মাথা গরম হয় কেন?

আজকে কি বসের ওপর মেজাজ খুব খারাপ? নাকি পছন্দের মানুষটির সঙ্গে খিটিমিটি লেগেছে? এমন অবস্থা হলে অন্য কিছু ভাবার আগে একবার একটু দিনের তাপমাত্রা কত, সেই খোঁজ নিন। সম্প্রতি গবেষকেরা বলছেন, দিনের তাপমাত্রা বেশি হলে তা মেজাজ খিঁচড়ে দিতে যথেষ্ট।
ইউরোপিয়ান জার্নাল অব সোশ্যাল সাইকোলজিতে গত মে মাসে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া মানুষকে বদমেজাজি করে তোলে। বেশি গরমে থাকা মানুষ অন্যকে সাহায্য করতে চায় না এবং অসহিষ্ণু হয়ে যায়।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার লিহাই ইউনিভার্সিটির গবেষক লিবা ওয়াই বেলকিন ও ইলিনয়ের নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কেলগ স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের মারিয়াম কৌচাকি মোট তিনটি পরীক্ষা চালিয়েছেন। এসব পরীক্ষায় মানুষের আবেগ ও আচরণের ওপর তাপমাত্রা কী ধরনের প্রভাব ফেলে, তা বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি পরীক্ষাতেই রায় গেছে গরমের বিপক্ষে।
প্রথম পরীক্ষায় ২০১০ সালের একটি গবেষণাপত্রে থাকা উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। ওই বছর রাশিয়ায় ব্যাপক দাবদাহ দেখা দিয়েছিল এবং সেখানকার অনেক শপিং মলেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থায় ঘাটতি ছিল। সেই গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত গরমের কারণে শপিং মলের কর্মীরা খিটখিটে মেজাজের হয়ে যান। তাঁরা মক্কেলদের সহযোগিতা করতে কম আগ্রহী হন। হিসাব অনুযায়ী, আগ্রহ কমে গিয়েছিল প্রায় ৫৯ শতাংশ। তবে শপিং মলের অন্যান্য কাজে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি। শুধু পারস্পরিক মানবিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই অবনতি হয়েছিল।
দ্বিতীয় পরীক্ষাতে অংশ নিয়েছিল মোট ১৬০ জন। তাঁরা ইন্টারনেটে একটি কুইজে অংশ নেন। কুইজ শুরু হওয়ার আগে, অর্ধেক অংশগ্রহণকারীকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়। বলা হয়, তাঁরা যেন কল্পনা করেন যে উষ্ণ আবহাওয়ায় আছেন।
কুইজ শেষ হওয়ার পর দেখা যায়, যাঁদের উষ্ণ আবহাওয়ায় থাকার বিষয়টি কল্পনা করতে বলা হয়েছিল, তাঁরা উত্তর কম দিয়েছেন। এসব অংশগ্রহণকারীরা ৪৪ শতাংশ প্রশ্নের উত্তর দেন এবং কুইজের উত্তর দেওয়ার সময় ক্লান্ত ও অসুখী বোধ করার কথা জানান। অন্যদিকে ৭৭ শতাংশ প্রশ্নের উত্তর দেন সাধারণ পরিবেশের কথা ভেবে উত্তর দেওয়া ব্যক্তিরা।
গবেষক লিবা ওয়াই বেলকিন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩ জন শিক্ষার্থীর ওপর চূড়ান্ত পরীক্ষাটি চালান। শিক্ষার্থীদের দুটি ভাগ করে একই বিষয়ের ওপর আলাদা ক্লাস নেন তিনি। একটি কক্ষে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। আর অন্য কক্ষটি ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। ক্লাস শেষ হওয়ার পর প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১০০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়।
এ জরিপে দেখা গেছে, অপেক্ষাকৃত উষ্ণ কক্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা কম প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা গড়ে ৩৫টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। অন্যদিকে উষ্ণ কক্ষে থাকা শিক্ষার্থীরা মাত্র ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। বেলকিন বলেন, ‘তাপমাত্রার কম-বেশি তাঁদের আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছিল। আমাদের পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল, মানুষের আচরণ ও প্রতিক্রিয়ার ওপর তাপমাত্রার প্রভাব খুঁজে বের করা। দেখা গেছে, অস্বস্তিকর পরিবেশ মানুষের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।’
বেলকিন আরও বলেছেন, কর্মীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক তাপমাত্রা এবং পরিবেশে কাজ করার সুযোগ দিতে প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানই এসবে অর্থ খরচ করতে আগ্রহী নয়। তাই কর্তৃপক্ষের এখন থেকেই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত।
(মেন্টাল ফ্লস অবলম্বনে অর্ণব সান্যাল)