
সমস্যা
আমি মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। তাঁরা আমাকে কোনো কষ্টে রাখেননি, কিন্তু মা খুব শাসনে রেখেছেন। শাসনের ভয়ে কোনো দিনই নিজের ইচ্ছার কথা জানাতে পারিনি।
মা ছোটখাটো বিষয় নিয়ে খুব চেঁচামেচি করেন। বাইরে যেতে দেন না। বাইরে গেলে নাকি খারাপ হয়ে যাব। আমার মনে হয়, মা আমাকে বিশ্বাস করেন না। স্কুলে পড়ার সময় থেকে কোনো বান্ধবী ছিল না। একজনকে বিশ্বাস করেছিলাম, সেও বিশ্বাস ভেঙে দিয়েছে। নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখলাম। এরপর আরেকটি মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব হলো।
আমরা দুজন খুব ঘনিষ্ঠ ছিলাম। আমি ফেসবুক ব্যবহার করতাম, ও রাগ করত। তাই জেদ করে ও অ্যাকাউন্ট খুলল। কদিন হলো ও একটি ছেলের সঙ্গে অনেক কথা বলছে। ওকে ছেলেটা প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। আমি কষ্ট পাব ভেবে সে ছেলেটির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। সে অন্য কারও সঙ্গে কথা বললে মনে হয় ও প্রেম করে আমাকে ভুলে যাবে। আমি আর বন্ধু পাব না। কিন্তু ও নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে ছেলেটিকে। রাত তিনটা পর্যন্ত সেই ছেলের সঙ্গে কথা বলে।
ওর বাবা-মা কষ্ট করে টাকা দেন, কিন্তু ওরও পড়াশোনা হচ্ছে না ফেসবুকের জন্য।
নাম-ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
তোমার এই মুহূর্তে কতটা অসহায় লাগছে, তা বুঝতে পারছি। এটি খুব দুঃখজনক যে তোমাকে শৈশব আর কৈশোরের সুবর্ণ সময়গুলোতে একা করে রাখা হয়েছে। বড় হওয়ার সময় নানা রকম বন্ধুদের সঙ্গে মেশার সুযোগ পেলে সেটি বাকি জীবন নিজেকে ভালোভাবে বুঝতে সহায়তা করে।
দুজন মানুষের সম্পর্কের মধ্যে প্রত্যাশা থেকে হতাশা, রাগ, দুঃখ, দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। নেতিবাচক আবেগগুলো মোকাবিলা করার ক্ষমতা তত বেশি তৈরি হবে, যত বেশি আমরা সমবয়সীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব। ছোট বয়সে সমবয়সী বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আবেগীয়, সামাজিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটে। তুমি কেবল একটি মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পেরেছ। যখন ওর প্রতি বিশ্বাস ভঙ্গ হলো, তখন তুমি অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছ।
কারণ, ছেলেবেলা থেকে বন্ধু তৈরি করার এবং তাদের হারানোর ব্যথা সামলে নেওয়ার দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তোমার হয়নি। এখন আরেকজন বন্ধু পেয়ে তার ওপরে তোমার অতিরিক্ত বিশ্বাস ও আবেগীয় নির্ভরশীলতা এসে গেছে।
তুমি ওর ওপরে যতটুকু নির্ভরশীল হয়ে গেছ, বান্ধবীটি কিন্তু ততটা হয়নি। বান্ধবীটি তো খুব চেষ্টা করেছে তোমাকে কষ্ট না দিতে। ছেলেটির প্রস্তাবও সেই কারণে ফিরিয়ে দিয়েছিল। তবে তোমার কাছ থেকে যে ধরনের ভালোবাসা ও মনোযোগ সে পেয়েছে, তার সঙ্গে ছেলেবন্ধুটির কাছে পাওয়া মনোযোগের বেশ পার্থক্য আছে। সে কারণেই শেষ পর্যন্ত সে নিজের দেওয়া কথা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
তোমার অনেক কষ্ট হওয়ার পরও তুমি ওকে জোর করছ না। তাতে মনে হচ্ছে নিজের আবেগকে কিছুটা হলেও তুমি মোকাবিলা করতে পারছ।
আমার অনুরোধ, নিজেকে আরও বেশি ভালোবাসার চেষ্টা করো। অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে সহজভাবে মিশে আরও কিছু বন্ধু তৈরি করো। যেসব কাজ একা করে আনন্দ পাওয়া যায়, তেমন কিছু কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখো।
এ ছাড়া মেডিটেশন, শরীরচর্চা করলেও মনের নেতিবাচক আবেগগুলোর ওপরে অনেক নিয়ন্ত্রণ এসে যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.