মনের বাক্স

পাগলামিগুলো ভালোবাসা
২০১০ সালের ১ জুলাই। তখন আমরা উচ্চমাধ্যমিকের নতুন ছাত্রছাত্রী। কলেজের প্রথম দিনেই তোমার সঙ্গে আমার দেখা। গোটা কলেজের হাজারখানেক নতুন মুখের মধ্যে তোমার মুখটা যেন শুধু চোখের লেন্সে ধরা পড়েছিল। প্রথম দেখাতেই ভালো লাগা। তারপর প্রতিদিন কলেজে গিয়ে তোমার আসার অপেক্ষা করতাম। কখন আসবে তুমি। তুমি ছিলে মানবিক বিভাগে আর আমি বিজ্ঞানে। নিজের ওপর কোথা থেকে যেন একধরনের ক্ষোভ এসে ভর করত। কেন বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে গেলাম। ইশ্! যদি মানবিকে ভর্তি হতাম, তোমাকে প্রতিটা ক্লাসেই মন ভরে দেখতে পারতাম। তোমার ছোট ছোট চুল আর গোলাকার মুখমণ্ডল আমাকে পাগল করে তুলত। মনে মনে সব সময় গুনগুন করতাম, কী ভালো লাগে প্রিয়া দেখে তোমাকে...।
শুধু তোমাকে একনজর দেখব বলে উচ্চমাধ্যমিকের একজন ছাত্র হয়েও বাধ্য ছেলের মতো প্রতিটা দিন কলেজে যেতাম। যেখানে আমার বন্ধুদের উপস্থিতি শতকরা ৫০ ভাগ, সেখানে আমার অনুপস্থিতির অঙ্কটা নগণ্য। রসায়ন ক্লাসে স্যারের বিক্রিয়া বোঝানোতে তুমি প্রভাবক বিষ হিসেবে কাজ করতে। প্রভাবক বিষ যেমন প্রভাবকের ক্ষমতা নষ্ট করে দিয়ে বিক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে বাধা দান করে, ঠিক তুমিও সে রকম আমার মনোযোগ নষ্ট করে দিয়ে বিক্রিয়া মাথায় ঢুকতে দিতে না।
এভাবে কেটে গেছে দুইটা বছর। এইচএসসির পর আর তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। শুনেছি তুমি এখন রংপুরে। এখন কি তোমার চুল বড় করেছ? মাঝে মাঝে কি মনে হয় জানো, এখন যদি তোমাকে কাছে পেতাম, তবে সব ভয়ভীতি দূরে ঠেলে মনের যত না–বলা কথা আছে সব একনাগাড়ে বলে দিতাম। সেদিনও বলতে চেয়েছি কিন্তু বলার সাহস হয়ে ওঠেনি। তুমি যদি এ লেখাটা পড়ো, তবে বলছি সেদিনের সেই পাগলামিগুলোর নাম যদি ভালোবাসা হয়, তবে তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।
স্বপন কুমার ঘোষ
বোদা, পঞ্চগড়
এক মজার কাহিনি
২০১১ সালের ঘটনা। আমি সবেমাত্র ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে উঠি। ছোট ক্লাস থেকে বড় ক্লাসে উঠলে মজা কেমন তা শুধু সেই ছাত্রই বোঝে। ঠিক তেমনি স্কুলের রেজাল্ট হলো, আমাদের ক্লাসে ১১৩ জন পাস করে। তার মধ্যে আমার রোল হয় ১১৩। তবু আমার মনে কোনো আক্ষেপ ছিল না। কারণ, পাস তো করছি। কিন্তু ক্লাসে ঢুকতেই ঘটল মজার ঘটনা। আমার সবচেয়ে কাছের ফ্রেন্ড। নাম মেহেদী হাসান। তাকে দেখলাম, সে কাঁদছে। আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে ছয়–সাত মিনিট চেয়ে রইলাম। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, কিরে দোস্ত কাঁদতেছিস কেন? সে জবাব দিল, তার রোল ১৩ হয়েছে, সে জন্য কাঁদছে। তখন আমার খুব হাসি পায় এবং খুব মজার সুরে বললাম, আমার রোল ১১৩ হয়েছে। আমি কাঁদছি না। আর তুই কাঁদছিস।
স্বপ্নিল
অ্যাডভান্সড রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, ময়মনসিংহ
কারণটা তো বলতে পারতে
ফেসবুকে প্রথমে রিকোয়েস্ট। কী ভেবেছিলে জানি না? কিন্তু আমি ভেবেছিলাম অনেক কিছু। এভাবে চলে যেতে পারলে, একবারও ভাবলে না। বলেছিলে, তুমি কোনো দিনও হাত ছাড়বে না। কেন বলেছিলে তা জানি না। হতে পারে সেটাই তোমার অনুভূতি কিন্তু আমি বিশ্বাস করেছিলাম তোমার অনুভূতিকেই। সেটাই কি আমার ভুল ছিল? হতে পারে সেটাই আমার ভুল। না হলে কেন তুমি এমন করবে। কারণটা তো বলতে পারতে। জানি ভালো আছ, কিন্তু অন্যকে দেওয়া কষ্টের বোঝা তোমাকেও বয়ে বেড়াতে হবে।
তিতাস
হবিগঞ্জ
তুই আমার আলাদিনের চেরাগ ভাই
সবেমাত্র পঞ্চম শ্রেণির গণ্ডি পার করেছি। বাস্তবতা, দারিদ্র্য কী, সেটা বুঝে ওঠার আগে সংসারে অভাব এত পরিমাণে বেড়ে গেল একসঙ্গে তোর আর আমার, লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তখন তুই তোর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা না ভেবে, তোর স্বপ্ন আশা–আকাঙ্ক্ষা জলাঞ্জলি দিয়ে আমার কচি হাতে কলম তুলে দিয়েছিলি। তখন থেকে তোর সুন্দর জীবনকে বাস্তবতার চরম প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে পরিবারের অন্ন জোগানের জন্য উৎসর্গ করেছিস। তোর জীর্ণ, শীর্ণ শরীর দিয়ে আমাকে সব সময় কষ্ট থেকে দূরে রেখেছিস। চরম দারিদ্র্যের সংসারে যেখানে তিন বেলা খাবার অনিশ্চিত ছিল, সেখানে সব সময় তুই আমার ছোট–বড় কম–বেশি সব চাওয়া–পাওয়া পূরণ করেছিস, যেমন করে কাল্পনিক গল্পের আলাদিনের চেরাগ। আসলে ভাই, তুই আমার সে রকম আলাদিনের চেরাগ।
মো. জামাল হোসেন
শেখহাটি, নড়াইল
ঘুমের মধ্যে
হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে দেখি, যে মানুষটি আমাকে সব সময় ভালোবাসত, সেই মানুষটির অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে বিলীন হয়ে গেছে। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নের ঘোরে এমনটি হয়েছিল। তখন দুচোখ দিয়ে পানি বেয়ে পড়ছিল। জানালার বাইরে বিছানা থেকে উঁকি মেরে বুঝতে পারলাম, পুব আকাশে সূর্যও উঁকি মেরেছে। বেশি দেরি হচ্ছে না। আমি চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে বিছানার বসে আবেগভরা কোনো একটি গান শুনছি আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি। কেন জানি তখন কান্না করতে খুব মন চাইছিল। আর ভাবছিলাম, আচ্ছা, সেই মানুষটিকে তো কখনো বলা হয়নি, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। অথবা এই নাও তোমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিস। অনেক কষ্ট হয়েছে আমার। পুরো অলিগলি খুঁজে এনেছি শুধু তোমার মুখে মলিন এই হাসি দেখব বলে। সেই মানুষটি আর কেউ না—আমার মা। দূরে থাকি বলে হয়তো তোমাদের অনেক মিস করি। কাছে থাকলে হয়তোবা তোমাদের অস্তিত্বের শঙ্কায় শঙ্কিত হতাম না।
হ্লামং চিং মারমা
ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউট
লেখা পাঠানোর ঠিকানা
অধুনা, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ই-মেইল: [email protected] ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA. খামের ওপর ও ই-মেইলের subject-এ লিখুন ‘মনের বাক্স’