মুরাদের স্বপ্নটা এখন আরও বড়

মুরাদ আনসারী
ছবি: সংগৃহীত

স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবেন। উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেল কলেজে যখন সুযোগ পেলেন না, হতাশ হয়ে পড়লেন মুরাদ আনসারী। নিজেকে সামলে ভর্তি হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগে। তখন পর্যন্ত জানেন না, এখানে কী পড়ানো হয়। ক্লাস শুরু হওয়ার পর বুঝতে পারলেন, এই বিভাগে কাজের জায়গা অনেক। চিকিৎসক হয়তো হতে পারবেন না, কিন্তু এখান থেকেও মানুষের সেবা করার সুযোগ আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি ৯ লাখ মানুষের জন্য মনোরোগ চিকিৎসক আছেন মাত্র একজন। যাঁরা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ২ শতাংশ শিক্ষার্থী এই খাতে কাজ করেন। আবার তরুণদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও রয়েছে ভীষণ উদাসীনতা। রাজধানীর ভেতরে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা সহজলভ্য হলেও ঢাকার বাইরের মানুষের জন্য এই সেবা এখনো অপ্রতুল। এসব সমস্যা নিয়ে ভাবতে ভাবতে ২০১৯ সালে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে মুরাদ শুরু করেন ‘সাইকিউর অর্গানাইজেশন’ নামে একটি মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সংগঠন।

নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগভিত্তিক ক্লাব হিসেবেই এটি যাত্রা শুরু করে। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা সেবা দেওয়ার পর বেশ ভালো সাড়া পেতে শুরু করেন। এর মধ্যে হানা দেয় করোনা। মুরাদ আনসারীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয় এই মহামারি। আরও বেশি মানুষের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সাইকিউরের সেবাগুলো অনলাইনে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তাঁরা। প্রায় ১১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা প্রশিক্ষণ। প্রায় তিন হাজার জন নিয়েছেন কাউন্সেলিং সেবা। এখন অনলাইনের মাধ্যমে সারা দেশেই চলছে সাইকিউর অর্গানাইজেশনের কার্যক্রম। শিক্ষার্থীসহ যে কেউ বিনা মূল্যে কিংবা স্বল্প মূল্যে সাইকিউরের সেবা নিতে পারছেন। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা মুরাদ বলেন, ‘আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো কেউ সেবা নিতে গেলেই চারপাশের লোকজন তাকে পাগল বলে। সংকোচে না থেকে অনলাইনে সবাই খুব সহজেই আমাদের সেবা নিতে পারছেন।’

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে এই সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন জায়গা থেকে মুরাদ পেয়েছেন পদক ও সম্মাননা। তার একটি ইয়ং গ্লোবাল চেঞ্জ মেকারস অ্যাওয়ার্ড–২০২১। এর আগে ২০২০ সালে অর্জন করেন জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড। সম্প্রতি স্পেনে অনুষ্ঠিত ‘ওয়েলবিয়িং সামিট ফর সোশ্যাল চেঞ্জ’–এ অংশ নেন। সেখানে সারা বিশ্ব থেকে আসা মানসিক স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে তাঁর মতো মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা তরুণ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পান। কার্যক্রম আরও এগিয়ে নিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে তহবিলও পেয়েছে সাইকিউর অর্গানাইজেশন। এর মধ্যে রয়েছে সিমকিউবেটর ২০২১ (রিসার্চ গ্রান্ট), বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্রান্ট এবং ইয়ুথ কো-ল্যাব ২০২১।

সাইকিউর অর্গানাইজেশনের কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন মুরাদ। যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে কাজ চলছে। চালু হচ্ছে নিজস্ব অ্যাপও। এই অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীসহ যে কেউ বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে সাইকিউরের সেবা নিতে পারবে নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে।

মুরাদ বলছিলেন, ‘চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে সাইকিউর নিয়ে কাজ করা আমার জন্য বেশ উপভোগ্য। তাই অন্য কিছু নিয়ে ভাবছি না। এমনকি উচ্চশিক্ষা কোথায়, কোন বিষয়ে নেব, আপাতত সে রকম কোনো পরিকল্পনাও নেই। আগামী দুই বছরের মধ্যে সাইকিউরকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। আন্তর্জাতিক সেমিনার, ফেলোশিপে সুযোগ পেলে সেগুলো কাজে লাগাতে চাই।’