
সমাজের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত অনেক পরিবারের মেয়েদের তেমন একটা লেখাপড়া করা সম্ভব হয় না। জীবন-জীবিকার তাগিদে লেখাপড়া ছেড়ে মেয়েদেরও অনেক সময় পরিশ্রমের কোনো কাজে নামতে হয়। বেতন ও মজুরিও হয় কম, যা দিয়ে সংসার চালানো খুব কষ্টকর হয়ে পড়ে। তবে যাঁরা কোনো প্রশিক্ষণ নেন, তাঁরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে মোটামুটি বেতনে বা মজুরির কাজ পান। সম্প্রতি এসব মেয়েকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেবে বলে জানিয়েছে জিরানীর শহীদ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমি কর্তৃপক্ষ। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত এই প্রশিক্ষণ একাডেমি শুধু মহিলাদের পাঁচটি ট্রেড কোর্সে মোট ১০০ জন মহিলাকে বিনা খরচে (থাকা-খাওয়াসহ) তিন মাস মেয়াদি প্রশিক্ষণ দেবে। একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, এখানে তিন মাস পরপর বছরে চারটি ব্যাচে মহিলাদের এসব ট্রেড কোর্সে ভর্তি করানো হয়। তাই যাঁরা হাতে-কলমে কাজ শিখে স্বাবলম্বী হতে চান, তাঁরা এ সুযোগটি নিতে পারেন। এসব ট্রেড কোর্সে ভর্তি হতে হলে আবেদনপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র [email protected] এই ই-মেইলে ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠাতে হবে। আর ভর্তি পরীক্ষা হবে আগামী ১০ জানুয়ারি সকাল ১০টায়।
এখানে যেসব ট্রেড কোর্সে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এর মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন, ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল সুইং মেশিন অপারেটর, বিউটিফিকেশন এবং মোবাইল ফোন সার্ভিসিং ও ইন্টারনেট বিষয়ে। এই ট্রেড কোর্সগুলোতে প্রশিক্ষণ নিতে চাইলে প্রার্থীকে এসএসসি পাস হতে হবে। বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। শুধু কম্পিউটার অফিস অ্যাপ্লিকেশন ট্রেডের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম এইচএসসি পাস হতে হবে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলযোগ্য।
এ প্রশিক্ষণ নিতে হলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি একাডেমির ঠিকানায় ভর্তির দিন সকাল আটটার মধ্যে সরাসরি একাডেমিতে জমা দিতে হবে। আবেদনপত্রে প্রার্থীদের ট্রেড উল্লেখপূর্বক নিজের নাম, বাবার নাম, মায়ের নাম, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, জন্মতারিখ, অভিভাবকের মোবাইল ফোন নম্বর ইত্যাদি উল্লেখ করে নির্ধারিত ই-মেইল ঠিকানায় পাঠাতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জন্মনিবন্ধনের সনদ, আবেদনকারীর তিন কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি এবং অভিভাবকের (যিনি হোস্টেলে অবস্থানকালে দেখাশোনা করবেন) পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি সত্যায়িত করে জমা দিতে হবে।
শহীদ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমির আয়ন-ব্যয়ন কর্মকর্তা ইউরিদা সাঈদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় প্রার্থীদের শুধু মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। মৌখিক পরীক্ষায় মূলত প্রার্থীদের পারিবারিক অবস্থা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের আগ্রহ এসব বিষয় দেখা হবে। ইউরিদা সাঈদ আরও বলেন, ‘আমাদের সমাজে দুস্থ ও তালাকপ্রাপ্ত এমন অনেক মহিলা আছেন, যাঁরা নানাভাবে সুবিধাবঞ্চিত। এসব মহিলাকে এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ ও স্বাবলম্বী করে তোলাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
ভর্তি পরীক্ষায় যাঁরা চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হবেন, তাঁদের ১০ দিনের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশনের জন্য ২৫০ টাকা ফি বাবদ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে হবে। প্রশিক্ষণ শেষে এই টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানান ইউরিদা সাঈদ। নির্বাচিত প্রার্থীদের বিনা মূল্যে থাকা-খাওয়ার সুবিধা একাডেমি থেকে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে মাসিক ৩০০ টাকা করে ভাতা হিসেবে দেওয়া হবে। এখানে প্রতিটি ট্রেডের প্রার্থীদের হাতে-কলমে কাজ শেখানো হবে। এই প্রশিক্ষণগুলো দেবেন একাডেমির নিজস্ব প্রশিক্ষক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা। গ্রেডিং পদ্ধতিতে লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থীদের সনদ দেওয়া হবে। ইউরিদা সাঈদ জানান, এই সনদটি প্রার্থীর ইউনিয়ন পর্যায়ের যেকোনো বিউটি পারলার, গার্মেন্টস, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে চাকরি পেতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া নিজেও ব্যবসা করে আয় করতে পারবেন।
গত বছর ২৯তম ব্যাচে এই প্রশিক্ষণ একাডেমি থেকে বিউটিফিকেশন ট্রেড কোর্সে প্রশিক্ষণ নেন সাবরিনা ইসলাম সাথী। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি নিজেই এখন কুমিল্লার দাউদকান্দিতে একটি বিউটি পারলার খুলেছেন। সাথী বলেন, এই প্রশিক্ষণ একাডেমির পরিবেশ অনেক ভালো। এই প্রশিক্ষণগুলোর যেকোনো একটি নিলে কাউকে বসে থাকতে হবে না। নিজের গড়া বিউটি পারলারে নিজেও কয়েকজন দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিত মহিলাকে বিউটিফিকেশনের ওপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বলে জানান সাথী।
যোগাযোগ: শহীদ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা প্রশিক্ষণ একাডেমি, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর, জিরানী, গাজীপুর। মোবাইল: ০১৭১১৮৬৯১১৪, ০১৭৯৯৩৩৬৯১৩, ০১৯২৩০৩৫০০৬।