মনের বাক্স

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

অপেক্ষায় আছি তোমার
প্রথম যেদিন তোমায় ক্লাসরুমে দেখি, তখনই তোমার ওই রূপ আমাকে মুগ্ধ করে। তোমার হাসি সে তো সকাল বেলায় ঝিলের পানিতে সূর্যের চিকচিক করা নয়নজুড়ানো মাধুর্যের মতো। আমার হৃদয়পটে আঁকা বালিকার সব গুণের সঙ্গে মিলে যায়। এক বছর ধরে তোমাকে চিনি, জানি; তারপর কোনো একভাবে তোমাকে বলি, ভালোবাসি। তুমি হ্যাঁ-ও বললে না, আবার না-ও বললে না। আর একটি বছর হয়ে গেল, তবু আমি তোমার অপেক্ষায় আছি, থাকব। জানি না পাব কি না তোমাকে। জীবনে প্রথম এমন কাউকে এত ভালো লেগেছিল। তোমাকে পাওয়ার অপেক্ষায় থাকব। এখনো তোমাকে দেখলে আমি অন্য রকম হয়ে যাই।
কে এম সুমন
লোহাগড়া, নড়াইল।
তুমি আর আমাকে পাবে না
আজন্ম সাধ একদিন তোমার সঙ্গে সত্যি সত্যিই সংসার করব। অষ্টাদশীর চাঁদ সেদিন মাথার ওপর উঠে যাবে। ঘুমের ঘোরে তুমি আমার মাথায় হাত রাখবে। চমকে উঠে দেখবে জ্বরে আমার গা পুড়ে যাচ্ছে। তুমি আমার জন্য প্রবল মায়া অনুভব করবে। দৌড়ে আমার জন্য পানি আনবে, মাথায় পানি ঢালবে। আমি নিশ্চুপ হয়ে যাব, তোমাকে ওটা পীড়া দেবে। বারবার ডাকবে আমাকে। সাড়া পাবে না। তুমি উদ্‌ভ্রান্তের মতো ছুটতে ছুটতে চৌকাঠে ধাক্কা খাবে। সেদিন এই ব্যথা তোমার গায়ে লাগবে না। সেদিন তো আমি মুখ্য। ইলেকট্রিসিটির এই যুগে ধুপ করে অন্ধকার নেমে আসবে। টিনের চালের ফাঁক দিয়ে অন্ধকার ঘরে এক ছটাক জোছনা এসে আমার মুখের ওপর পড়বে। আমার চিকচিক করা চোখের জল তোমার অসহায়ত্ব বাড়িয়ে দেবে। সেদিন তুমি আবার প্রথম দিনের মতো কষ্ট পাবে আমার চোখের জল দেখে। তারপর ভোরে ফজরের আজানের সঙ্গে সঙ্গে আমি উঠে একগাল হাসি দিয়ে বসব। তুমি আমার কপালে হাত রাখবে, আমার ঠান্ডা কপাল তোমাকে আরেক জনম বাঁচার সাধ জোগাবে। সেই এক দিনের পর তুমি আর আমাকে পাবে না। তারপর অনেক দিন পর তুমি তোমাদের ছাদে কী কী গাছ আছে, তার গল্প শোনাবে আরেকজনকে। তুমি তার সঙ্গে হাসতে হাসতে হঠাৎ চমকে উঠে আবিষ্কার করবে, আমার হাসির ছন্দ তুমি কোথাও খুঁজে পাচ্ছ না। তুমি সেদিন আমার হাসির জন্য অথবা আমার জন্যই ব্যাকুল হবে। তুমি হয়তো সেদিন আমিহীনতার গল্প ঠিকঠিকই লিপিবদ্ধ করবে।

তাজিন তানবীন

এই কথাগুলো হয়তো জানবে না কখনো

গত কয়েক বছরে তোমার সঙ্গে আমার মাত্র কয়েকবার কথা হয়েছে। তোমার সঙ্গে কথা বলার এক-একটা মুহূর্ত আমার কাছে খুব মূল্যবান। আমার উদ্দেশে বলা তোমার এক-একটা শব্দ আমার কাছে অমূল্য সম্পদ। আমার সঙ্গে হাঁটা তোমার এক-একটা পদক্ষেপ আমার খুবই প্রিয়। আমার দিকে তোমার চোখের এক-একটা পলক খুব ভালোবাসি আমি। এই কথাগুলো হয়তো জানবে না কখনো তুমি।

তুমি কি জানো? আমি ভালো লিখতে পারি না। লেখাগুলো কেমন যেন ভাঙা ভাঙা ও এবড়োখেবড়ো হয়। তোমাকে নিয়ে যখন লিখি, ওগুলোর মাঝে জমে থাকে কয়েক কোটি আবেগ। তোমাকে নিয়ে ডায়েরির পাতায় যখন লিখি, তখন লেখাগুলো প্রাণ ফিরে পায়, সুন্দর হয়।

রাহাত

বগুড়া।

মেঘবালিকা তোমাকে

ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে আমার দেওয়া নাম। অসম্ভব ভালোবাসতাম মেয়েটাকে। অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে, সুন্দর। মনে হয় সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে বানিয়েছেন অথবা কোনো বিখ্যাত শিল্পীর সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় আঁকা তার মুখখানি। প্রথম দেখাতেই ভালো লেগে যায়, তারপর চলছিল সব ঠিকঠাক। আমার গাওয়া গান তার সবচেয়ে প্রিয়। গান না শুনে ঘুমানো হতো না তার। একবার দেখলেই সারাটা দিন ভালো হয়ে যেত। হঠাৎই সবকিছু শেষ হয়ে যায়। হয়তো তাকে কোনো দিন পাওয়া হবে না। হয়তোবা নিয়তিই আমাদের দূরে ঠেলে দিয়েছে। তবে তাকে পাব না জানি, কিন্তু ভুলে তো যেতে পারি না। দূর থেকে এখনো অনেক ভালোবাসি, অনেক বেশি ভালোবাসি।

ধ্রুব মহলানবীশ

নেত্রকোনা।

‘বাবার অদৃশ্য ভালোবাসা’

বাবা এমন একজন মানুষ, যিনি শুধু দিতেই জানেন। বিনিময়ে কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেন না কখনোই। তবে বাবার ভালোবাসাটা বোধ হয় আমরা একটু দেরিতেই বুঝি। আমার ক্ষেত্রে অন্তত তাই-ই ঘটেছে। বাবা যখন অফিস থেকে ঘরে ফিরতেন, আমরা ভাই বোন তিনজন ভয়ে যার যার রুমে ঢুকে যেতাম। ভয় পেতাম আমরা বাবাকে অনেক। হয়তো বাবার ব্যস্ততাই এর জন্য দায়ী। কাছে পাইনি তেমন করে। তাই বাবার সঙ্গে কথা বলতে জড়তা ছিল অনেক। তাই বলে বাবার প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি ছিল না আমাদের। তবে কোনো দিন বলতেও পারিনি, বাবা, তোমায় ভালোবাসি। আমাদের এই আচরণ এ বাবা কষ্ট পেতেন।

একদিন মাকে ডেকে বলেন, ‘আমি কি বাঘ নাকি যে ওরা আমাকে ভয় পায়?’ মা যখন কথাটা বললেন, খারাপ লেগেছিল অনেক। তখন থেকে অনেক চেষ্টা করেছি বাবার সঙ্গে দূরত্বটুকু ঘোচাতে পারিনি।

তারপর যখন বড় হলাম, এসএসসি পরীক্ষা দিলাম, ভূগোল পরীক্ষা দিয়ে এসে অনেক কান্নাকাটি করছিলাম। বাবা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, কী রে মা কী হয়েছে। বাবার এই ছোট আদরে আমার যে কী হলো, আমার কান্নার গতি আরও বেড়ে গেল। কাঁদতে কাঁদতে বললাম, আমার ভূগোল পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। আমার অসাধারণ বাবাটা হো হো করে হেসে দিলেন। বললেন, ‘ও, এই ব্যাপার। তা পাস করবি তো?’ আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। বলেন কী বাবা! আমি তো প্রথম ডিভিশন (আমাদের সময় গ্রেডিং সিস্টেম ছিল না) ছুটে গেল কি না সেই চিন্তা করি আর আমার বাবা কিনা বলেন, পাস করব কি না! তখন অবাক হলেও আমার বাবার দেওয়া এই শিক্ষা পরবর্তী জীবনে আমার বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অনেক কাজে দিয়েছে।

বুঝলাম, বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসেন। এটাই আমার বাবার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

তারপর যখন এসএসসির রেজাল্ট দিল, বাবা অফিস থেকে ফিরে আমার থেকে শোনার আগে আমাদের পাড়াতো এক ছোট বোনের কাছ থেকে শুনলেন যে আমি প্রথম ডিভিশন পেয়েছি। আমার বাবা খুশিতে ওই ছোট বোনটাকে জড়িয়ে ধরলেন। আর ঘরে ফিরে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন। আমার চোখে পানি চলে এসেছিল। এটাই আমার প্রতি আমার বাবার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এভাবে জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আমার বাবা আমার পাশে ছিলেন, আছেন। কিছুদিন আগে আমার বাবার বাইপাস অপারেশন হয়েছে। অপারেশনের আগে অনেক কান্না করেছিলাম বাবার পাশে দাঁড়িয়ে। বাবারও চোখ ভিজে উঠেছিল। কান্নাভরা কণ্ঠে বলেছিলেন, দূর বোকা, কান্নার কী আছে। মানুষ কি চিরজীবন থাকতে পারে দুনিয়ায়? একদিন না একদিন তো চলেই যেতে হয়। কেউ আগে যায়, কেউ পরে। আমার বাবা এখন ভালো আছেন। ব্যস্ততার জন্য বাবাকে দেখতে যাওয়া হয় না। তবু মনে হয় বাবা আছেন, আমার সঙ্গে আছেন। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে বাবা আমার পথ চলার পাথেও হয়ে আছেন। কখনো বলা হয়নি, তবু খুব বলতে ইচ্ছা করে অনেক ভালোবাসি বাবা তোমাকে। তোমার অদৃশ্য ভালোবাসা এখন দৃশ্যমান হয়ে আমাকে জীবন চলার পথে সাহায্য করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

সালমা তালুকদার

লেখা পাঠানোর ঠিকানা

অধুনা, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

ই-মেইল: [email protected] ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA.

খামের ওপর ও ই-মেইলের subject-এ লিখুন ‘মনের বাক্স’