মেনোপজের পর রক্তপাত

যখন একজন নারীর কোনো অসুস্থতা অথবা ওষুধ ছাড়াই একনাগাড়ে ১২ মাস মাসিক বন্ধ থাকে, তখন তিনি মেনোপজে পৌঁছেছেন বলে ধরে নেওয়া হয়।

ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়ার পর পুনরায় রক্তপাত শুরু হওয়াকে বলা হয় পোস্ট-মেনোপজাল ব্লিডিং বা মেনোপজের পর রক্তপাত। যখন একজন নারীর কোনো অসুস্থতা অথবা ওষুধ ছাড়াই একনাগাড়ে ১২ মাস মাসিক বন্ধ থাকে, তখন তিনি মেনোপজে পৌঁছেছেন বলে ধরে নেওয়া হয়। এই ১২ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর আবার নতুন করে কারও রক্তপাত হলে তাকেই বলা হয় পোস্ট-মেনোপজাল ব্লিডিং।

কেন হয় পোস্ট-মেনোপজাল ব্লিডিং?

  • নারীর হরমোন ইস্ট্রোজেনের অভাবে যোনিপথ ও জরায়ুর ভেতরের আস্তরণ পাতলা হয়ে যায়, ফলে অল্পতেই আঘাতপ্রাপ্ত হয় ও রক্তক্ষরণ দেখা দেয়।

  • হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির অনিয়মিত সেবন ও ব্যবহার।

  • জরায়ু নিচে নেমে যাওয়ার কারণে জরায়ুর মুখে ঘা হতে পারে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে জরায়ুকে তার অবস্থান ধরে রাখার জন্য পেসারি ব্যবহার করা হয়, যা দীর্ঘদিন থাকার কারণে আলসার ও রক্তক্ষরণ হতে পারে।

  • নারীর প্রজননতন্ত্রের ক্যানসার যেমন সের্ভিক্যাল ক্যানসার, জরায়ুর ক্যানসার, ভ্যাজাইনাল ও ভালভার ক্যানসার, হরমোন উৎপাদন করে, এমন ওভারিয়ান ক্যানসার ইত্যাদি।

  • টিবি, ট্রাইকোমোনাস ভ্যাজাইনাইটিসের কারণে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

  • যকৃতের সমস্যা অথবা রক্ত জমাট বাঁধে না, এমন কোনো রোগ।

  • রোগী যদি রক্ত তরলীকরণের কোনো ওষুধ খান।

  • অনেক সময় পায়ুপথের বা মূত্রনালি অথবা মূত্রথলি থেকে নির্গত রক্ত ভুলে যোনিপথের রক্ত বলে ভুল হতে পারে।

কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ

প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যার অন্তরালে থাকতে পারে মরণব্যাধি ক্যানসার। উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

চিকিৎসা

চিকিৎসা নির্ভর করে কী কারণে এই রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তার ওপর। যেসব ক্ষেত্রে বারবার এই উপসর্গ দেখা দেয়, কিন্তু কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, তেমন ক্ষেত্রে জরায়ু অপসারণের প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় রোগী ভাবেন পুনরায় স্বাভাবিক মাসিক শুরু হয়েছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেন না। ফলে যখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, তখন হয়তো অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই প্রয়োজন সচেতনতা।

ডা. ফারহানা তারান্নুম খান, সহকারী অধ্যাপক, গাইনি অনকোলজি, জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল