মনের বাক্স

অলংকরণ: মাসুক হেলাল
অলংকরণ: মাসুক হেলাল

এমন বাবা আর কোথাও পাওয়া যাবে না

তখন স্কুলের হোস্টেলে থাকি। আব্বার সঙ্গে সাইকেলে করে হোস্টেলে যাই। সাইকেলের পেছনে বসে থাকি। কিন্তু যখন একটু বড় হলাম তখন একাই রিকশা দিয়ে যাই। একবার ঈদের পরপরই চলে যাই। দুই-তিনজন বন্ধু আসবে আগে আগে, তাদের সঙ্গে ঘুরব-ফিরব বলে আগেই চলে যাই। বাসায় বলি যে স্কুল আগেই খুলবে। হোস্টেলের রুম বন্ধ করে যখন ঘুমাতে যাব তখন রাত বাজে ১০টা। ভয় ভয় লাগছে, ক্লাস নাইনে পড়ি বড়জোর। হুট করে দরজায় দেখি কে যেন ডাকছেন। দরজা খুলে দেখি আব্বা দাঁড়িয়ে আছেন। এই মৃদু ঝড় বয়ে যাওয়া মাঝরাতে আট কিলোমিটার দূর থেকে সাইকেল চালিয়ে চলে এসেছেন। তিনি জানতে পেরেছিলেন আমার স্কুল খুলতে দেরি হবে, আর আমি কীভাবে একা হোস্টেলে পড়ে থাকব? ভয় পাব না! আব্বাকে বললাম পাশের রুমে ফ্রেন্ড আছে, একা না তো। আব্বা চলে গেলেন, আমি বালিশে মাথা রেখে সারা রাত চিন্তা করলাম কেন আমি আব্বাকে বললাম না থেকে যাও। চাপা স্বভাবের আমার কষ্ট চাপাই থাকল।

আব্বার অফিসে যাওয়ার সময় একবার আগরপুর বাসস্ট্যান্ডে তাঁর পেছনের সিট থেকে নেমে বাসে উঠে যাই। আমার পকেটে ২০ টাকার বেশি ছিল। আব্বাকে বললাম আমি বাসে করেই চলে যাব তোমার আর আমার স্কুলের দিকে আসা লাগবে না। আমি ৫ টাকা বাসভাড়া দিয়ে বাস থেকে নেমে স্কুলে ঢুকে গেলাম। একটু পর দেখি আব্বা হাজির। তাঁর ধারণা, আমার পকেটে টাকা ছিল না, আমি হয়তো রাগ করে তাঁর সাইকেলের পেছন থেকে নেমে যাই। সেদিনও আমার এত খারাপ লাগেনি। আমার ধারণা, বাবারা এমনই কষ্ট করেন। তাঁদের জন্মই হয়তো ছেলেদের কষ্ট সহ্য করার জন্য।

একবার আমার নতুন জুতা লাগবে। আব্বা বললেন জুতা নিয়ে আসবেন কিশোরগঞ্জ থেকে। আমার পছন্দের জুতাই কিনে এনেছিলেন তিনি। আমি জানতাম না কীভাবে আব্বা বুঝেছিলেন এই জুতাই আমার চাই। আমি বলতে পারিনি এই জুতা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে কিন্তু আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল। আমি প্রকাশ করতে পারিনি কিছু। একবার মাঝরাতে আব্বার দম আটকে যায়, অনেক কষ্টে দম ফিরে পান। সেই মুহূর্তেও বুঝতে পারিনি আব্বা না থাকলে কী হবে, আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমার চাপা স্বভাবের সেই কৈশোরে। পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে সবাই আমার দিকে তাকাত। কারণ, তখন সুরা পড়ে আব্বা বুকে ফুঁ দিতেন। সেই ফুঁতে ভালোবাসা মেশানো। এই ফুঁ আর কোথাও পাওয়া যাবে না।

এক জীবনে এমন বাবা আর কোথাও পাওয়া যাবে না।

তানভীর মাহমুদুল

ক্লাসপার্টির কেক

কলেজজীবনের ইতি ঘটার খুব একটা দিন বাকি নেই। সবাই চিন্তা করল কী আয়োজন করা যায় শেষ ক্লাসে। একেকজনের একেক প্রস্তাব। যা হোক, সবার মতামতের আলোকে সিদ্ধান্ত হলো কেক থাকবে আর হালকা ফলমূল। এসব আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আমানুল্লাহ আর ফৌজিয়া লীনা। ওরা দুজন আবার এসব কাজে বেশ পটু! শেষ ক্লাসের দিন সবার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অন্যান্য দিন হলে তো অনুপস্থিত থাকবে দু-একজন এটাই স্বাভাবিক।

নির্ধারিত সময়ে আমন্ত্রিত স্যারেরা চলে আসেন। প্রিন্সিপাল স্যার প্রথমে সবার উদ্দেশে বেশ কিছু দিকনির্দেশনামূলক কথাবার্তা বলেন। তারপর কেক কেটে একে একে সবার মুখে তুলে দেন। প্রিন্সিপাল স্যারের হাত থেকে কেক খাওয়াতে সবার আগ্রহ ছিল লক্ষণীয়। খাওয়াদাওয়া শেষ হলে স্যারেরা সব চলে যান। ততক্ষণে সবার দৃষ্টি চলে যায় লীনার নিয়ে আসা কেকের দিকে। ক্লাসপার্টি উপলক্ষে লীনা নিজেই বানিয়েছে কেকটি।

কাড়াকাড়ি শুরু করে দেয় কয়েকজন! আমানুল্লাহ তাদের থামিয়ে দিয়ে সবার অংশগ্রহণে কেকটি কাটার ব্যবস্থা করে। কিন্তু সেই কেক দু-একজন ছাড়া বেশির ভাগেরই খাওয়া হয়নি। একজন আরেকজনকে মাখিয়ে দিতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পুরো কেকটাই এভাবে শেষ হয়ে যায়।

লীনা পাশে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল। চোখ দুটো তার অশ্রুসিক্ত। হয়তো কারও চোখে পড়েনি এভাবে। খুব রাগ করেছিলি তাই না?

রুমান হাফিজ

সিলেট।

তোর আর আমার বন্ধুত্ব!

বন্ধুত্বের বন্ধন যাবে না খণ্ডন। সেই ছোট থেকে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা, একই ক্লাস থেকে শুরু করে কত সময় যে একসঙ্গে কাটিয়েছি। বড় মাঠে গিয়ে চটপটি থেকে আমড়ার আচার পর্যন্ত একসঙ্গে খাওয়া! তারপর তুঁত বাগানে গিয়ে প্রবাহিত নদীর পাড়ঘেঁষে বসে বাদাম খেতাম। সেই সাইকেলের কথা মনে আছে? যেখানে দুজনে বসে কত জায়গায় কত মজাই না করতাম। সেগুলো ভোলার নয়। তুই তো বন্ধুর চেয়ে একটু বেশি রে। সম্পর্কে আবার চাচা। বেশ চলছিল আমাদের বন্ধুত্ব। পরিবেশের একটু খারাপ ব্যবহারে আমাদের মাঝে কথাবার্তা না হলেও সম্পর্কের এতটুকু ফাটল ধরেনি। আজও দিব্যি করে বলতে পারি।

রায়হান

দিনাজপুর।

তোমাকে ভুলতে পারিনি আমি এখনো

দিনটা ছিল শীতের মাঝামাঝি, হালকা কুয়াশা এবং মিষ্টি মিষ্টি রোদমিশ্রিত এক কাল্পনিক সকাল। যে সকালে প্রথম আমি তোমাকে দেখেছিলাম। যে দেখাই আমার হৃদয়ে সোনালি স্বপ্নগুলো বারবার জেগে উঠেছিল। সে কাল্পনিক সকালে জীবনে প্রথম তোমার সঙ্গে কথা বলেছিলাম, সেই অনুভূতি, তোমার এলোকেশ, তোমার টানা টানা চোখ—সবকিছুই আমাকে এলোমেলো করে ফেলেছিল। অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে দিন কয়েক পরে তোমাকে আমার মনের সেই আকাঙ্ক্ষিত কথা বলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি সেদিন আমার সে কথা না শুনে বলেছিলে তুমি বিবাহিত। আসলে তুমি সেদিন মিথ্যা বলেছিলে। বিশ্বাস করো, তারপরও আমি তোমাকে এখনো ভুলতে পারিনি।

মো. জামাল হোসেন

শেখহাটি, নড়াইল।

ভয়ে কিছু বলতে পারিনি

যেদিন তোমায় প্রথম দেখি, সেই দিন ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। জানতাম যে গ্রামে তুমিই একমাত্র মেয়ে, যার জন্য অনেক ছেলে অপেক্ষায় থাকে। তাই তোমাকে নিয়ে আমার একটু ভয় ছিল, যদি তোমার আমাকে পছন্দ না হয়? কিন্তু দেখো, কত সহজে আমরা কাছাকাছি চলে এলাম। তোমার সঙ্গে কথা না বললে আমার ভালো লাগত না। সে জন্য তোমাকে ফোনে এতটা বিরক্ত করতাম। মাঝে মাঝে আমি তোমাকে বুঝতে পারিনি। যখন তুমি আমাদের এখান থেকে বাড়িতে যেতে, তখন গাড়িতে অনেক কান্না করতে। আমি না বুঝে তোমাকে জিজ্ঞাসা করতাম কেন তুমি এত কান্না করো? কিন্তু এখন আমি বুঝতে পারছি যে তোমার কান্নার কারণটা কী ছিল। আসলে আমি একটা পাগল। কিন্তু তুমি জানো না যে তোমার এই পাগল তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না। হঠাৎ এক ঝোড়ো হাওয়া এসে আমাদের আলাদা করার চেষ্টা করল। তুমি অনেক ভয় পেয়েছিলে সেই দিন, যদি আমরা আলাদা হয়ে যাই? তোমার প্রতি আমার আস্থা রয়েছে যে তুমি এটা করবে না। তুমি আমাকে বলেছিলে যে এত কিছু ঘটছে তবুও আমার কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু বিশ্বাস করো তোমার থেকে আমি অনেক বেশি ঘাবড়ে গিয়েছি। তোমার প্রতি আমার অনুরোধ, তোমার এই পাগলটাকে কখনো কষ্ট দিয়ো না। তাহলে সে মরেই যাবে। প্লিজ কখনো আমাকে ভুলে যেয়ো না। যদি তুমি এই লেখাটি পড়ে থাকো, তাহলে আমার কথা স্মরণ করো।

ইতি

তোমার পাগল

এই জ্বর ফিরে আসুক

শৈশবে ফিরে যেতে কার না মন চায়? এবার ঈদের ছুটিতে কয়েক দিনের জ্বর আমাকে হারানো দিনগুলো উপহার দিয়ে গেছে। আমি মায়ের সেই ছোট্ট খোকায় রূপান্তরিত হয়েছিলাম। মা সারাক্ষণ আমার শিয়রে বসে চুলে বিলি কেটেছেন। মায়ের কোমল হাতখানির স্পর্শে আমার জ্বরে উত্তপ্ত ললাট শীতল হয়ে গেছে। নিজের হাতে ভাত মেখে মুখে তুলে দিয়েছেন। খেতে না চাইলে অবাধ্য শিশুকে মা যেমন আরেকটু খাওয়ানোর জন্য পীড়াপীড়ি করেন, তেমনি জোরজবরদস্তি করে আরও দুটি লোকমা বেশি খাইয়েছেন। মাথার জলপট্টিটি একটু পরপর পাল্টে দিয়েছেন। জ্বর না হলে কি মাকে এতটা কাছে পাওয়া সম্ভব হতো? তাই জ্বরকে আশীর্বাদ করছি। প্রতি ছুটিতেই এই জ্বর ফিরে আসুক। আমি বারবার মায়ের ছোট্ট খোকাটি হতে চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

প্লিজ আন ব্লক

তুমি খুব সাধারণ হলেও আমার কাছে অসাধারণ একটি মেয়ে, সবার থেকে আলাদা। তাই তোমাকে এত ভালো লাগে। তোমার একটু হাসি আমার হাজার ভালো লাগার কারণ; তোমার একটু অবহেলা হয় আমার হাজার মন খারাপের কারণ। ভয়ে ভয়ে যখন মনের কথাগুলো বললাম তোমাকে, অমনি ফেসবুকে ব্লক করে দিলে। হয়তো আমি তোমার যোগ্য ছিলাম না। এই অযোগ্য ছেলেটি সারা জীবন তোমার জন্য অপেক্ষা করবে। সারা জীবন তোমার সঙ্গে থাকতে চাই। সেখানে থাকবে দুষ্টুমি, খুনসুটি, অভিমান আর ভালোবাসা। তোমাকে হারাতে চাই না কখনো।

তোমাকে ভাবা ছাড়া এক মুহূর্তও কাটে না। সত্যিই বড্ড ভালোবাসি তোমাকে।

প্লিজ আন ব্লক।

আসিফ রহমান

রাজবাড়ি সরকারি কলেজ, রাজবাড়ি।

লেখা পাঠানোর ঠিকানা

অধুনা, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

ই-মেইল: [email protected] ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA. খামের ওপর ও ই-মেইলের subject-এ লিখুন ‘মনের বাক্স’