গিয়েছিলি?’, আরে মা, আমি আবার কোথায় যাব? রোজ যেখানে যাই। ‘কেন অর্পা না কয়েক দিন ধরে বেশ অসুখে ভুগছে শুনলাম; তোর বড় খালা তো আজ সকালে আমাকে ফোনে সে রকমটাই জানাল। এই অসুখ নিয়েও কি মেয়েটা তোর কাছে প্রাইভেট পড়ে?’ আমি মায়ের এসব কথা শুধু মুগ্ধ হয়ে শুনেই যাই। কিছু বলতে ইচ্ছে করে না। আর ভাবতে থাকি, মা নামের এই আজব জিনিস তাঁদের সন্তানের জন্য এত এত আবেগ, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কোথায় লুকিয়ে রাখেন। বাবা বেঁচে নেই বলে মা হয়তো তাঁর আদরটাও আমাকে দিতে চেষ্টা করেন, তাই আদরের পরিমাণটা একটু বেশিই মনে হয়। তবে মায়ের এত ভালোবাসার পরও নিজেকে খুব দুঃখী মনে হয় এই ভেবে, শুনেছি সন্তানের মনে কী খেলা করে, মায়েরা নাকি খুব সহজেই ধরতে পারেন। কিন্তু কই, আমার বেলায় কেন এই নিয়মের উল্টোটা হচ্ছে! নইলে মা কেন বোঝেন না যে এই ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করেও কেন আমি অর্পা, মানে ক্লাস টেনে পড়ুয়া আমার বড় খালার মেয়েকে ইংরেজি পড়াতে যাই। তাও আবার মেয়েটা কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছে। মা কেন বোঝেন না, আমি বরং কেন ঝড়বৃষ্টির রাতগুলোর জন্যই অপেক্ষায় থাকি! বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়ে যখন বড় খালার বাসায় গিয়ে উঠি, আমাকে ঘিরে তখন অর্পার সে কী ব্যস্ততা! অদ্ভুত গভীর এক ভালোবাসা আর মায়া ভরে আমার শরীর মোছার জন্য একবার তোয়ালে নিয়ে আসে আবার একবার খালুর পরার লুঙ্গি নিয়ে আসে। কালও তো প্রচণ্ড জ্বর নিয়েও আমায় নিজ হাতে নুডলস আর চা বানিয়ে খাওয়াল। খালাও সেদিন কথা প্রসঙ্গে বলছিল, ও নাকি আজকাল খালার কাছ থেকে এটা-সেটা রান্না শিখতে চায়। শুনে পুলকিত হই আমি। সেসব এক স্বর্গীয় অনুভূতি। ওসব রাতে রিকশা পেলেও ইচ্ছে করেই আমি হেঁটে হেঁটে অর্পাকে পড়াতে যাই। যাতে বেশি করে ভিজতে পারি! কারণ বেশি ভিজলে অর্পার যত্ন-আত্তিটাও বেশি পাওয়া যায়। আমার এসব অনুভূতি কেউ বোঝে না। মা-ও না, খালাও না। অর্পাও কি তা-ই? না, সে হয়তো বোঝে...।

এ এইচ সোহাগ

সাভার, ঢাকা।

মনের কথাটি আজও বলা হয়নি

প্রত্যেক মানুষের বেলায় যা হয়, আমার বেলায় হলো তার ব্যতিক্রম। প্রথম নয়, দ্বিতীয় দেখায় ভালো লেগেছিল তাকে আমার। কোথাও যেন মনের মাঝে একটু ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল তার জন্য। ধীরে ধীরে সেই ভালো লাগাটা আমার মনের মাঝে অনেকখানি জায়গা করে নিল। জানি না তখন আমার জন্য তার মনে ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল কি না। যা হোক, তারপর অনেক কথা হলো তার সঙ্গে। আস্তে আস্তে কখন যেন দুজন অনেক কাছাকাছি চলে এলাম। তারপর একদিন হঠাৎই সে তার হাতটি আমার হাতের ওপর রাখল। কোনো নারী কোনো পুরুষের হাত স্পর্শ করলে সে যে কী অনুভূতি সৃষ্টি হয়, তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। তারপর মনের অজান্তেই তাকে ভালোবেসে ফেললাম। আমি তাকে ভালোবাসি কথাটি অনেকবার চেষ্টা করেও বলতে পারিনি। তারপর হঠাৎ একদিন সে আমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে গেল। ভেবেছিলাম সে হয়তো আমাকে আর মনে রাখবে না। কিন্তু ভাবনাটি মিথ্যা হলো। ফোনের মাধ্যমে সে দু-একবার আমার খবর নিয়েছিল। এরপর থেকে তার সঙ্গে আমার আর কথাও হয়নি, দেখাও হয়নি। ভেবেছিলাম তার সঙ্গে আবার দেখা হলে আমার মনের কথাটি তাকে বলেই দেব। দেখাও হয়েছিল। শেষবার যখন তার সঙ্গে আমার দেখা হয়, তখন আমার মনের মাঝে যেন বসন্তের হাওয়া বয়ে গেল। কিন্তু কোথাও যেন একটু খটকা লাগল। তার সেই চোখের চাহনি, আমাকে দেখার পর তার মুখের সেই মিষ্টি হাসি—কোনোটিই দেখতে পেলাম না। আমার বুঝতে বাকি রইল না যে আমার প্রতি তার সব ভালো লাগার অনুভূতি শেষ হয়ে গেছে। ভালোবাসার কথাটি তাকে জানাতে মন আমার পিছুটান দিল। মনের কথাটি আজও বলা হলো না তাকে।

আকাশ বিশ্বাস

মাগুরা

‘রৌদ্রকণা’ হয়ে এসে যেদিন তুমি আমাকে ‘ভালোবাসি’ বলেছিলে, সেদিন আমার পৃথিবীর প্রতিটি কোনা দীপ্তিমান আলোয় পরিপূর্ণ হয়েছিল। হাজারো কষ্টের মাঝে আমি একচিলতে সুখ খুঁজে পেয়েছিলাম। কুড়িয়ে পাওয়া ভালোবাসা আমি আগলে রাখতে পারিনি। ঝোড়ো হাওয়ায় তোমার সঙ্গে আমি আমার সুখ-স্বর্গও হারিয়ে ফেলেছি। জানি ফিরে পাব না, তবু তোমার প্রতীক্ষায় আমি আছি, থাকব অনন্তকাল।

ভালো থেকো ‘অদেখা অপ্সরী’।

ইতি,

মাহাবুব

মনের বাক্স

প্রিয় পাঠক

আপনার মনের না-বলা যেকোনো কথা বা স্বীকারোক্তি বলে ফেলুন অধুনার

‘মনের বাক্স’ বিভাগে। ফেসবুক, ই-মেইল বা চিঠি লিখে জানাতে পারেন মনের কথা।

লেখা পাঠানোর ঠিকানা:

অধুনা, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫। ই-মেইল: [email protected] ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA খামের ওপর ও ই-মেইলের subject-এ লিখুন ‘মনের বাক্স’