মেয়ে আর পুত্রবধূর মধ্যে পার্থক্য কী?

বলিউডের দুই প্রজন্মের দুই তারকা অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর কারিনা কাপুর। শাশুড়ি শর্মিলা গত বছর ফিল্মি মিরচির এক অনুষ্ঠানে পুত্রবধূ কারিনার অনুষ্ঠানের অতিথি হয়ে অংশ নিয়েছিলেন। সম্প্রতি সেই ভিডিও ইউটিউবসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে সন্তান পালন এবং পারিবারিক নানা বিষয়ে মতামত দিয়েছেন শর্মিলা ঠাকুর। তারই কিছু অংশ থাকছে এখানে।

আলাপচারিতায় কারিনা কাপুর ও তাঁর শাশুড়ি শর্মিলা ঠাকুর।ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

কারিনা কাপুর: আপনার জন্য একসঙ্গে কর্মক্ষেত্র আর পরিবার সামলানো কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?

শর্মিলা ঠাকুর: আমাকে পরিবারের জন্য অনেক ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। তুমি ভাবতে পারো! খিলোনে, াতি মেরে সাথি, তেরে মেরে স্বাপ্নে–এর মতো ছবিতে অসাধারণ কিছু চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব আমি ফিরিয়ে দিয়েছি। এটা মূলত ২৪ ঘণ্টাকে ভাগ করে নেওয়ার বিষয়।

তখন আমাদের কাজ কিন্তু খুব একটা সহজ ছিল না। আমরা কখনো সকাল ৭টা থেকে বেলা ২টা, আবার দুপুর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দুই পালায় টানা কাজ করতাম। আলাদা ছবিরও কাজ থাকত। তাই এটা খুব স্বচ্ছন্দ ছিল না। আমি কাজ করতাম, তবে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর আর থাকতাম না। আর তুমি তো জানোই, আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি কিছুটা পুরুষকেন্দ্রিক। ওই সময় শশী কাপুর আর অমিতাভ বচ্চন ছাড়া আর কেউ সময়মতো শুটিং সেটে আসতেন না। সর্বোচ্চ তাঁদের বলা যেত, ‘আপনি কি বেলা ১১টা নাগাদ আসতে পারবেন?’ তারপর দেখতাম তাঁরা বেশ হেলেদুলে বেলা দুইটায় সেটে আসতেন।

কারিনা: আপনি সম্ভবত তখন কিছু বলতেও পারতেন না...

শর্মিলা: তখন আমরা বাকিরা কিন্তু সবাই মেকআপ, চুলের সাজ নিয়ে প্রস্তুত হয়ে বসে থাকতাম। তবে আমরা বেশ সৌভাগ্যবান ছিলাম। কারণ, সাহায্যকারী নিয়োগ দিতে পারতাম। তবে আমি যাঁর কাছ থেকে সাহায্য নিচ্ছি, তিনিও তাঁর পরিবার-সন্তানদের বাড়িতে রেখে কাজে আসতেন।

কারিনা: হ্যাঁ। কত সুন্দর একটা বিষয় এটা!

শর্মিলা: হ্যাঁ, এই সাহায্য দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপারে কিন্তু পুরো বিশ্ব ভাবছে যে কীভাবে এটা করা যেতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের ‘হাউস হাজব্যান্ড’ (গৃহস্থালি কাজ সামাল দেন এমন স্বামী) প্রথা নেই। যদি আমাদের হাউস হাজব্যান্ড থাকত, তাহলে কাজ অনেক সহজ হয়ে যেত। আমাদের সমাজ শুধু মেয়েদের ওপরই সন্তান পালনের দায়িত্ব দিয়েছে। আর ধরেই নেওয়া হয়, যদি কোনো নারী সন্তান বাড়িতে রেখে কাজে যান, তাহলে সে ভালো মেয়ে নন। আমরা সবাই কিন্তু আবার ভালো মেয়ে হতে চাই, তাই না?

কারিনা: আপনার কাছে মেয়ে ও পুত্রবধূর মধ্যে মূল পার্থক্য কী?

শর্মিলা: (হাসি) মেয়ে এমন একজন যে তোমার কাছেই বেড়ে উঠেছে। তুমি জানো তার স্বভাব সম্পর্কে। কোন জিনিস তাকে রাগিয়ে দেবে, তা তোমার জানা। এককথায় তার সঙ্গে কীভাবে চলতে হবে, সেটি তুমি জানো। অন্যদিকে পুত্রবধূ প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তোমার সঙ্গে পরিচিত হয়। তাই তুমি তার স্বভাব সম্পর্কে জানো না। তো এটা ঠিক হতে কিছুটা সময় লাগে। একটা নতুন মেয়ে বউ হিসেবে তোমার পরিবারে আসছে, তাকে অবশ্যই তোমার পরিবারে স্বাগত জানাতে হবে। তাকে মানিয়ে নেওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। সে যে রকম খাবার খেতে অভ্যস্ত, তাকে সেগুলো দিতে হবে। আমার বিয়ের সময়ের কথাই যদি বলি, আমি তো বাঙালি। তাই আমি ভাত খেতে অভ্যস্ত। কিন্তু আমার শ্বশুরবাড়ির সবাই রুটি-মাংস খান। আমার তো মাছ খেতে ভালো লাগে, টাইগারের (মনসুর আলী খান পতৌদি) মাছ পছন্দ নয়। আমি এই সমস্যাগুলোর মধ্যে পড়তাম। তখন তাঁদের অন্যরকম মনে হতো। কিছুদিন পর বুঝেছি তাঁরা ও রকম নয়। এটা ছেলেপক্ষের দায়িত্ব যে তারা নতুন বউকে তাদের পরিবারে স্বাগত জানাবে, তার জন্য স্বাচ্ছন্দ্যময় একটা পরিবেশ তৈরি করে দেবে। আর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে হস্তক্ষেপ না করা, যেহেতু নতুন একটা সম্পর্ক গড়ে উঠছে। আমার মতে, ‘আমাদের ছেলে তো এই খাবার খেতে পছন্দ করে’—এসব কথাবার্তা থেকে সমস্যার সৃষ্টি হয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তাদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া উচিত।

কারিনা: সবাই আপনার আর আমার সম্পর্কের সমীকরণ জানতে চায়। তাই আপনি আমার একটি ভালো দিক সম্পর্কে বলবেন এবং আরেকটি দিক সম্পর্কে বলবেন, যেখানে আমার উন্নতি করা উচিত।

শর্মিলা: তোমার ধারাবাহিকতা আমার ভালো লাগে। তুমি যেভাবে সব সময় যোগাযোগ রাখো, সেটি আমার পছন্দ। যেমন আমি জানি, আমি যদি তোমাকে কোনো এসএমএস পাঠাই তুমি যথাসম্ভব দ্রুত সেটির উত্তর দেবে।

কারিনা: ধন্যবাদ। এবার আমার উন্নতি করা উচিত, এমন দিক সম্পর্কে বলুন।

শর্মিলা: আমি দিকটা নিয়ে ভাবছি। তবে সত্যি আমি তেমন কিছু খুঁজে পাচ্ছি না। আমি শুধু বলব, তুমি সব সময় এমনই থাকো। আমি তোমাকে কাজের সময়ও দেখেছি। তুমি অনেকের সঙ্গে কাজ করো। কাজের মধ্যে অনেকেই খুব সহজে চিন্তায় পড়ে যায়, যা অন্যদেরও অস্বস্তিতে ফেলে দেয়। তবে তুমি কখনো এটা করো না। তাই আমি আশা রাখব, তুমি এটাই ধরে রাখবে।

কারিনা: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকের নজর তৈমুরের (কারিনা-সাইফের ছেলে) দিকে। তো আম্মা, তৈমুরের কথা বিবেচনা করে যদি জিজ্ঞেস করি, বাচ্চা লালন-পালনের ক্ষেত্রে আপনার মতে কোনটি করা উচিত নয়?

শর্মিলা: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অবশ্যই একটি চিন্তার বিষয়। তোমার ছেলে আশপাশের অনেক কিছুর প্রভাবে বেড়ে উঠবে। এই প্রভাবগুলো তুমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এরপর সে যখন বড় হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশ করবে, তখন অনেক তথ্য সামনে চলে আসবে।

কারিনা: হ্যাঁ।

শর্মিলা: তবে আমি মনে করি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেমন তোমাকে ওপরে তুলবে, তেমনই আবার হঠাৎ নিচে নামিয়ে দেবে। কয়েক দিন পরে আনুশকা আর বিরাট কোহলির সন্তান হবে। তখন তৈমুরকে নিয়ে আলোচনা কমে যাবে।

অনুদিত