মিলেমিশে ফলাহার

পরিবার সঙ্গে নেই তো কী হয়েছে, বন্ধুরা মিলে বাড়ি থেকে পাঠানো ফল তো একসঙ্গে খাওয়া যেতেই পারে। মডেল: তুষার, আবির ও বিজয়। ছবি: অধুন​া
পরিবার সঙ্গে নেই তো কী হয়েছে, বন্ধুরা মিলে বাড়ি থেকে পাঠানো ফল তো একসঙ্গে খাওয়া যেতেই পারে। মডেল: তুষার, আবির ও বিজয়। ছবি: অধুন​া

ছোটবেলায় গ্রীষ্মকালীন ছুটি মানেই ছিল দাদা কিংবা নানাবাড়িতে গিয়ে পেট ভরে আম-লিচু খাওয়া আর জামের রসে জামাকাপড় মাখামাখি করে একাকার অবস্থা। ‘আম-কাঁঠালের’ সেই ছুটিগুলোকে সার্থক করতে পরিবারগুলোও কোনো ত্রুটি রাখত না। কিন্তু বড়বেলায় এসে তো তেমন ছুটি মেলা ভার। বিশ্ববিদ্যালয় অথবা কর্মজীবনে পা দিয়ে অনেককে পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়। ছুটি মিললেও যাওয়া হয়ে ওঠে না অনেক সময়। নিজ পরিবারের সঙ্গে মৌসুমি ফল খাওয়ার তৃপ্তি সব সময় পাওয়া যায় না। কিন্তু তাতে কী! বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে গড়ে তোলা নতুন এক পরিবারের সঙ্গে মিলেমিশে মৌসুমি ফল খাওয়ার আনন্দও নিতান্ত কম নয়।
নীলিমা জাহান প্রায় সাত বছর ধরে লেখাপড়ার কারণে ঢাকায় থাকেন। বর্তমানে ঢাকায় বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী; সেখানে আবার গ্রীষ্মকালীন ছুটি বলে কিছু নেই। বাড়িতে যেতে না পারলেও প্রতিবছর এই সময়ে বাড়ির গাছের আম, জামরুল, পানিফল ঠিকই পৌঁছে যায় তাঁর কাছে। ‘আমরা পাঁচজন মেয়ে একটি বাসা ভাড়া করে থাকি। সবাই এখানে নিজেদের পরিবার থেকে অনেক দূরে থাকি, তাই যে কারও বাসা থেকেই কিছু পাঠালে আমরা সবাই তা মিলেমিশে মজা করে খাই; কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমরা পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্ট ভুলে থাকতে পারি। গ্রীষ্মে আম-লিচু প্রায় সবার বাড়ি থেকেই আসে এবং তা সব সময় সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাওয়া হয়, তখন বাসার মতো একটা অনুভূতি কাজ করে; খুব ভালো লাগে।’ বলেন নীলিমা জাহান।
রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন আশিকুর রহমান। তাঁর বাড়িও রাজশাহী। তাই তাঁর যেসব বন্ধু হোস্টেলে থাকতেন, তাঁদের খুব আগ্রহ নিয়ে নিজ এলাকার আম খাওয়াতেন। কথা হলো তাঁর সঙ্গে। পরিবার থেকে দূরে থাকার কারণে বন্ধুদের যেন মন খারাপ না হয়, সে জন্য প্রতিবছর তিনি এ কাজ করতেন। চাকরির কারণে এখন তাঁকেই নিজ শহর ছেড়ে রাজধানীতে বসবাস করতে হচ্ছে। কয়েকজন মিলে একটি বাসা ভাড়া করে থাকছেন। বাড়ি থেকে এখন তাঁর জন্যই ফল পাঠানো হয়। কিছুদিন আগে যে আম-লিচু পাঠানো হয়েছে, তা সবাই মিলে মজা করে খেয়েছেন বলে জানালেন। একসঙ্গে থাকার মজাই এখানে ছোট ছোট ঘটনাও উৎসবের রূপ নেয়।
কথা হলো ইরতিজা নাসিম নামের আরেকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। জানালেন তাঁর রুমমেট গত সপ্তাহে গ্রামের বাড়ি থেকে কাঁঠাল নিয়ে এসেছিলেন, সেটা মেসের সবাই মিলে খেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমার জন্য নয়, আমার সব বন্ধুকে নিয়ে যেন খেতে পারি, তাই প্রতিবছর আমার বগুড়ার বাসা থেকে বেশি করে ফল পাঠানো হয়।’ তাঁরা একেকজন একেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কেউ আবার কর্মজীবী। ব্যস্ততার কারণে সবার সঙ্গে তাই সেভাবে সময় কাটানোও হয়ে ওঠে না; কিন্তু সবাই মিলে গ্রীষ্মকালীন ফলাহারের অছিলায় সবার সঙ্গে সবার আড্ডা হয়, আনন্দ হয় বলে জানালেন ইরতিজা।
বেসরকারি একটি ফার্মে কর্মরত গাজী মোহসিনা রহমানের ফলাহার নিয়ে রয়েছে আরও মজার স্মৃতি। হোস্টেলের রুমমেটদের পরিবার থেকে গ্রীষ্মকালীন ফল পাঠালে তা তাঁরা সবাই মিলে খেতেন তো বটেই, হোস্টেলের এক বড় আপু তাঁদের কিনেও খাওয়াতেন
আর তা নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে যেত ঠিক যেমন ভাইবোনেরা একজন আরেকজনের সঙ্গে খুনসুটি করে খায়।
এখনো যাঁরা সময় করে উঠতে পারেননি, তাঁরা বাজারে মৌসুমি ফলগুলো থাকতে থাকতেই ঘরোয়া একটি ফলোৎসবের আয়োজন করে ফেলতে পারেন। ফলও খাওয়া হবে, আড্ডাও হবে জম্পেশ।