মনে হয় একদিন পাগল হয়ে যাব

মেহতাব খানম
মেহতাব খানম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা
প্রেমের বিয়ে আমাদের। বিয়ের পরই জানলাম আমার স্বামী মাদকাসক্ত। ওই পথ থেকে ফেরানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ব্যর্থ হলাম। একসময় পুরো সংসার নিজের হাতেই নিতে হলো। আমাদের এক ছেলে আছে। ওর বয়স এখন ১৫ বছর। আমার ছেলের বয়স যখন তিন বছর, তখন জানতে পারি আমার স্বামী আবার বিয়ে করেছে। শুধু তা-ই নয়, ওই সংসারে এক বছরের মেয়েও আছে! ওই ঘটনার পর আমি আলাদা হয়ে গেলাম। এরপর সে অনেক চেষ্টা করেছে একসঙ্গে থাকার। কিন্তু আমি তা হতে দিইনি। এর কয়েক বছর পর আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে বলা হলো, সে সুস্থ হয়েছে। দ্বিতীয় সংসারও ছেড়ে দিয়েছে। আমরা আবার একসঙ্গে সংসার শুরু করি। কিন্তু কিছুদিন যেতে না-যেতেই বুঝতে পারি কোনো কিছুই বদলায়নি। মাদকাসক্তি, দ্বিতীয় সংসার—কিছুই না। বিবাহবিচ্ছেদ করেও কোনো লাভ হলো না। ও কোনো কিছু মানে না। ভাড়া বাসায় থাকি, বেশি কিছু করা সম্ভবও হয় না। ও আমাকে কিংবা দ্বিতীয় স্ত্রীর কাউকেই ছাড়বে না। এভাবেই চলছে আজ অবধি।
আমি মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ। নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না। অফিস, বাসা, ছেলের দেখাশোনা—কিছুই ঠিকমতো করতে পারছি না। অনেক সময় ভাবি আত্মহত্যা করব। কিন্তু ছেলের কথা ভেবে সেটা হয় না। মেজাজ খারাপ থাকে সব সময়। মনে হয় একদিন পাগল হয়ে যাব। ওর পরিবারও ওর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
তুমি বর্তমানে অনেক বেশি বিষণ্নতা ও হতাশায় ভুগছ। বিয়ের পরই অনেক বড় একটা আঘাত পেলে, যখন জানতে পারলে যে তোমার স্বামী মাদকাসক্ত। এরপর আরও একটি ধাক্কা খেলে, যখন জানতে পারলে তোমার স্বামীর আরেকজন স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। মনে অনেক শক্তি সঞ্চয় করে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে উপেক্ষা করে তুমি আলাদা হয়ে গিয়েছিলে। এরপর মিথ্যে আশ্বাস পেয়ে আবারও মাদকাসক্ত মানুষটির কাছে ফিরে গেলে। ওর পরিবারও ভালোভাবে না জেনে তোমাকে ভুল তথ্য দিয়েছে। যারা একবার মাদকে আসক্ত হয়, তাদের অনেকের জন্যই পুরোপুরি এ থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন হয়। অনেক আশায় বুক বেঁধে যখন তুমি ফিরে এলে তখন আরও একবার মন ভেঙে গেল, স্বামীর কোনো পরিবর্তন না দেখে। তোমার পরিবার তোমাকে মানসিকভাবে সাহায্য করছে কি না জানি না। এই মুহূর্তে তাদের সহমর্মিতা ও সাহস তোমার জন্য খুব প্রয়োজন। তুমি ভালো করে ভেবে দেখতে পারো যে যখন আলাদা হয়ে স্বাধীনভাবে চলছিলে তখন বেশি কষ্টে ছিলে নাকি এখন চোখের সামনে স্বামীর এই আচরণগুলো দেখে বেশি কষ্ট পাচ্ছ। বাস্তবতাগুলো মাথায় রেখে এখন যুক্তিপূর্ণ মনটি ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আগামী দিনের সময়গুলোতে কীভাবে একটু হলেও ভালো থাকা সম্ভব। সন্তানের যত্ন নিতে গেলে আগে তোমার নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হবে। যেখানেই থাকো না কেন, প্রতিদিন নিজের ভেতরের মনটিকে প্রশ্ন করো, জীবনে ইতিবাচক কী কী দিক রয়েছে। সৃষ্টিকর্তাকে জীবনের ছোট ছোট প্রাপ্তির জন্য সব সময় কৃতজ্ঞতা জানাবে, কেমন? এ ছাড়া প্রতিদিন বুক ভরে শ্বাস নিয়ে আস্তে আস্তে ছাড়ার ব্যায়ামও তোমাকে কিছুটা স্বস্তি দেবে। ছেলেকেও আরও আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করবে, যাতে তোমার ওপর চাপ কমে যায়। তোমার মধ্যে যে ইতিবাচক চিন্তা ও মূল্যবোধ রয়েছে, সেগুলো ওকে দেওয়ার চেষ্টা কোরো। তবে সারাক্ষণ খুব বেশি উপদেশ না দিয়ে ওর কথাগুলো মন দিয়ে শুনবে এবং ওর অনুভূতিগুলো উপলব্ধি করবে। ছেলের কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে তুমি একমত হতে না পারলেও সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা রাখো আর সেই সঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক ফলগুলো আলোচনা করো। তাতে করে ভবিষ্যতে বড় সিদ্ধান্ত নিতে ওর খুব সুবিধা হবে। আর নিজের কোনো ক্ষতি করার কথা একদম ভাববে না, কেমন?