মাতৃভাষায় শিক্ষা কত দূর

সরকার নীতিগতভাবে পার্বত্য এলাকায় প্রাথমিক পর্যায়ে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় শিক্ষা চালুর সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করেনি। পার্বত্য চট্টগ্রামে মাতৃভাষায় শিক্ষার কার্যক্রম বেসরকারি পর্যায়ে অনেক দূর অগ্রসর হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, সরকারি উদ্যোগ ছাড়া এই শিক্ষা কার্যক্রম সঠিকভাবে চালু রাখা সম্ভব নয়।
মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষা (এমএলই) নিয়ে খাগড়াছড়ি জেলায় কাজ করছে জাবারাং কল্যাণ সমিতি। এই প্রতিষ্ঠানের এমএলই প্রকল্পের কর্মকর্তা বিদ্যুৎ জ্যোতি চাকমা বলেন, ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতিতে বলা আছে—আদিবাসী শিশুরা যাতে নিজেদের ভাষায় শিখতে পারে সে লক্ষ্যে আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ ও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করতে হবে। শিক্ষানীতির আলোকে ২০১৩ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর দেশের ছয়টি আদিবাসী ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করে। এ ছয়টি ভাষা হলো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সাঁওতাল, সাদরি (ওঁরাও ও অন্যান্য) ও গারো বা মা‌িন্দ। সাঁওতাল ভাষার হরফ নিয়ে বিতর্ক দেখা দেওয়ায় সেটি বাদ দিয়ে আপাতত পাঁচটি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে মাতৃভাষাভিত্তিক বহুভাষিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হবে। কিন্তু ২০১৫ সালেও তা শুরু করা যায়নি।
জাবারাং কল্যাণ সমিতি পরিচালিত একটি এমএলই বিদ্যালয় রয়েছে খাগড়াছড়ি সদরের ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের বিরাশিমুড়া পাড়ায়। অঙ্কুর বিদ্যালয় নামের ওই বিদ্যালয়ের অন্তত দুই কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এমএলই অঙ্কুর বিদ্যালয়ে ২০টি শিশু পড়াশোনা করে। তারা বাংলার পাশাপাশি নিজস্ব মাতৃভাষা ককবরক ভাষায় (ত্রিপুরা ভাষা) লিখতে পারে। সম্প্রতি সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে দেখা যায়, শিশুরা স্বাচ্ছন্দে্য ও আনন্দঘন পরিবেশে পড়াশোনা করছে।
জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ২০০৬ সাল থেকে এমএলই শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। খাগড়াছড়ি জেলায় তিনটি উপজেলার ৪৯টি এমএলই বিদ্যালয়ে প্রায় ৯০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বই ছাপা হয়েছে। এমএলই বিদ্যালয়ে প্রথমে মাতৃভাষা, পরে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ করে গড়ে তোলা হয়। এই শিক্ষার মাধ্যমে মাতৃভাষায় শিশুর শিক্ষার পরিবেশ ও জানার আগ্রহী করে তোলা হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এমএলই পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কমিটির সদস্য মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা আরও বলেন, সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত এমএলই কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ লক্ষ্যে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে অনেক দূর এগিয়েছে। এখন শুধু ছাপা বাকি।